ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগরে পাখির খামারে শান্তর জীবন বদল

মিঠুন মাহমুদ:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

শত কষ্ট করে এসএসসি পাশ করে পড়াশোনা থেমে যায় শান্তর। কৃষক পরিবারের সন্তান, তাই সংসারে সাহায্য করতে বাবার সাথে খেতে নেমে পড়েন রিপন হোসেন শান্ত। পরে নিজ গ্রাম বাঁকাতে এএনজেএম ব্রিকসে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। বাজরিকা পাখি পালনের শখ ছিল তাঁর। সেই শখই ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠছে।

বাজরিকা পাখি পালনে শুরুটা অল্পতে হলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন শান্ত। পাখি পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন তিনি। রিপন হোসেন শান্ত জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের বাঁকা কবরস্থান পাড়ার মো. মজিবার রহমানের ছেলে। প্রায় তিন বছর ধরে গ্রামে তাঁর নিজস্ব জায়গায় ছোট্ট একটি খামার করে পাখি পালন করছেন। বর্তমানে সেখানে বাজরিকা পাখি, লাউর সিরাজী, জ্যাকো বিন, রেন, ময়ূরী নামের কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার পাখি আছে। বাড়ির মধ্যেই তিনি পাখির জন্য ওই খামার তৈরি করেছেন। যা দেখে মনে হয় পাখির রাজ্য। শান্ত এবং তাঁর পরিবারের লোকজন খামারের সবকিছু দেখাশোনা করেন। খামার থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পাখি বিক্রয় করে আয় করে থাকেন।

শান্ত জানান, প্রায় তিন বছর আগে শখের বশে বাজরিকা পাখি পালন শুরু করেন তিনি এবং এতে ব্যাপক সফলতা পান। বর্তমানে এই বাজরিকা  পাখি নিয়ে চলছে তাঁর বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রা। ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় আরও প্রসার ঘটাতে চান। এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একটি বাঁচ্চা ফোটানোর যন্ত্রে (ইনকিউবিটর) বাঁচ্চা উৎপাদনের চিন্তা-ভাবনা করব।’

শান্ত আরও জানান, ‘বাজরিকা পাখির ডিম থেকে আমার এখানেই বাঁচ্চা ফোটানো হয়। বাঁচ্চা ফোটানোর পর এক মাস বয়স হলেই এসব বাজরিকা পাখি বিক্রয় করা হয়। এছাড়া আমার এখানে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর আছে, যা দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো প্রতি জোড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। দিন দিন এই পাখির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।’

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শান্ত বাজরিকা পাখির খামার দিয়ে এলাকায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর খামারে উৎপাদিত বাজরিকা পাখি এবং বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর খামার দেখে এলাকার বেশ কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।

জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারিখ হোসেন বলেন, ‘জীবননগর উপজেলার বেশ কিছু তরুণ উদ্যোক্তা শখ করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও কবুতরের খামার তৈরি করেছেন। যা বর্তমানে এটি বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। শান্ত আমাদের সহযোগিতা ছাড়াই বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। যদি আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন, তাহলে খামারের পাখিদের ইনজেকশন দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ  দেওয়া হবে।’

তিনি জানান, ‘হাঁস-মুরগির মতো পাখি পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। বাজরিকা পাখির রোগ-ব্যাধি কম। এ জন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বাজরিকা পাখি ও কবুতর পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে যদি কোনো উদ্যোক্তা আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

 

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে পাখির খামারে শান্তর জীবন বদল

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১

শত কষ্ট করে এসএসসি পাশ করে পড়াশোনা থেমে যায় শান্তর। কৃষক পরিবারের সন্তান, তাই সংসারে সাহায্য করতে বাবার সাথে খেতে নেমে পড়েন রিপন হোসেন শান্ত। পরে নিজ গ্রাম বাঁকাতে এএনজেএম ব্রিকসে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। বাজরিকা পাখি পালনের শখ ছিল তাঁর। সেই শখই ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠছে।

বাজরিকা পাখি পালনে শুরুটা অল্পতে হলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন শান্ত। পাখি পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন তিনি। রিপন হোসেন শান্ত জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের বাঁকা কবরস্থান পাড়ার মো. মজিবার রহমানের ছেলে। প্রায় তিন বছর ধরে গ্রামে তাঁর নিজস্ব জায়গায় ছোট্ট একটি খামার করে পাখি পালন করছেন। বর্তমানে সেখানে বাজরিকা পাখি, লাউর সিরাজী, জ্যাকো বিন, রেন, ময়ূরী নামের কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার পাখি আছে। বাড়ির মধ্যেই তিনি পাখির জন্য ওই খামার তৈরি করেছেন। যা দেখে মনে হয় পাখির রাজ্য। শান্ত এবং তাঁর পরিবারের লোকজন খামারের সবকিছু দেখাশোনা করেন। খামার থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পাখি বিক্রয় করে আয় করে থাকেন।

শান্ত জানান, প্রায় তিন বছর আগে শখের বশে বাজরিকা পাখি পালন শুরু করেন তিনি এবং এতে ব্যাপক সফলতা পান। বর্তমানে এই বাজরিকা  পাখি নিয়ে চলছে তাঁর বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রা। ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় আরও প্রসার ঘটাতে চান। এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘ভবিষ্যতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একটি বাঁচ্চা ফোটানোর যন্ত্রে (ইনকিউবিটর) বাঁচ্চা উৎপাদনের চিন্তা-ভাবনা করব।’

শান্ত আরও জানান, ‘বাজরিকা পাখির ডিম থেকে আমার এখানেই বাঁচ্চা ফোটানো হয়। বাঁচ্চা ফোটানোর পর এক মাস বয়স হলেই এসব বাজরিকা পাখি বিক্রয় করা হয়। এছাড়া আমার এখানে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর আছে, যা দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো প্রতি জোড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। দিন দিন এই পাখির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।’

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শান্ত বাজরিকা পাখির খামার দিয়ে এলাকায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর খামারে উৎপাদিত বাজরিকা পাখি এবং বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর খামার দেখে এলাকার বেশ কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।

জীবননগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তারিখ হোসেন বলেন, ‘জীবননগর উপজেলার বেশ কিছু তরুণ উদ্যোক্তা শখ করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও কবুতরের খামার তৈরি করেছেন। যা বর্তমানে এটি বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। শান্ত আমাদের সহযোগিতা ছাড়াই বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। যদি আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন, তাহলে খামারের পাখিদের ইনজেকশন দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ  দেওয়া হবে।’

তিনি জানান, ‘হাঁস-মুরগির মতো পাখি পালন করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। বাজরিকা পাখির রোগ-ব্যাধি কম। এ জন্য টিকা দিতে হয় না এবং কৃমির ওষুধও খাওয়াতে হয় না। অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বাজরিকা পাখি ও কবুতর পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে যদি কোনো উদ্যোক্তা আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’