ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে নারীর আত্মহত্যার অপচেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৭:০৪:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় স্বামীর ওপর অভিমান ও সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে শাপলা খাতুন (২৩) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয়রা গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় শাপলা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আত্মহত্যার অপচেষ্টাকারী শাপলা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটা খোয়ঘাটপাড়ার কাঠমিস্ত্রী আতিয়ার রহমানের স্ত্রী।

জানা যায়, সাড়ে চার বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে শাপলার প্রথম বিবাহ হয়। সেখানে তিন বছর সংসার করার একপর্যায়ে তিন সন্তানের জনক ৫২ বছর বয়সী কাঠমিস্ত্রি আতিয়ার রহমানের সঙ্গে শাপলার পরিচয় হয়। এসময় তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে শাপলা তাঁর প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে আতিয়ার রহমানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ করে। এই বিবাহের কথা জানার পর থেকেই আতিয়ারের স্ত্রী শাপলাকে মানসিকভাকে নির্যাতন করে আসছিল। একপর্যায়ে আতিয়ার শাপলাকে তাঁর নিজ বাড়িতেও নিয়ে যায়। সেখাসে ৭ মাস ছিল শাপলা। তবে সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে সে দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস পাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে আতিয়ারের সঙ্গে থাকতে শুরু করে।

এরই মধ্যে গতকাল সকালে সতীনের বঞ্চণা নিয়ে মোবাইলে শাপলার সঙ্গে আতিয়ারের বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় শাপলা নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয় ব্যক্তিরা শাপলার চিৎকারে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তারানা আনোয়ার শাপলাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শাপলার শয্যাপাশে বসে থাকা মা কহিনুর বেগমের কাছে এই আত্মহত্যার অপচেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেড় বছর পূর্বে শাপলা আতিয়ারের প্ররচোণায় পড়ে তার প্রথম পক্ষের সামীকে তালাক দিয়ে আতিয়ারের সঙ্গে বিবাহ করে। আতিয়ার পূর্বে থেকেই বিবাহিত ছিল। তাঁর দুই ছেলে ও একটি মেয়েও রয়েছে। সকলইে বিবাহিত। শাপলার সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই আতিয়ারের প্রথম স্ত্রী শাপলাকে গালমন্দ ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসিছিল। শাপলা আতিয়ারের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে একই বাড়িতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল তবে ৭ মাস থাকার পর সে সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে দৌলতদিয়াড়ে ভাড়া বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু এতেও শাপলার ওপর থেকে মানসিক নির্যাতন ও বঞ্চণা কম হয়নি। গতকাল সকালে মোবাইলে এই নিয়ে শাপলার সঙ্গে আতিয়ারের বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সে অভিমান করে নিজের মেক্সিতে (পোশাক) আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আতিয়ারের সঙ্গে শাপলার আতিয়ারের অভিমান শেষ হয়েছে। আতিয়ার সব সময় শাপলার খোঁজ নেচ্ছে এবং সময় পেলেই তাকে দেখতে আসেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, ‘শাপলার পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে জানতে পেরেছি সে নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে। শাপলার খাতুনের বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরের প্রায় ৩২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসা শেষে তাকে হাপসাতালের মহিলা সার্জারি বিভাগের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত কিনা তা এখনি বলা যাচ্ছে না। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে শাপলা নামের এক নারী আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এ ঘটনায় আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে নারীর আত্মহত্যার অপচেষ্টা

আপলোড টাইম : ০৭:০৪:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১

চুয়াডাঙ্গায় স্বামীর ওপর অভিমান ও সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে শাপলা খাতুন (২৩) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় স্থানীয়রা গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় শাপলা খাতুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আত্মহত্যার অপচেষ্টাকারী শাপলা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের হাতিকাটা খোয়ঘাটপাড়ার কাঠমিস্ত্রী আতিয়ার রহমানের স্ত্রী।

জানা যায়, সাড়ে চার বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে শাপলার প্রথম বিবাহ হয়। সেখানে তিন বছর সংসার করার একপর্যায়ে তিন সন্তানের জনক ৫২ বছর বয়সী কাঠমিস্ত্রি আতিয়ার রহমানের সঙ্গে শাপলার পরিচয় হয়। এসময় তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হলে শাপলা তাঁর প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে আতিয়ার রহমানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবাহ করে। এই বিবাহের কথা জানার পর থেকেই আতিয়ারের স্ত্রী শাপলাকে মানসিকভাকে নির্যাতন করে আসছিল। একপর্যায়ে আতিয়ার শাপলাকে তাঁর নিজ বাড়িতেও নিয়ে যায়। সেখাসে ৭ মাস ছিল শাপলা। তবে সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে সে দৌলতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিস পাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে আতিয়ারের সঙ্গে থাকতে শুরু করে।

এরই মধ্যে গতকাল সকালে সতীনের বঞ্চণা নিয়ে মোবাইলে শাপলার সঙ্গে আতিয়ারের বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় শাপলা নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয় ব্যক্তিরা শাপলার চিৎকারে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তারানা আনোয়ার শাপলাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শাপলার শয্যাপাশে বসে থাকা মা কহিনুর বেগমের কাছে এই আত্মহত্যার অপচেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেড় বছর পূর্বে শাপলা আতিয়ারের প্ররচোণায় পড়ে তার প্রথম পক্ষের সামীকে তালাক দিয়ে আতিয়ারের সঙ্গে বিবাহ করে। আতিয়ার পূর্বে থেকেই বিবাহিত ছিল। তাঁর দুই ছেলে ও একটি মেয়েও রয়েছে। সকলইে বিবাহিত। শাপলার সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই আতিয়ারের প্রথম স্ত্রী শাপলাকে গালমন্দ ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসিছিল। শাপলা আতিয়ারের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে একই বাড়িতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল তবে ৭ মাস থাকার পর সে সতীনের বঞ্চণা সইতে না পেরে দৌলতদিয়াড়ে ভাড়া বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু এতেও শাপলার ওপর থেকে মানসিক নির্যাতন ও বঞ্চণা কম হয়নি। গতকাল সকালে মোবাইলে এই নিয়ে শাপলার সঙ্গে আতিয়ারের বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সে অভিমান করে নিজের মেক্সিতে (পোশাক) আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আতিয়ারের সঙ্গে শাপলার আতিয়ারের অভিমান শেষ হয়েছে। আতিয়ার সব সময় শাপলার খোঁজ নেচ্ছে এবং সময় পেলেই তাকে দেখতে আসেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, ‘শাপলার পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে জানতে পেরেছি সে নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে। শাপলার খাতুনের বুক, পিঠ, হাতসহ শরীরের প্রায় ৩২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। জরুরি বিভাগের চিকিৎসা শেষে তাকে হাপসাতালের মহিলা সার্জারি বিভাগের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত কিনা তা এখনি বলা যাচ্ছে না। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নিজের পোশাকে আগুন জ্বালিয়ে শাপলা নামের এক নারী আত্মহত্যার অপচেষ্টা করেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে এ ঘটনায় আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’