ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগর কৃষ্ণপুরে কৃষি জমি রক্ষা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ কোনো ফসলি জমিতে স্থাপনা নয়। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশকে উপেক্ষা করে যারা কৃষকের তিন ফসলি জমিতে জোর করে স্থাপনা করতে চান, তারা এসব বন্ধ করুন। জোর করে কারও জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। নিজেদের কৃষি জমি রক্ষায় যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। প্রত্যাহার করতে হবে মিথ্যা মামলা। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সহস্রাধিক কৃষকেরা ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপির বাসভবনে গিয়ে তাদের আন্দোলনের প্রতি তাঁর ও জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশা করলে তিনি আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা সারাজিবন সাধারণ মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করছি। কেউ না থাকলেও আমি আপনাদের পাশে আছি। এই অন্যায় করতে দেয়া যাবে না। কেউ জমি দিতে না চাইলে তার জমি জোর করে নেওয়া যাবে না। তিনি পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা মাদকে ভাসছে। এমন কোন গ্রাম নেই যে গ্রামে মাদকের থাবা লাগেনি। অথচ, পুলিশকে তো মাদক ধরতে দেখি না। সেদিকে আপনাদের খেয়াল নেই। যত খেয়াল ওই কৃষ্ণপুরের দিকে। যেখানে সাধারণ কৃষকেরা তাদের রুটি-রুজি ও অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, এসপি সাহেব, সাধারণ মানুষকে হয়রানী না করে মাদক ধরেন। আপনার ছত্র ছায়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় এমন কোনো গ্রাম নেই, যে গ্রামে মদ এবং মাদক পাওয়া যায়না। চুয়াডাঙ্গার মানুষ পাগল নয়। টগর সাহেবকে নিয়ে বেশিদিন চলতে পারবেন না। আপনার আমলনামা আমার কাছে আছে। খুলে দিলে বিপদ আছে। কার কাছ থেকে কি করেন, না করেন আমার জানা আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করেন না। আপনার পুলিশকে নিবৃত্ত করেন। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলেছি, আইজি সাহেবকে বলেছি। ডিআইজি সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনার এসপি সাহেবের বদৌলতে চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এবং সাধারণ মানুষ নিগৃহীত হচ্ছে। এই এসপি সাহেব পয়সা ছাড়া কাজ করেনা।

এসময় তিনি আরও বলেন, শুনেছি এই এসপি চুয়াডাঙ্গা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। কোন অদৃশ্য শক্তিতে উনি এখানে থাকেন। কার ক্ষমতাবলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজি সাহেব না ডিআইজি সাহেব? এটা চুয়াডাঙ্গাবাসীর জানা দরকার আছে। আমি তো বলছি, চুয়াডাঙ্গার এমন একটি গ্রাম নেই, যে গ্রামে মাদকের থাবা লাগেনি। পুলিশকে মাদক ধরতে দেখিনে। মাদক অধিদপ্তর, বিজিবি ও র‌্যাব ধরে। তাহলে পুলিশ কি করে? ওদিকে আপনি মাল পাচ্ছেন, আপনি ধরতে মানা করে দিয়েছেন। আপনারা এই জিনিসগুলো তুলে ধরেন, আমি কারো চোখ রাঙানিতে ভয় করিনে। পাকিস্তান আমলেও করিনি। আপনাদের সাথে আমি আছি। আপনারা জমি দেবেন না। কে জমি কেড়ে নেয়, আমি দেখবো। পরিষ্কার বলছি, ওই মদ, সোনা, আপনার পুলিশকে বলেন, এগুলো দেখতে। গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর অথ্যাচার করবেন না। দরকার হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে চুয়াডাঙ্গায়। এতো ইন্টারেস্ট কেন? কিসের ইন্টারেস্ট আপনাদের? আমার জমি আমি দেবো না। আপনাদের এতো ইন্টারেস্ট কেন? পুলিশ অত্যাচার করছে গ্রামে গিয়ে। তাদের জমি তারা দেবে না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজি সাহেব ও ডিআইজি সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এই দুর্নীতিবাজ এসপির অপসারণ চাই আমরা।

এ সময় তিনি জীবননগরের রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার ছেলেকে মানা করো। সে যেন গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করে। নইলে পরিনাম ভালো হবে না।

উল্লেখ্য, কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকদের জমি বাঁচাও আন্দোলনের নেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনসহ গ্রেফতারকৃত কৃষকদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সহস্রাধিক কৃষক গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শহীদ হাসান চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় আন্দোলনকারীরা  বলেন, জীবননগরের কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষ কৃষিনির্ভর। এই গ্রামের তিন ফসলি জমিকে অনাবাদী দেখিয়ে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের আইন-কানুনকে উপেক্ষা করছে। সাইক্লিষ্ট এনার্জি পিটিআই লিঃ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ১৮০ একর জমির উপর সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি জোর করে অধিগ্রহণের পায়তারা করে আসছে। এর আগেও গ্রামবাসীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। গত ৭ জুলাই একমাত্র রুটি-রুজির অবলম্বন তিন ফসলি জমি বাঁচাতে বিষের বোতল হাতে ও কাফনের কাপড় পরে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ ও জমি রক্ষা না হলে তারা আত্মহত্যা করবে বলে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে গ্রামবাসীরা। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের নামে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের দোকান ভাঙচুরের মামলা দায়ের ও  গ্রেফতার করা হলে গ্রামবাসীরা গতকাল এই কর্মসূচি পালন করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগর কৃষ্ণপুরে কৃষি জমি রক্ষা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

