ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

নবীন-প্রবীণের নতুন অভিযাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৮:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের নতুন এক অধ্যায় রচিত হলো। ‘তরুণদের দেখানো পথে’ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এই যাত্রায় উপদেষ্টা হিসেবে তার সঙ্গে থাকছেন আরও ১৬ জন। এরা হলেন- সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শারমিন মুরশিদ, বিধান রঞ্জন রায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, আ.ফ.ম খালিদ হাসান, ফারুক-ই-আজম, ফরিদা আখতার, সুপ্রদিপ চাকমা, নূর জাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য, বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সুশীল সমাজের ৪০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ জামান ও অন্যান্য বাহিনীর প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, ব্যবসায়ীসহ দেশের বিভিন্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাধীনতা যুদ্ধের অমর শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের স্মরণ করা হয়। এরপর এই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উপদেষ্টাদের মধ্যে বিধান রঞ্জন, সুপ্রদিপ চাকমা ও ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ গ্রহণ করেননি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন। এদিন বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্য সমন্বয়করা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও স্বাগত জানিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তার প্রথম বক্তব্যে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে তার প্রথম কাজ। কারও ওপর কোনো হামলা যাতে না হয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’ তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (সমন্বয়করা) দেশকে রক্ষা করেছে। দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে।

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমার আবু সাঈদের (রংপুরে গুলিতে নিহত বেগম রোকোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) কথা মনে পড়ছে। অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক। যে আবু সাঈদের কথা দেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে।’ এসময় অধ্যাপক ইউনূস কেঁদে ফেলেন। পুরানোদের বাদ দাও সৃজশীলতা কাজে লাগাও শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসী আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো- দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পাল্টে ফেলতে পার। পুরানোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার।’ দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।’

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যমুনা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এবং কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হবে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিক্ষুব্ধ জনগণ গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং লুটপাট করেছে। ফলে এ দুই জায়গায় আপাতত অফিস করা বা বসবাস করার মতো অবস্থায় নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

নবীন-প্রবীণের নতুন অভিযাত্রা

আপলোড টাইম : ০৮:২৮:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪

প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের নতুন এক অধ্যায় রচিত হলো। ‘তরুণদের দেখানো পথে’ বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এই যাত্রায় উপদেষ্টা হিসেবে তার সঙ্গে থাকছেন আরও ১৬ জন। এরা হলেন- সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, হাসান আরিফ, তৌহিদ হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শারমিন মুরশিদ, বিধান রঞ্জন রায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, আ.ফ.ম খালিদ হাসান, ফারুক-ই-আজম, ফরিদা আখতার, সুপ্রদিপ চাকমা, নূর জাহান বেগম, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার পর বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য, বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সুশীল সমাজের ৪০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ জামান ও অন্যান্য বাহিনীর প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, ব্যবসায়ীসহ দেশের বিভিন্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাধীনতা যুদ্ধের অমর শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের স্মরণ করা হয়। এরপর এই আন্দোলনে শহীদ ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উপদেষ্টাদের মধ্যে বিধান রঞ্জন, সুপ্রদিপ চাকমা ও ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ গ্রহণ করেননি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে বৃহস্পতিবার দেশে ফেরেন। এদিন বেলা ২টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ অন্য সমন্বয়করা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও স্বাগত জানিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তার প্রথম বক্তব্যে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে তার প্রথম কাজ। কারও ওপর কোনো হামলা যাতে না হয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’ তিনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (সমন্বয়করা) দেশকে রক্ষা করেছে। দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে।

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমার আবু সাঈদের (রংপুরে গুলিতে নিহত বেগম রোকোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) কথা মনে পড়ছে। অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক। যে আবু সাঈদের কথা দেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে।’ এসময় অধ্যাপক ইউনূস কেঁদে ফেলেন। পুরানোদের বাদ দাও সৃজশীলতা কাজে লাগাও শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসী আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো- দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পাল্টে ফেলতে পার। পুরানোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার।’ দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।’

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যমুনা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এবং কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হবে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বিক্ষুব্ধ জনগণ গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং লুটপাট করেছে। ফলে এ দুই জায়গায় আপাতত অফিস করা বা বসবাস করার মতো অবস্থায় নেই।