ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগরে জমজ চার সন্তান জন্ম দেয়া দম্পত্তির কষ্টে দিনযাপন

সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও খোঁজ রাখেনি কেউ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে

জাহিদ বাবু, জীবননগর:
জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের দম্পতি জিয়াউর-তহমিনা জমজ তিন সন্তান নিয়ে অভাবে-কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিদিন সন্তানদের জন্য কৌটার দুধ ও ওষুধ এবং নিজেদের খাবার জোগাড় করতে ধার-দেনাসহ এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে জিয়াউর-তহমিনা দম্পতির।
জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর এক সঙ্গে চার সন্তান প্রসব করেন তহমিনা। এর মধ্যে ২২ অক্টোবর এক সন্তান মারা যায়। ওই সময় জীবননগর উপজেলা পরিষদ থেকে ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়। এরপর বাড়ি ফিরলে জীবননগর উপজেলা পরিষদ ও বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিল। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ফল এবং পোশাক দিয়েছিলেন। সে সময় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরে আর কেউ জমজ সন্তানের খোঁজখবর রাখেননি। সন্তানদের বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
প্রতিবেশী মো. রাজু বলেন, জমজ তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে রয়েছে জিয়াউর-তহমিনা। তারা অনেক গরিব। দিন আনে দিন খাই। বাঁচ্চাদের দুধ, ওষুধ আর নিজেদের খাবার জোগাড় করতে দিশেহারা তারা। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। জিয়াউরের শাশুড়ী আকলিমা বলেন, বিয়ের ৮ বছর পর মেয়ের এক সঙ্গে জমজ চার সন্তান হয়। এর মধ্যে এক শিশু হাসপাতালেই মারা যায়। সে সময় হাসপাতালের বিল মেটাতে এনজিও থেকে লোন নিয়ে জামাইকে দিয়েছিলাম। সেই টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। এখন প্রতিদিন কৌটার দুধ, ওষুধ আর খাবার জোগাড় করতে ১ হাজার টাকা লাগছে। আমার জামাই-মেয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে।
জমজ সন্তানদের মা তহমিনা বলেন, বাঁচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। বাঁচ্চাদের দুধ আর ওষুধ কিনতে প্রতিদিন ১ হাজার করে টাকা লাগছে। নিজেদের খাবারের কথা ভাবতে পারছি না। সন্তান জন্মের পর কিছু সহযোগিতা পেলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি। এখানো মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকাও পায়নি। জীবননগর উপজেলা পরিষদ, জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জিএ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বাবু ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় কিছু সাহায্য প্রদান করেছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান আর ইউএনও আমাদের জন্য গাভী ও বাছুরের ব্যবস্থা করবে বলেছিল, তবে এখনো পাইনি। ৩ মাস পার হলেও স্থানীয় কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।’
এ বিষয়ে বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই তারা ভাতার টাকা পাবে। সন্তান জন্মের পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, সন্তান জন্মের পর তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আরও সহযোগিতা করার জন্যে।
একই কথা বলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, জিয়াউরের সন্তানদের হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা হলে আমি, ইউএনওসহ কয়েকজন দেখতে গিয়েছিলাম। নগদ ২০ হাজার টাকাসহ কিছু সহযোগিতা করা হয়েছিল তখন। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল, তবে তারা যোগাযোগ করেনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে জমজ চার সন্তান জন্ম দেয়া দম্পত্তির কষ্টে দিনযাপন

সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও খোঁজ রাখেনি কেউ

আপলোড টাইম : ১১:১৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

জাহিদ বাবু, জীবননগর:
জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের দম্পতি জিয়াউর-তহমিনা জমজ তিন সন্তান নিয়ে অভাবে-কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিদিন সন্তানদের জন্য কৌটার দুধ ও ওষুধ এবং নিজেদের খাবার জোগাড় করতে ধার-দেনাসহ এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছেন। মাঝে মধ্যে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে জিয়াউর-তহমিনা দম্পতির।
জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর এক সঙ্গে চার সন্তান প্রসব করেন তহমিনা। এর মধ্যে ২২ অক্টোবর এক সন্তান মারা যায়। ওই সময় জীবননগর উপজেলা পরিষদ থেকে ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করা হয়। এরপর বাড়ি ফিরলে জীবননগর উপজেলা পরিষদ ও বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছিল। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ফল এবং পোশাক দিয়েছিলেন। সে সময় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও পরে আর কেউ জমজ সন্তানের খোঁজখবর রাখেননি। সন্তানদের বাঁচাতে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
প্রতিবেশী মো. রাজু বলেন, জমজ তিন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে রয়েছে জিয়াউর-তহমিনা। তারা অনেক গরিব। দিন আনে দিন খাই। বাঁচ্চাদের দুধ, ওষুধ আর নিজেদের খাবার জোগাড় করতে দিশেহারা তারা। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। জিয়াউরের শাশুড়ী আকলিমা বলেন, বিয়ের ৮ বছর পর মেয়ের এক সঙ্গে জমজ চার সন্তান হয়। এর মধ্যে এক শিশু হাসপাতালেই মারা যায়। সে সময় হাসপাতালের বিল মেটাতে এনজিও থেকে লোন নিয়ে জামাইকে দিয়েছিলাম। সেই টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। এখন প্রতিদিন কৌটার দুধ, ওষুধ আর খাবার জোগাড় করতে ১ হাজার টাকা লাগছে। আমার জামাই-মেয়ে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে।
জমজ সন্তানদের মা তহমিনা বলেন, বাঁচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। বাঁচ্চাদের দুধ আর ওষুধ কিনতে প্রতিদিন ১ হাজার করে টাকা লাগছে। নিজেদের খাবারের কথা ভাবতে পারছি না। সন্তান জন্মের পর কিছু সহযোগিতা পেলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি। এখানো মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকাও পায়নি। জীবননগর উপজেলা পরিষদ, জীবননগর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জিএ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বাবু ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সে সময় কিছু সাহায্য প্রদান করেছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান আর ইউএনও আমাদের জন্য গাভী ও বাছুরের ব্যবস্থা করবে বলেছিল, তবে এখনো পাইনি। ৩ মাস পার হলেও স্থানীয় কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।’
এ বিষয়ে বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই তারা ভাতার টাকা পাবে। সন্তান জন্মের পর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, সন্তান জন্মের পর তাৎক্ষণিক আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আরও সহযোগিতা করার জন্যে।
একই কথা বলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, জিয়াউরের সন্তানদের হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা হলে আমি, ইউএনওসহ কয়েকজন দেখতে গিয়েছিলাম। নগদ ২০ হাজার টাকাসহ কিছু সহযোগিতা করা হয়েছিল তখন। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল, তবে তারা যোগাযোগ করেনি।