ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চোর সন্দেহে বৃদ্ধকে নির্মম নির্যাতন!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গায় গরু চোর সন্দেহে অজ্ঞাত বৃদ্ধকে (৬৫) আটকের পর নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে গ্রামবাসী। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের সনাতনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই ঘোলদাঁড়ি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। স্থানীয় ব্যক্তিরা চোর সন্দেহে গণধোলাই দিলেও পুলিশের ধারণা ওই বৃদ্ধ চোর নন, তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই বৃদ্ধর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি বিভাগে চিকিৎনাধীন অবস্থায় ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত একটার দিকে সনাতনপুর গ্রামের ভেতরে অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধকে ঘোরাফেরা করতে দেখে গ্রামবাসী। এসময় চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে গণধোলাই দেওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘোলদাঁড়ি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন।

সোনাতনপুর গ্রামের মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, সনাতনপুরে মধ্যরাতে গ্রামের মানুষ গরু চোর সন্দেহে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে তিনি গরু চুরি করছিলেন কি না তা নিশ্চিত নয়। ফাঁড়ি পুলিশ রাতে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘোলদাঁড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাজু আহমেদ বলেন, ‘সনাতনপুর গ্রামবাসী গরু চোর সন্দেহে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়েছে বলে জানতে পারি। তখনই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞাত পরিচয়ে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি কথাও বলতে পারছেন না।’ ওই বৃদ্ধ কারো বাড়িতে গরু চুরির সময় ধরা পড়েন কি না জানতে চাইলে এএসআই রাজু আহমেদ জানান, কারো বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিলেন কি না, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধকে পুলিশ সদস্যরা জরুরি বিভাগে নেয়। পুলিশ সদস্যরা জানান তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। বৃদ্ধর মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর দুই পায়ের পাতায় আঘাতের ফলে ফুলে গেছে। এছাড়াও তাঁর একটি হাতও ভেঙে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়।’

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসী অজ্ঞাত এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাস্থল থেকে বৃদ্ধর একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। ব্যাগের ভেতরে চাল, ডালসহ কিছু সামগ্রী ছিল। প্রাথমিক তদন্তে ওই বৃদ্ধকে চোর বলে মনে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চোর সন্দেহে বৃদ্ধকে নির্মম নির্যাতন!

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলমডাঙ্গায় গরু চোর সন্দেহে অজ্ঞাত বৃদ্ধকে (৬৫) আটকের পর নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে গ্রামবাসী। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের সনাতনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই ঘোলদাঁড়ি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। স্থানীয় ব্যক্তিরা চোর সন্দেহে গণধোলাই দিলেও পুলিশের ধারণা ওই বৃদ্ধ চোর নন, তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই বৃদ্ধর পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি সদর হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি বিভাগে চিকিৎনাধীন অবস্থায় ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত একটার দিকে সনাতনপুর গ্রামের ভেতরে অজ্ঞাত ওই বৃদ্ধকে ঘোরাফেরা করতে দেখে গ্রামবাসী। এসময় চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে গণধোলাই দেওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘোলদাঁড়ি ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন।

সোনাতনপুর গ্রামের মেম্বার সাইফুল ইসলাম বলেন, সনাতনপুরে মধ্যরাতে গ্রামের মানুষ গরু চোর সন্দেহে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে তিনি গরু চুরি করছিলেন কি না তা নিশ্চিত নয়। ফাঁড়ি পুলিশ রাতে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘোলদাঁড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাজু আহমেদ বলেন, ‘সনাতনপুর গ্রামবাসী গরু চোর সন্দেহে এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়েছে বলে জানতে পারি। তখনই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অজ্ঞাত পরিচয়ে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। তিনি কথাও বলতে পারছেন না।’ ওই বৃদ্ধ কারো বাড়িতে গরু চুরির সময় ধরা পড়েন কি না জানতে চাইলে এএসআই রাজু আহমেদ জানান, কারো বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিলেন কি না, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধকে পুলিশ সদস্যরা জরুরি বিভাগে নেয়। পুলিশ সদস্যরা জানান তিনি গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। বৃদ্ধর মাথা ব্যতীত সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাঁর দুই পায়ের পাতায় আঘাতের ফলে ফুলে গেছে। এছাড়াও তাঁর একটি হাতও ভেঙে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখা হয়।’

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে গরু চোর সন্দেহে গ্রামবাসী অজ্ঞাত এক বৃদ্ধকে গণধোলাই দিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাস্থল থেকে বৃদ্ধর একটি ব্যাগ পাওয়া গেছে। ব্যাগের ভেতরে চাল, ডালসহ কিছু সামগ্রী ছিল। প্রাথমিক তদন্তে ওই বৃদ্ধকে চোর বলে মনে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি মানসিক প্রতিবন্ধী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।