আপলোড টাইম : ১১:০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ কোনো ফসলি জমিতে স্থাপনা নয়। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশকে উপেক্ষা করে যারা কৃষকের তিন ফসলি জমিতে জোর করে স্থাপনা করতে চান, তারা এসব বন্ধ করুন। জোর করে কারও জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। নিজেদের কৃষি জমি রক্ষায় যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। প্রত্যাহার করতে হবে মিথ্যা মামলা। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার জীবননগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সহস্রাধিক কৃষকেরা ছেলুন জোয়ার্দ্দার এমপির বাসভবনে গিয়ে তাদের আন্দোলনের প্রতি তাঁর ও জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রত্যাশা করলে তিনি আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা সারাজিবন সাধারণ মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করছি। কেউ না থাকলেও আমি আপনাদের পাশে আছি। এই অন্যায় করতে দেয়া যাবে না। কেউ জমি দিতে না চাইলে তার জমি জোর করে নেওয়া যাবে না। তিনি পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্যে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা মাদকে ভাসছে। এমন কোন গ্রাম নেই যে গ্রামে মাদকের থাবা লাগেনি। অথচ, পুলিশকে তো মাদক ধরতে দেখি না। সেদিকে আপনাদের খেয়াল নেই। যত খেয়াল ওই কৃষ্ণপুরের দিকে। যেখানে সাধারণ কৃষকেরা তাদের রুটি-রুজি ও অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন করছে। তিনি আরও বলেন, এসপি সাহেব, সাধারণ মানুষকে হয়রানী না করে মাদক ধরেন। আপনার ছত্র ছায়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় এমন কোনো গ্রাম নেই, যে গ্রামে মদ এবং মাদক পাওয়া যায়না। চুয়াডাঙ্গার মানুষ পাগল নয়। টগর সাহেবকে নিয়ে বেশিদিন চলতে পারবেন না। আপনার আমলনামা আমার কাছে আছে। খুলে দিলে বিপদ আছে। কার কাছ থেকে কি করেন, না করেন আমার জানা আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করেন না। আপনার পুলিশকে নিবৃত্ত করেন। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলেছি, আইজি সাহেবকে বলেছি। ডিআইজি সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনার এসপি সাহেবের বদৌলতে চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। এবং সাধারণ মানুষ নিগৃহীত হচ্ছে। এই এসপি সাহেব পয়সা ছাড়া কাজ করেনা।

এসময় তিনি আরও বলেন, শুনেছি এই এসপি চুয়াডাঙ্গা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। কোন অদৃশ্য শক্তিতে উনি এখানে থাকেন। কার ক্ষমতাবলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজি সাহেব না ডিআইজি সাহেব? এটা চুয়াডাঙ্গাবাসীর জানা দরকার আছে। আমি তো বলছি, চুয়াডাঙ্গার এমন একটি গ্রাম নেই, যে গ্রামে মাদকের থাবা লাগেনি। পুলিশকে মাদক ধরতে দেখিনে। মাদক অধিদপ্তর, বিজিবি ও র‌্যাব ধরে। তাহলে পুলিশ কি করে? ওদিকে আপনি মাল পাচ্ছেন, আপনি ধরতে মানা করে দিয়েছেন। আপনারা এই জিনিসগুলো তুলে ধরেন, আমি কারো চোখ রাঙানিতে ভয় করিনে। পাকিস্তান আমলেও করিনি। আপনাদের সাথে আমি আছি। আপনারা জমি দেবেন না। কে জমি কেড়ে নেয়, আমি দেখবো। পরিষ্কার বলছি, ওই মদ, সোনা, আপনার পুলিশকে বলেন, এগুলো দেখতে। গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর অথ্যাচার করবেন না। দরকার হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে চুয়াডাঙ্গায়। এতো ইন্টারেস্ট কেন? কিসের ইন্টারেস্ট আপনাদের? আমার জমি আমি দেবো না। আপনাদের এতো ইন্টারেস্ট কেন? পুলিশ অত্যাচার করছে গ্রামে গিয়ে। তাদের জমি তারা দেবে না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজি সাহেব ও ডিআইজি সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এই দুর্নীতিবাজ এসপির অপসারণ চাই আমরা।

এ সময় তিনি জীবননগরের রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার ছেলেকে মানা করো। সে যেন গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করে। নইলে পরিনাম ভালো হবে না।

উল্লেখ্য, কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকদের জমি বাঁচাও আন্দোলনের নেতা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনসহ গ্রেফতারকৃত কৃষকদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সহস্রাধিক কৃষক গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শহীদ হাসান চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় আন্দোলনকারীরা  বলেন, জীবননগরের কৃষ্ণপুর গ্রামের মানুষ কৃষিনির্ভর। এই গ্রামের তিন ফসলি জমিকে অনাবাদী দেখিয়ে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের আইন-কানুনকে উপেক্ষা করছে। সাইক্লিষ্ট এনার্জি পিটিআই লিঃ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ১৮০ একর জমির উপর সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি জোর করে অধিগ্রহণের পায়তারা করে আসছে। এর আগেও গ্রামবাসীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। গত ৭ জুলাই একমাত্র রুটি-রুজির অবলম্বন তিন ফসলি জমি বাঁচাতে বিষের বোতল হাতে ও কাফনের কাপড় পরে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ ও জমি রক্ষা না হলে তারা আত্মহত্যা করবে বলে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে গ্রামবাসীরা। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের নামে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের দোকান ভাঙচুরের মামলা দায়ের ও  গ্রেফতার করা হলে গ্রামবাসীরা গতকাল এই কর্মসূচি পালন করে।