ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগরে কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গৃহবধূরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪৩:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

মিঠুন মাহমুদ: শীতকাল এলেই মনে পড়ে সকালের খেজুরের রস, গুড়, পাটালি আর মুড়ি। সেই সঙ্গে শীতের সকালে খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে চাল কুমড়া বড়ির প্রচলন দীর্ঘদিনের। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলির সঙ্গে সঙ্গে কুমড়া বড়িরও বেশ কদর রয়েছে। আর এই মুখরোচক সুস্বাদু খাদ্য অতিযত্নসহকারে শৈল্পিকভাবে তৈরি করে আসছে জীবননগর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের বধূরা।

জীবননগর উপজেলা সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাশপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবার দীর্ঘ ৫০ বছরে ধরে এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ করে আসছেন। শীতের শুরু থেকে চার মাস এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। তবে বাজারে ডালের দাম বৃদ্ধিতে হতাশা হলেও বসে নেই এই কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগরেরা। এই কুমড়া বড়ি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে জীবননগরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায় চোখে পড়ার মতো। গ্রামাঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজিও বাজারে ওঠে। শীতের সময় সবজি আর মাছের তরকারির সঙ্গে রান্না করা হয় কুমড়া বড়ি।

সময় আর কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারে না। তবে সেই চাহিদার অনেকাংশে পূরণ করছে জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাশপুর, যাদবপুর, কাশিপুর, বেনীপুর, গয়েশপুর গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগরেরা। বাজারে চাহিদা আর স্বাদের ভিন্নতার জন্য ডাল, পেঁয়াজ আর চালকুমড়া দিয়ে তৈরি হয় এই খাদ্যসামগ্রী। বাজারে প্রচলিত মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয় এই কুমরা বড়ি তৈরিতে। পরিবারের কাজের ফাঁকে কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই অঞ্চলের নারীরা।

ঐতিহ্য আর বাড়তি লাভের আশায় বর্ষার শেষে অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে ও শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ। ডালের দাম ভেদে নির্ধারণ হয় এই কুমড়া বড়ির দাম। ৭০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ১২০ টাকা কেজি পাইকারদের কাছে বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে দুইশ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই কুমড়া বড়ি। ভোর থেকে মাল তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে সূর্য উঠা পর্যন্ত চলে এই কাজ। শীতের রৌদ্রে দুইদিন শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত হয় এই খাদ্যপণ্যটি।

গঙ্গাদাশপুর গ্রামের মুদিদোকানী রিপন হোসেন বলেন, ‘গঙ্গাদাশপুর গ্রামের কুমড়া বড়ি এই অঞ্চলের জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আমাদের এলাকায় প্রচুর পরিমানের সবজি পাওয়া যায়। গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষ এই সময়ে মেয়ে-জামাই দাওয়াত করে। পিঠাপুলির সঙ্গে তরকারিতে থাকে কুমড়া বড়ি। অন্যরকম একটি স্বাদ অনুভব করা যায়।’

কুমড়া বড়ির কারিগর বুলবুলি খাতুন বলেন, ‘এই বছর জিনিপত্রের দাম বেশি হওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কমে গেছে। তবু বসে না থেকে প্রতি বছরের মত এবারো কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ করছি। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের নারীরা এই কাজ করে থাকেন। শীতের এই চারমাস আমাদের ঘরে বসে কাজ করে একটু বাড়তি আয় হয়। প্রতিদিন ৩শ থেকে ৫শ টাকা আয় করা যায়।’

জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ এই কুমড়া বড়ি। এই কাজটি বেশির ভাগ নারীরা করে থাকেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করে তবে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত গৃহবধূরা

আপলোড টাইম : ০৫:৪৩:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২২

মিঠুন মাহমুদ: শীতকাল এলেই মনে পড়ে সকালের খেজুরের রস, গুড়, পাটালি আর মুড়ি। সেই সঙ্গে শীতের সকালে খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে চাল কুমড়া বড়ির প্রচলন দীর্ঘদিনের। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলির সঙ্গে সঙ্গে কুমড়া বড়িরও বেশ কদর রয়েছে। আর এই মুখরোচক সুস্বাদু খাদ্য অতিযত্নসহকারে শৈল্পিকভাবে তৈরি করে আসছে জীবননগর উপজেলার প্রতিটি গ্রামের বধূরা।

জীবননগর উপজেলা সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাশপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবার দীর্ঘ ৫০ বছরে ধরে এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ করে আসছেন। শীতের শুরু থেকে চার মাস এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন তারা। তবে বাজারে ডালের দাম বৃদ্ধিতে হতাশা হলেও বসে নেই এই কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগরেরা। এই কুমড়া বড়ি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে জীবননগরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায় চোখে পড়ার মতো। গ্রামাঞ্চলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজিও বাজারে ওঠে। শীতের সময় সবজি আর মাছের তরকারির সঙ্গে রান্না করা হয় কুমড়া বড়ি।

সময় আর কাজের ব্যস্ততার কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও সুস্বাদু এই কুমড়া বড়ি তৈরি করতে পারে না। তবে সেই চাহিদার অনেকাংশে পূরণ করছে জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাশপুর, যাদবপুর, কাশিপুর, বেনীপুর, গয়েশপুর গ্রামের কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগরেরা। বাজারে চাহিদা আর স্বাদের ভিন্নতার জন্য ডাল, পেঁয়াজ আর চালকুমড়া দিয়ে তৈরি হয় এই খাদ্যসামগ্রী। বাজারে প্রচলিত মাশকালাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয় এই কুমরা বড়ি তৈরিতে। পরিবারের কাজের ফাঁকে কুমড়া বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই অঞ্চলের নারীরা।

ঐতিহ্য আর বাড়তি লাভের আশায় বর্ষার শেষে অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে ও শীতের শেষে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে এই কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ। ডালের দাম ভেদে নির্ধারণ হয় এই কুমড়া বড়ির দাম। ৭০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ১২০ টাকা কেজি পাইকারদের কাছে বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে দুইশ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই কুমড়া বড়ি। ভোর থেকে মাল তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে সূর্য উঠা পর্যন্ত চলে এই কাজ। শীতের রৌদ্রে দুইদিন শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত হয় এই খাদ্যপণ্যটি।

গঙ্গাদাশপুর গ্রামের মুদিদোকানী রিপন হোসেন বলেন, ‘গঙ্গাদাশপুর গ্রামের কুমড়া বড়ি এই অঞ্চলের জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আমাদের এলাকায় প্রচুর পরিমানের সবজি পাওয়া যায়। গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষ এই সময়ে মেয়ে-জামাই দাওয়াত করে। পিঠাপুলির সঙ্গে তরকারিতে থাকে কুমড়া বড়ি। অন্যরকম একটি স্বাদ অনুভব করা যায়।’

কুমড়া বড়ির কারিগর বুলবুলি খাতুন বলেন, ‘এই বছর জিনিপত্রের দাম বেশি হওয়ার কারণে লাভের পরিমাণ কমে গেছে। তবু বসে না থেকে প্রতি বছরের মত এবারো কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ করছি। গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের নারীরা এই কাজ করে থাকেন। শীতের এই চারমাস আমাদের ঘরে বসে কাজ করে একটু বাড়তি আয় হয়। প্রতিদিন ৩শ থেকে ৫শ টাকা আয় করা যায়।’

জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ এই কুমড়া বড়ি। এই কাজটি বেশির ভাগ নারীরা করে থাকেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা সবসময় পাশে আছি। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা যদি আমাদের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করে তবে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে।