ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নদী খননে ধীরগতি, চলছে বালু বিক্রির মহোৎসব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০২:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন ও আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী পুন:খননের কাজ চলছে। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী খননে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা ৪ লক্ষ টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও খননের নামে খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদী খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার নাসির উদ্দিন মোল্লা তিনি নিজে কোনো কাজ না করে ঝিনাইদহ জেলার মোসাব্বির এন্টারপ্রাইজকে সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজ দিয়েছেন। সাব ঠিকাদারের নিকট থেকে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা লিটন, যুবলীগ নেতা বিল্লাল, বিপুলসহ এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তি খননের মাটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নাম করে এলাকার কিছু  শ্রমিক নিয়োগ করে বালু উত্তোলন করে গাড়ি প্রতি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের মরা ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন প্রকল্পের আওতায় জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের কিছু অংশ এবং আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ প্রবহমান ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব নদী খননের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া গত বছর ১৮ডিসেম্বর শেষ হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ  টাকা। বাকা ইউনিয়নের মুক্তারপুর  থেকে ৬ কিলোমিটার ভৈরব নদী খননের কাজ পায় নাসির উদ্দিন মোল্লা নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৮ ফিট গভীর করে নদী খনন করা হবে এবং খননকাজের সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোন মাটি বা বালু বিক্রয় করতে পারবে না। গত একমাস ধরে নদী খননের কাজ চলছে অল্প কিছু অংশ খননের কাজ হলেও। কুলতলা গ্রামে নদীর কিছু অংশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়ভাবে বানানো অন্তত ৬টি খনন যন্ত্রের সাহায্যে এবং ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। উত্তোলন করা বালু পাইপের সাহায্যে নদীর তীর থেকে কিছু দূরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখানে থেকে বালু ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই । উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ করেও এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

কুলতলা  গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন ও আকুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাষের জমির উপর দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বালু উত্তলনের ২টি পাইপ রয়েছে। গ্রামের কিছু নেতারা মিলে তারা  নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে। এতে নদীর মাঝ খানে ৫০ থেকে ৬০ ফিট বেশি গভীর হচ্ছে এবং নদীর ধারে ভাঙন ধরেছে। যার কারনে আমাদের ফসলী জমি নষ্ঠ হচ্ছে। মাঝে ইউএনও সাহেব পাইপ কেটে দিয়েছিল। তারপর আবার তারা বালি তুলছে।

কুলতলা গ্রাম থেকে নদী খননের বালি ক্রয় করা ট্রাক্টর চালক পুরন্দ পুর গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে আ. খালেক বলেন, আমি দরুদ মেম্বারের নিকট থেকে গাড়ি প্রতি ১হাজার টাকা দরে বালু ক্রয় করেছি। গত কয়েক  দিন ধরে অনেকেই এখান থেকে বালু নিচ্ছে আমি সোনার পর এখানে এসে ৯ গাড়ি বালু কিনে আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে বিক্রয় করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করেন সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম মাখন বলেন, তাঁরা এক্সভেটর দিয়ে নদী খনন করছেন। বালু বা মাটি বিক্রয়কারীদের  সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় নেতাকমিরা নদী থেকে বালু উত্তলন করছে।

এ দিকে আওয়ামী লীগ নেতা মিজা লিটন ,যুবলীগ নেতা বিল্লালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মুটোফোনে চেষ্ঠা করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যুবলীগ নেতা বিপুলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নদী খনন করা বালু বা মাটি বিক্রি করে কুলতলা গ্রামের মসজিদের উন্নয়ন কাজে দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে বালু বিক্রি করে আমরা কেউ কোনো ভাগ নিচ্ছি না। আমাদের নামে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক না।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদী  খননের  বালু বা মাটি কোন ভাবেই বিক্রি করার সুযোগ নেই। ৬ কিলোমিটার অংশের খনন করে উত্তোলিত বালু বা মাটি নদীর পাড় বাধার কাজে লাগাতে হবে। আমরা বেশ কিছু অভিযোগের ভিক্তিত্বে কুলতলা গ্রামে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু তোলার পাইপ নষ্ঠ করে দেওয়া হয়। এবং বালু যাতে আর না তোলে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। কোনো অবস্থাতেই কেউ অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু তুলে তা বিক্রি করতে পারবেন না। তবে এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নদী খননের নামে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার বেশ কিছু ফসলী জমি। স্থানীয়দের দাবি নদী খননের নামে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে চরম বিপাকে পড়বে সাধারন মানুষ

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নদী খননে ধীরগতি, চলছে বালু বিক্রির মহোৎসব

আপলোড টাইম : ০৪:০২:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন ও আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদী পুন:খননের কাজ চলছে। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী খননে খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা ৪ লক্ষ টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ থাকার পরও খননের নামে খননযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদী খননের কাজ পাওয়া ঠিকাদার নাসির উদ্দিন মোল্লা তিনি নিজে কোনো কাজ না করে ঝিনাইদহ জেলার মোসাব্বির এন্টারপ্রাইজকে সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজ দিয়েছেন। সাব ঠিকাদারের নিকট থেকে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা লিটন, যুবলীগ নেতা বিল্লাল, বিপুলসহ এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তি খননের মাটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নাম করে এলাকার কিছু  শ্রমিক নিয়োগ করে বালু উত্তোলন করে গাড়ি প্রতি ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের মরা ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন প্রকল্পের আওতায় জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের কিছু অংশ এবং আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ প্রবহমান ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব নদী খননের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া গত বছর ১৮ডিসেম্বর শেষ হয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৪ লাখ  টাকা। বাকা ইউনিয়নের মুক্তারপুর  থেকে ৬ কিলোমিটার ভৈরব নদী খননের কাজ পায় নাসির উদ্দিন মোল্লা নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৮ ফিট গভীর করে নদী খনন করা হবে এবং খননকাজের সময় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোন মাটি বা বালু বিক্রয় করতে পারবে না। গত একমাস ধরে নদী খননের কাজ চলছে অল্প কিছু অংশ খননের কাজ হলেও। কুলতলা গ্রামে নদীর কিছু অংশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়ভাবে বানানো অন্তত ৬টি খনন যন্ত্রের সাহায্যে এবং ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। উত্তোলন করা বালু পাইপের সাহায্যে নদীর তীর থেকে কিছু দূরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখানে থেকে বালু ট্রাক ও ট্রাক্টরে করে দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলা বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই । উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার মৌখিক এবং লিখিত অভিযোগ করেও এখনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

কুলতলা  গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন ও আকুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তাদের চাষের জমির উপর দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বালু উত্তলনের ২টি পাইপ রয়েছে। গ্রামের কিছু নেতারা মিলে তারা  নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে। এতে নদীর মাঝ খানে ৫০ থেকে ৬০ ফিট বেশি গভীর হচ্ছে এবং নদীর ধারে ভাঙন ধরেছে। যার কারনে আমাদের ফসলী জমি নষ্ঠ হচ্ছে। মাঝে ইউএনও সাহেব পাইপ কেটে দিয়েছিল। তারপর আবার তারা বালি তুলছে।

কুলতলা গ্রাম থেকে নদী খননের বালি ক্রয় করা ট্রাক্টর চালক পুরন্দ পুর গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে আ. খালেক বলেন, আমি দরুদ মেম্বারের নিকট থেকে গাড়ি প্রতি ১হাজার টাকা দরে বালু ক্রয় করেছি। গত কয়েক  দিন ধরে অনেকেই এখান থেকে বালু নিচ্ছে আমি সোনার পর এখানে এসে ৯ গাড়ি বালু কিনে আমার এলাকার কিছু মানুষের কাছে বিক্রয় করছি।

অভিযোগ অস্বীকার করেন সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম মাখন বলেন, তাঁরা এক্সভেটর দিয়ে নদী খনন করছেন। বালু বা মাটি বিক্রয়কারীদের  সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। স্থানীয় নেতাকমিরা নদী থেকে বালু উত্তলন করছে।

এ দিকে আওয়ামী লীগ নেতা মিজা লিটন ,যুবলীগ নেতা বিল্লালের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মুটোফোনে চেষ্ঠা করা হলে ফোনটি রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যুবলীগ নেতা বিপুলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, নদী খনন করা বালু বা মাটি বিক্রি করে কুলতলা গ্রামের মসজিদের উন্নয়ন কাজে দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে বালু বিক্রি করে আমরা কেউ কোনো ভাগ নিচ্ছি না। আমাদের নামে যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক না।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভৈরব নদী  খননের  বালু বা মাটি কোন ভাবেই বিক্রি করার সুযোগ নেই। ৬ কিলোমিটার অংশের খনন করে উত্তোলিত বালু বা মাটি নদীর পাড় বাধার কাজে লাগাতে হবে। আমরা বেশ কিছু অভিযোগের ভিক্তিত্বে কুলতলা গ্রামে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু তোলার পাইপ নষ্ঠ করে দেওয়া হয়। এবং বালু যাতে আর না তোলে সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়। কোনো অবস্থাতেই কেউ অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু তুলে তা বিক্রি করতে পারবেন না। তবে এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নদী খননের নামে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার বেশ কিছু ফসলী জমি। স্থানীয়দের দাবি নদী খননের নামে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে চরম বিপাকে পড়বে সাধারন মানুষ