ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় প্রাণী ও মানব স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে বৈজ্ঞানিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের উপস্থিতিতে প্রাণী ও মানব স্বাস্থ্যাঝুঁকি হ্রাসে ওয়ান হেলথ ধারণা অনুযায়ী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-এর সমাধান প্রচার শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অডিটরিয়ামে একমি ও ইউএসআইডি’র সহযোগিতায় ফিড দি ফিউচার বাংলাদেশ লাইভস্টক অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্টিভিটি, এসিডিআই/ভোকা’র উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন খুলনার ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক ডা. অরুন কান্তি মণ্ডল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ ও রেজিস্ট্যান্স এই বিশ্বায়নের যুগে এক মারাত্মক সমস্যা, যার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কেউই রক্ষা পাবে না। এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশকে করতে পারে মানুষের বসবাসের অযোগ্য, সৃষ্টি করতে পারে নানা জটিল রোগব্যাধি এবং মানুষ ও পশুপাখির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে পারে মারাত্মক জটিলতা।’ তিনি বলেন, খামারীরা কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় গবাদিপশু ও মুরগীতে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। আর এই যত্রতত্র নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার মানুষের জন্য বয়ে আনছে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেক খামারী গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে খাবারের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অথবা ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য। ফলে যেসব পশুপাখিকে স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে, সেসব পশুপাখির শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু তৈরি হয় এবং তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে অন্যান্য জীবাণুও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে জিন ট্রান্সফরমেশন এবং মিউটেশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট হচ্ছে। এভাবে একটি মহামারি নীরবে ঘটে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা. এ কে এম মোস্তফা আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘গবাদিপশু ও মুরগিতে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থায়ই খামারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। গবাদি পশু ও মুরগির খামারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পর প্রত্যাহারকাল মেনে পশু ও মুরগী মানুষের খাবারের জন্য ব্যবহার করতে হবে। মানুষ ও পশুপাখির যেসব ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, তা ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ মোতাবেক সঠিকভাবে ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। কোনো অবস্থায়ই ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ ছাড়া প্রতিরোধ বা প্রতিকারের জন্য স্বল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত হবে না।’

একমির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডা. শারমিন আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির থেকে বক্তব্য দেন একমির ভেটেরিনারি মার্কেটিং ও সেলস সমন্বয়ক রাশিদুর রহমান রঞ্জু, সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক তবারক হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইদুর রহমান, একমির আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক শেখ আহম্মদ আলী প্রমুখ। এসময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন ডা. এএইসএম শামিমুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল খামারের প্রাণিসম্পদ অফিসার আরমান আলী, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. আব্দুল্লাহিল কাফি, জীবননগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. তানভির হাসান।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গবাদিপশুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হ্রাস করার পাশপাশি ওয়ান হেলথ ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যাঝুঁকি হ্রাস এবং মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। যার সরাসরি উপকারভোগী হবেন গবাদি পশুর খামারী, ভোক্তাবৃন্দ ও দেশের সার্বিক পরিবেশ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় প্রাণী ও মানব স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে বৈজ্ঞানিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আপলোড টাইম : ১০:০৬:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভেটেরিনারিয়ানদের উপস্থিতিতে প্রাণী ও মানব স্বাস্থ্যাঝুঁকি হ্রাসে ওয়ান হেলথ ধারণা অনুযায়ী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-এর সমাধান প্রচার শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অডিটরিয়ামে একমি ও ইউএসআইডি’র সহযোগিতায় ফিড দি ফিউচার বাংলাদেশ লাইভস্টক অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্টিভিটি, এসিডিআই/ভোকা’র উদ্যোগে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন খুলনার ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক ডা. অরুন কান্তি মণ্ডল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিউ ও রেজিস্ট্যান্স এই বিশ্বায়নের যুগে এক মারাত্মক সমস্যা, যার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কেউই রক্ষা পাবে না। এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশকে করতে পারে মানুষের বসবাসের অযোগ্য, সৃষ্টি করতে পারে নানা জটিল রোগব্যাধি এবং মানুষ ও পশুপাখির চিকিৎসার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করতে পারে মারাত্মক জটিলতা।’ তিনি বলেন, খামারীরা কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় গবাদিপশু ও মুরগীতে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। আর এই যত্রতত্র নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার মানুষের জন্য বয়ে আনছে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেক খামারী গ্রোথ প্রমোটার হিসেবে খাবারের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ অথবা ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য। ফলে যেসব পশুপাখিকে স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে, সেসব পশুপাখির শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু তৈরি হয় এবং তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে অন্যান্য জীবাণুও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে জিন ট্রান্সফরমেশন এবং মিউটেশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট হচ্ছে। এভাবে একটি মহামারি নীরবে ঘটে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ডা. এ কে এম মোস্তফা আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘গবাদিপশু ও মুরগিতে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থায়ই খামারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। গবাদি পশু ও মুরগির খামারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার পর প্রত্যাহারকাল মেনে পশু ও মুরগী মানুষের খাবারের জন্য ব্যবহার করতে হবে। মানুষ ও পশুপাখির যেসব ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, তা ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ মোতাবেক সঠিকভাবে ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। কোনো অবস্থায়ই ভেটেরিনারিয়ানদের পরামর্শ ছাড়া প্রতিরোধ বা প্রতিকারের জন্য স্বল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত হবে না।’

একমির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডা. শারমিন আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির থেকে বক্তব্য দেন একমির ভেটেরিনারি মার্কেটিং ও সেলস সমন্বয়ক রাশিদুর রহমান রঞ্জু, সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক তবারক হোসেন, মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইদুর রহমান, একমির আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক শেখ আহম্মদ আলী প্রমুখ। এসময় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন ডা. এএইসএম শামিমুজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি ছাগল খামারের প্রাণিসম্পদ অফিসার আরমান আলী, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. আব্দুল্লাহিল কাফি, জীবননগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. তানভির হাসান।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গবাদিপশুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হ্রাস করার পাশপাশি ওয়ান হেলথ ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যাঝুঁকি হ্রাস এবং মানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়। যার সরাসরি উপকারভোগী হবেন গবাদি পশুর খামারী, ভোক্তাবৃন্দ ও দেশের সার্বিক পরিবেশ।