ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

পাচার মুদ্রা ফেরাতে সক্রিয় হোন

দুর্নীতিবাজদের সম্পদ জব্দ করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৪০:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪৮ বার পড়া হয়েছে

পতিত হাসিনার সময় মুদ্রা পাচারের উৎসব চলেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে বছরে গড়ে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থ বাধাহীনভাবে কারা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটি অনেকটা জানা ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, মুদ্রা পাচার যাতে বন্ধ হয় ন্যূনতম সে পদক্ষেপও নেয়নি দুর্নীতিতে উৎসাহ দেয়া সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর এখন সুযোগ এসেছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে সরকার যদি দেরি করে তাহলে বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। জনপ্রত্যাশা, ত্বরিত এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হোক যাতে বেহাত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে ফিরিয়ে আনা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ পাচারকারীদের অর্থ শনাক্তে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স প্রথম সভায় মিলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাচারকারীদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা এবং এসব সম্পদ যাতে কেউ না কিনে সে ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আবার প্রধান মুদ্রা পাচারকারী। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে যেমন পাচার করেছেন, আবার লুটপাট করে সম্পদ দেশেও জমিয়েছেন। দুর্নীতিবাজরা সবাই হাসিনার সাঙ্গোপাঙ্গ ও মাফিয়া চক্রের সহযোগিতায় অবৈধভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ চক্রের সদস্যরা ক্ষমতাবৃত্তের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সদস্যের বড় একটি অংশ এ কাজ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরা একই কাজ করেছেন। দুই মাস চলে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শীর্ষ পাচারকারীদের অর্থ শনাক্তে একটি পথরেখা তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবে এই দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা যে কয়েক হাজার তা সহজে অনুমেয়। এরা প্রায় সবাই অনেকটাই চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করলে এই সময়ে নিজেদের বাঁচাতে তারা চেষ্টা করবে। অন্তত এসব দুর্নীতিবাজের দেশীয় সম্পদ জব্দে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব ছিল।


ব্যাংক লুট ও সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাতের প্রমাণ যেহেতু দৃশ্যমান সেহেতু তাদের সম্পদ জব্দ করা দুরূহ নয়। এখন পর্যন্ত তাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এমন খবর নেই। যদিও সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দুর্নীতিবাজদের সম্পদ কিনলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা দেখেছি, পতিত হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান তার সম্পদ বিক্রি করেছেন এমন খবর এসেছে। সরকারের নমনীয়তা কিংবা দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ হাতবদল হতে পারে। সেদিকে সরকারের যথেষ্ট মনোযোগ থাকা দরকার।


হাসিনা পালানোর আগের কয়েক দিনেও বিপুল ঋণ নিয়েছে দুর্নীতিবাজরা। এমনকি কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেদার নোট ছাপিয়েছে। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে। এটিও জানা যাচ্ছে হাসিনার সাঙ্গোপাঙ্গদের কাছে এত পরিমাণ অবৈধ অর্থ আছে যা দেশের কোষাগারেও নেই। এ অবস্থায় অবৈধ সম্পদ আত্মসাৎকারীদের অর্থ বিদেশ থেকে ফেরানো এবং দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করে কোষাগারে আনার মাধ্যমে নড়বড়ে অর্থনীতিতে কিছুটা প্রাণ সঞ্চার করা যেতে পারে। এ জন্য অন্তর্র্বতী সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে গতিশীল সমন্বয় দেখতে চায় মানুষ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পাচার মুদ্রা ফেরাতে সক্রিয় হোন

দুর্নীতিবাজদের সম্পদ জব্দ করুন

আপলোড টাইম : ০১:৪০:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

পতিত হাসিনার সময় মুদ্রা পাচারের উৎসব চলেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে বছরে গড়ে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থ বাধাহীনভাবে কারা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন, সেটি অনেকটা জানা ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, মুদ্রা পাচার যাতে বন্ধ হয় ন্যূনতম সে পদক্ষেপও নেয়নি দুর্নীতিতে উৎসাহ দেয়া সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর এখন সুযোগ এসেছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিতে সরকার যদি দেরি করে তাহলে বেহাত হয়ে যাওয়া সম্পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। জনপ্রত্যাশা, ত্বরিত এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হোক যাতে বেহাত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে ফিরিয়ে আনা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে শীর্ষ পাচারকারীদের অর্থ শনাক্তে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স প্রথম সভায় মিলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাচারকারীদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা এবং এসব সম্পদ যাতে কেউ না কিনে সে ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আবার প্রধান মুদ্রা পাচারকারী। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে যেমন পাচার করেছেন, আবার লুটপাট করে সম্পদ দেশেও জমিয়েছেন। দুর্নীতিবাজরা সবাই হাসিনার সাঙ্গোপাঙ্গ ও মাফিয়া চক্রের সহযোগিতায় অবৈধভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ চক্রের সদস্যরা ক্ষমতাবৃত্তের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়েও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সদস্যের বড় একটি অংশ এ কাজ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরা একই কাজ করেছেন। দুই মাস চলে যাওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শীর্ষ পাচারকারীদের অর্থ শনাক্তে একটি পথরেখা তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবে এই দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা যে কয়েক হাজার তা সহজে অনুমেয়। এরা প্রায় সবাই অনেকটাই চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি করলে এই সময়ে নিজেদের বাঁচাতে তারা চেষ্টা করবে। অন্তত এসব দুর্নীতিবাজের দেশীয় সম্পদ জব্দে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব ছিল।


ব্যাংক লুট ও সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে আত্মসাতের প্রমাণ যেহেতু দৃশ্যমান সেহেতু তাদের সম্পদ জব্দ করা দুরূহ নয়। এখন পর্যন্ত তাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এমন খবর নেই। যদিও সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দুর্নীতিবাজদের সম্পদ কিনলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা দেখেছি, পতিত হাসিনার প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান তার সম্পদ বিক্রি করেছেন এমন খবর এসেছে। সরকারের নমনীয়তা কিংবা দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ হাতবদল হতে পারে। সেদিকে সরকারের যথেষ্ট মনোযোগ থাকা দরকার।


হাসিনা পালানোর আগের কয়েক দিনেও বিপুল ঋণ নিয়েছে দুর্নীতিবাজরা। এমনকি কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেদার নোট ছাপিয়েছে। বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসবে। এটিও জানা যাচ্ছে হাসিনার সাঙ্গোপাঙ্গদের কাছে এত পরিমাণ অবৈধ অর্থ আছে যা দেশের কোষাগারেও নেই। এ অবস্থায় অবৈধ সম্পদ আত্মসাৎকারীদের অর্থ বিদেশ থেকে ফেরানো এবং দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করে কোষাগারে আনার মাধ্যমে নড়বড়ে অর্থনীতিতে কিছুটা প্রাণ সঞ্চার করা যেতে পারে। এ জন্য অন্তর্র্বতী সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে গতিশীল সমন্বয় দেখতে চায় মানুষ।