ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ শুরু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৩:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
  • / ৫৯ বার পড়া হয়েছে

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v80), default quality

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের পর র‌্যাবের ওপর থেকে দেশটির দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। গতকাল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রসঙ্গত, ঢাকায় ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তিন দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা ছাড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের ওই সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের প্রথমদিনে রাতে (১৪ মে) প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা আলোচনায় উঠলে তিনি (ডোনাল্ড লু) বলেছিলেন, আমিতো স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে। আর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাজ নয়। র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এরপরই সরকার উদ্যোগী হয়ে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কাজ শুরু করে এবং সরকারের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় কাজটি করছে। ওই সূত্র মতে, যেসব কারণে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল; সেসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে জানানো হবে। অগ্রগতি হওয়ায় র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করা হবে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

প্রসঙ্গত, সেদিন রাতে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দাবি করেছিলেন- লু জানিয়েছেন, র‌্যাবের ওপরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন করবেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছিলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এসব দাবি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ হলো আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতার প্রচার। মূলত এই দুই ধরণের কথার পর র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কোন কথা ঠিক? এমন বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওই সূত্রটি জানায়, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ডোনাল্ড লুর যে বৈঠক হয়েছিল; তাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিপু, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর ফারুক সোবাহান ও ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে র‌্যাব নিয়ে একটি কথাই আলোচনা হয় এবং সেটি হচ্ছে, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল অন্যভাবে। আর তাতেই বিতর্কটি শুরু হয়।
এদিকে গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ডোনাল্ড লু) বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার জন্যই ঢাকা সফরে এসেছিলেন। আমার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কীভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমনকি আমরা যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু রিফর্ম (পুনর্গঠন) করি তাহলে আমাদের জিএসপি সুবিধাও ফিরিয়ে দেয়ার অভিপ্রায় তারা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তাদের একটি বিশেষ তহবিল আছে। সেখান থেকে তারা সাহায্য করার কথাও বলেছেন। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নই প্রাধান্য পেয়েছে। ডোনাল্ড লু ঢাকায় থাকার সময় মার্কিন দূতাবাস এ সফর নিয়ে দুটি বিবৃতি দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালি করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি বাণিজ্যসহ পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ, কৃষি খাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এবং জলবায়ুবিষয়ক কাজে নারী নেতৃত্ব ও যুব সমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রীর সঙ্গে এই সাক্ষাতে আমরা আনন্দিত। কারণ, আমরা আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী ও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছি।

বিগত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপড়েন তৈরি হলেও এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, বাংলাদেশে আমি এসেছি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্নিমাণ করতে। তার কথা, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতাবিহীন নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করার কথা জানান। ঢাকায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন ডোনাল্ড লু। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, আমার মনে হয়েছে, তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা আলাপ আলোচনা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যদিয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে সরকারে সঙ্গে কাজ করতে চায়। নাগরিকদের জন্য স্পেস বাড়াতে চায়। চাপ প্রয়োগের পথে তারা এখন আর নেই।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ডোনাল্ড লু এমনি এমনি এত দূর থেকে এখানে আসেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তার এই সফর ভূরাজনীতির অংশ। সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন ভূ-রাজনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গুরুত্ব পাচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের কারা মিত্র হবে সেটা এখন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতেও তা বলা হয়েছে। আর এই লক্ষ্যেই তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ একই সময়ে সফর করেছেন। তিনি বলেন, স্কোয়াড নামে একটা নতুন সামরিক জোট হয়েছে। এটা চীনের বিরুদ্ধে। আর যদি ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স জোরদার হয়, তাহলে ভূ-রাজনীতিতে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক সুবিধায় থাকবে। কোয়াড আছে। তবে সেটা সামরিক জোট নয়। আর মিয়ানমারকেন্দ্রিক অবস্থান যদি যুক্তরাষ্ট্র শক্ত করতে পারে, তাহলে তারা অনেক বেশি বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ শুরু

