ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য, দিশেহারা রোগী ও স্বজনরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪২:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

চিকিৎসকদের সাথে কমিশন-বাণিজ্য করে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের দালালরা আনেন রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা রোগী ও তাঁদের স্বজনরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ, মূল ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরো হাসপাতালজুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ রোগীদের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। একই সঙ্গে দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার। দালালদের সহায়তার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও। এদিকে দালালদের দৌরাত্ম্য ও তাঁদের অবাধ চলাচলে অনেকটায় নীরব ভূমিকায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে-বাইরে, বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের প্রায় প্রতিটি দরজার সামনে ও অন্তর্বিভাগের সবকটি ওয়ার্ডেই দালালদের অপতৎপরতা। তেমনিই এক চিত্র দেখা যায়, হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের ২০০৯ নম্বর কক্ষের বাইরে স্থানীয় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের দুই দালালকে। কক্ষ থেকে রোগী বাইরে বের হওয়ার পরপরই দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীকে নিয়ে সরাসরি চলে যায় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। এসময় কথা হয় ওই ২০০৯ নম্বর কক্ষের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সঙ্গে। দালালদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কক্ষের মধ্যে বসে রোগী দেখি। এসময় কক্ষের বাইরে থেকে কেউ রোগী নিয়ে গেলে তা আমার জানার কথা নয়।’

দালাল ও রোগীর পিছু পিছু গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। কথা হয় ওই মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যাওয়া রাবেয়া খাতুন নামের এক রোগী ও তার বৃদ্ধ স্বামী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন ভবনের দুই তলার ২০০৯ নম্বর কক্ষে চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রীকে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা লিখে দেন, এসময় কক্ষের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর আমাদেরকে পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে আসে। কিন্তু এরা ১২০০ টাকা খরচ হবে বলে জানায়। আমাদের কাছে বেশি টাকা না থাকায় ৬ শ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু ওরা ৬ শ টাকায় পরীক্ষা হবে না বলে জানায়।’

হাসপাতালে পরীক্ষা না করিয়ে দালালের কথা শুনলেন কেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা গ্রামের মাঠে খাটা মানুষ। দালালদের এসব কৌশল তিনি বোঝেননি। হাসপাতালে কম টাকায় পরীক্ষা হয়, তা তার জানা নেই। এখানে এসে বিপাকে পড়েছেন।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য এক রোগী চাঁদনী খাতুন বলেন, ‘সকালে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে দেন। এসময় দুইজন ছেলে এসে আমার প্রেসক্রিপশন দেখতে চাই।’ প্রেসক্রিপশন দেখে তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা হবে না। আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দালাল বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কী করবেন, তারপরেও থাকতে হয়। বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী নিয়ে গেলে কমিশনের মাধ্যমে তারা টাকা পাই। তাঁরা গরিব মানুষ। এ কাজ করে তাঁদের সংসার চলে।’

এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করা হয়েছে এবং দালাল উচ্ছেদে প্রশাসনের নেতৃত্বে অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদর থানার ওসির পক্ষ থেকে নিয়মিত পুলিশ টহল হচ্ছে। হাসপাতালের কেউ দালালদের সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য, দিশেহারা রোগী ও স্বজনরা

আপলোড টাইম : ০৪:৪২:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২

চিকিৎসকদের সাথে কমিশন-বাণিজ্য করে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের দালালরা আনেন রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা রোগী ও তাঁদের স্বজনরা। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ, মূল ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের ওয়ার্ড পর্যন্ত পুরো হাসপাতালজুড়ে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সাধারণ রোগীদের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। একই সঙ্গে দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা হচ্ছেন হয়রানির শিকার। দালালদের সহায়তার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও। এদিকে দালালদের দৌরাত্ম্য ও তাঁদের অবাধ চলাচলে অনেকটায় নীরব ভূমিকায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে-বাইরে, বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের প্রায় প্রতিটি দরজার সামনে ও অন্তর্বিভাগের সবকটি ওয়ার্ডেই দালালদের অপতৎপরতা। তেমনিই এক চিত্র দেখা যায়, হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের ২০০৯ নম্বর কক্ষের বাইরে স্থানীয় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারের দুই দালালকে। কক্ষ থেকে রোগী বাইরে বের হওয়ার পরপরই দালাল চক্রের সদস্যরা রোগীকে নিয়ে সরাসরি চলে যায় গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে। এসময় কথা হয় ওই ২০০৯ নম্বর কক্ষের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সঙ্গে। দালালদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কক্ষের মধ্যে বসে রোগী দেখি। এসময় কক্ষের বাইরে থেকে কেউ রোগী নিয়ে গেলে তা আমার জানার কথা নয়।’

দালাল ও রোগীর পিছু পিছু গ্রীন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। কথা হয় ওই মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যাওয়া রাবেয়া খাতুন নামের এক রোগী ও তার বৃদ্ধ স্বামী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন ভবনের দুই তলার ২০০৯ নম্বর কক্ষে চিকিৎসার জন্য তার স্ত্রীকে নিয়ে যান। চিকিৎসক পরীক্ষা লিখে দেন, এসময় কক্ষের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা এক কিশোর আমাদেরকে পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে আসে। কিন্তু এরা ১২০০ টাকা খরচ হবে বলে জানায়। আমাদের কাছে বেশি টাকা না থাকায় ৬ শ টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু ওরা ৬ শ টাকায় পরীক্ষা হবে না বলে জানায়।’

হাসপাতালে পরীক্ষা না করিয়ে দালালের কথা শুনলেন কেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা গ্রামের মাঠে খাটা মানুষ। দালালদের এসব কৌশল তিনি বোঝেননি। হাসপাতালে কম টাকায় পরীক্ষা হয়, তা তার জানা নেই। এখানে এসে বিপাকে পড়েছেন।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য এক রোগী চাঁদনী খাতুন বলেন, ‘সকালে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে দেন। এসময় দুইজন ছেলে এসে আমার প্রেসক্রিপশন দেখতে চাই।’ প্রেসক্রিপশন দেখে তাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা হবে না। আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দালাল বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু কী করবেন, তারপরেও থাকতে হয়। বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী নিয়ে গেলে কমিশনের মাধ্যমে তারা টাকা পাই। তাঁরা গরিব মানুষ। এ কাজ করে তাঁদের সংসার চলে।’

এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ্ আকরাম বলেন, হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করা হয়েছে এবং দালাল উচ্ছেদে প্রশাসনের নেতৃত্বে অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদর থানার ওসির পক্ষ থেকে নিয়মিত পুলিশ টহল হচ্ছে। হাসপাতালের কেউ দালালদের সহায়তা করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।