ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

দেবরের কিল-ঘুষিতে ভাবির মৃত্যু!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে দেবর সাহেব আলীর কিল-ঘুষিতে শাহারুন নেছা (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। নিহত শাহারুন নেছা জীবননগর উপজেলা কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি গ্রামের শাহাপাড়ার ভ্যানচালক মোশারফ হোসেনের স্ত্রী। মোশাররফ হোসেন ও সাহেব আলী দুই ভাই দেহাটি গ্রামের শাহাপাড়ার মুনতাজ শাহ’র ছেলে। এদিকে, গতকাল সকালেই পুলিশ অভিযুক্ত সাহেব আলীকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সাহের আলী ও মোশাররফ হোসেন দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন সময় এই চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে চলাচলের ওই রাস্তা নিয়ে শাহের আলী ও তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী শাহারুনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সাহেব আলী রাগান্বিত হয়ে শাহারুন নেছাকে কিল-ঘুষি মারে। এসময় মাটিতে পড়ে যান শাহারুন নেছা। পরে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছাকে ধরে বাড়ির ভেতরে নেয়। তবে রাত আটটার দিকে শাহারুন নেছা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারে সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াসাদ জামান পরীক্ষ-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার খাশিয়ার রহমান মিঠু জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ভিটে বাড়ির জমি নিয়ে ও রাস্তা নিয়ে মোশারফ হোসেন ও তাঁর ছোট ভাই সাহেব আলীর সাথে বিরোধ চলছিল। মূলত এ কারণেই তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। তবে গত শুক্রবার দুপুরে শাহারুন তাঁর স্বামীর বাড়িতে যায় জমি দখল নেওয়ার জন্য। এসময় শাহারুন ও সাহেবের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে শাহারুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাহেব আলীকে পুলিশ আটক করেছে।

শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (এসআই) জমির হোসেন বলেন, ‘সকালে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গত শুক্রবার দুপুরে শাহারুন নেছা ও তাঁর দেবর সাহেব আলীর মধ্যে বাড়ির রাস্তা নিয়ে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরই একপর্যায়ে সাহেব তাঁর ভাবী শাহারুন নেছাকে কিল-ঘুষি মারলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ ঘটনার পরে রাত আটটার দিকে শাহারুন নেছা গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে মারধরের বিষয়টি লুকিয়ে পড়ে যেয়ে আহত হয়েছেন বলে জানায়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাহারুন নেছাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় তারা লাশ নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরে আজ (গতকাল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিহত শাহারুন নেছার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।’ তিনি আরও জানান, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সকালেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটকও করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াসাদ জামান বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৯টার পরে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছা নামের এক নারীকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায় বাড়ির উঠানে পড়ে যেয়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছেন। তবে জরুরি বিভাগে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত শাহারুন নেছার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

এদিকে, গতকাল বিকেলে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নিহত শাহারুন নেছার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুজ্জামানকে সভাপতি করে মেডিকেল বোর্ডে সদস্য ছিলেন সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ডা. মিলোনুরজ্জামান জোয়ার্দ্দার ও মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দেবরের কিল-ঘুষিতে ভাবির মৃত্যু!

আপলোড টাইম : ০৫:০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১

জীবননগরে দেবর সাহেব আলীর কিল-ঘুষিতে শাহারুন নেছা (৩৫) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার বিকেলে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। নিহত শাহারুন নেছা জীবননগর উপজেলা কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি গ্রামের শাহাপাড়ার ভ্যানচালক মোশারফ হোসেনের স্ত্রী। মোশাররফ হোসেন ও সাহেব আলী দুই ভাই দেহাটি গ্রামের শাহাপাড়ার মুনতাজ শাহ’র ছেলে। এদিকে, গতকাল সকালেই পুলিশ অভিযুক্ত সাহেব আলীকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সাহের আলী ও মোশাররফ হোসেন দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন সময় এই চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে গত শুক্রবার দুপুরে চলাচলের ওই রাস্তা নিয়ে শাহের আলী ও তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী শাহারুনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সাহেব আলী রাগান্বিত হয়ে শাহারুন নেছাকে কিল-ঘুষি মারে। এসময় মাটিতে পড়ে যান শাহারুন নেছা। পরে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছাকে ধরে বাড়ির ভেতরে নেয়। তবে রাত আটটার দিকে শাহারুন নেছা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারে সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াসাদ জামান পরীক্ষ-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার খাশিয়ার রহমান মিঠু জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ভিটে বাড়ির জমি নিয়ে ও রাস্তা নিয়ে মোশারফ হোসেন ও তাঁর ছোট ভাই সাহেব আলীর সাথে বিরোধ চলছিল। মূলত এ কারণেই তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। তবে গত শুক্রবার দুপুরে শাহারুন তাঁর স্বামীর বাড়িতে যায় জমি দখল নেওয়ার জন্য। এসময় শাহারুন ও সাহেবের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে শাহারুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাহেব আলীকে পুলিশ আটক করেছে।

শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (এসআই) জমির হোসেন বলেন, ‘সকালে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি গত শুক্রবার দুপুরে শাহারুন নেছা ও তাঁর দেবর সাহেব আলীর মধ্যে বাড়ির রাস্তা নিয়ে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরই একপর্যায়ে সাহেব তাঁর ভাবী শাহারুন নেছাকে কিল-ঘুষি মারলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ ঘটনার পরে রাত আটটার দিকে শাহারুন নেছা গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে মারধরের বিষয়টি লুকিয়ে পড়ে যেয়ে আহত হয়েছেন বলে জানায়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাহারুন নেছাকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় তারা লাশ নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরে আজ (গতকাল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিহত শাহারুন নেছার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।’ তিনি আরও জানান, ‘এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সকালেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটকও করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াসাদ জামান বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৯টার পরে পরিবারের সদস্যরা শাহারুন নেছা নামের এক নারীকে জরুরি বিভাগে নেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায় বাড়ির উঠানে পড়ে যেয়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছেন। তবে জরুরি বিভাগে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহত শাহারুন নেছার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

এদিকে, গতকাল বিকেলে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে নিহত শাহারুন নেছার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুজ্জামানকে সভাপতি করে মেডিকেল বোর্ডে সদস্য ছিলেন সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক কনসালটেন্ট ডা. মিলোনুরজ্জামান জোয়ার্দ্দার ও মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।