আপলোড টাইম : ১১:৩৩:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের পর র‌্যাবের ওপর থেকে দেশটির দেয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। গতকাল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রসঙ্গত, ঢাকায় ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তিন দিনের সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা ছাড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের ওই সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরের প্রথমদিনে রাতে (১৪ মে) প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠকে র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা আলোচনায় উঠলে তিনি (ডোনাল্ড লু) বলেছিলেন, আমিতো স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে। আর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাজ নয়। র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এরপরই সরকার উদ্যোগী হয়ে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কাজ শুরু করে এবং সরকারের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয় কাজটি করছে। ওই সূত্র মতে, যেসব কারণে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল; সেসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে জানানো হবে। অগ্রগতি হওয়ায় র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করা হবে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

প্রসঙ্গত, সেদিন রাতে ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দাবি করেছিলেন- লু জানিয়েছেন, র‌্যাবের ওপরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগকে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) সমর্থন করবেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছিলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এসব দাবি মিথ্যা। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না। নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ হলো আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতার প্রচার। মূলত এই দুই ধরণের কথার পর র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, কোন কথা ঠিক? এমন বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওই সূত্রটি জানায়, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে ডোনাল্ড লুর যে বৈঠক হয়েছিল; তাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিপু, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর ফারুক সোবাহান ও ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে র‌্যাব নিয়ে একটি কথাই আলোচনা হয় এবং সেটি হচ্ছে, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছিল অন্যভাবে। আর তাতেই বিতর্কটি শুরু হয়।
এদিকে গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ডোনাল্ড লু) বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার জন্যই ঢাকা সফরে এসেছিলেন। আমার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কীভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেটি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমনকি আমরা যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু রিফর্ম (পুনর্গঠন) করি তাহলে আমাদের জিএসপি সুবিধাও ফিরিয়ে দেয়ার অভিপ্রায় তারা ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তাদের একটি বিশেষ তহবিল আছে। সেখান থেকে তারা সাহায্য করার কথাও বলেছেন। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নই প্রাধান্য পেয়েছে। ডোনাল্ড লু ঢাকায় থাকার সময় মার্কিন দূতাবাস এ সফর নিয়ে দুটি বিবৃতি দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালি করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি বাণিজ্যসহ পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ, কৃষি খাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এবং জলবায়ুবিষয়ক কাজে নারী নেতৃত্ব ও যুব সমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রীর সঙ্গে এই সাক্ষাতে আমরা আনন্দিত। কারণ, আমরা আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী ও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছি।

বিগত ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপড়েন তৈরি হলেও এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, বাংলাদেশে আমি এসেছি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্নিমাণ করতে। তার কথা, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতাবিহীন নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করার কথা জানান। ঢাকায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন ডোনাল্ড লু। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, আমার মনে হয়েছে, তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা আলাপ আলোচনা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যদিয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে সরকারে সঙ্গে কাজ করতে চায়। নাগরিকদের জন্য স্পেস বাড়াতে চায়। চাপ প্রয়োগের পথে তারা এখন আর নেই।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ডোনাল্ড লু এমনি এমনি এত দূর থেকে এখানে আসেননি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তার এই সফর ভূরাজনীতির অংশ। সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন ভূ-রাজনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গুরুত্ব পাচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের কারা মিত্র হবে সেটা এখন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতেও তা বলা হয়েছে। আর এই লক্ষ্যেই তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ একই সময়ে সফর করেছেন। তিনি বলেন, স্কোয়াড নামে একটা নতুন সামরিক জোট হয়েছে। এটা চীনের বিরুদ্ধে। আর যদি ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স জোরদার হয়, তাহলে ভূ-রাজনীতিতে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক সুবিধায় থাকবে। কোয়াড আছে। তবে সেটা সামরিক জোট নয়। আর মিয়ানমারকেন্দ্রিক অবস্থান যদি যুক্তরাষ্ট্র শক্ত করতে পারে, তাহলে তারা অনেক বেশি বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে।