ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

ক্রমেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ

সমীকরণ প্রতিবেদন:
একদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও সামান্য কমেছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা তিনদিন ধরে দেশের সর্বমিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হচ্ছে এ জেলায়। গত এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। দেশের সীমান্তের কোল ঘেঁষা এ জেলায় বেড়েই চলছে কনকনে শীত ও কুয়াশা। উত্তরদিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। ফলে জেঁকে বসেছে শীত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

ভোর-সন্ধ্যা-রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলায় রোদ থাকলেও থাকে না তেজ। বিকেল থেকেই বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। ঠাণ্ডা বাতাসে অনুভূত হয় শীতের প্রকোপ। শীত নিবারণে মানুষজন গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়খুটো জ্বালিয়ে আগুনের আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যা থেকে এ জেলায় কুয়াশা শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সকালে কুয়াশা না থাকলেও কনকনের শীতের কারণে বেলা অব্দি সাধারণ মানুষজনকে শীতের গরম কাপড় জড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ অঞ্চলটিতে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। ফলে এ জেলার সাধারণ মানুষ ও দিনমজুররা পড়েছেন চরম বিপাকে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গায় ক্রমেই তাপমাত্র কমে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পরদিন শুক্রবার পুনঃরায় দেশের সর্বনিম্ন এ জেলাতেই রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল আরও কমে ৯ দশমিত ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসসহ টানা তিন দিনের মতো চুয়াডাঙ্গাতে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শীত নিবারণে শহরের হাটবাজারের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদিকে বেড়েছে শীতজনিত নানা ব্যাধি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জেলায় কনকনে শীত তীব্র হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ ও কমলমতি শিশুরা। প্রতিদিন বাড়ছে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ¦র, বৃদ্ধদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট। কনকনে শীতে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও কাবু হয়ে পড়েছে।

জেলা শহরের পান দোকানদার শফিকুর রহমান জানান, পান বিক্রি করে সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। ঠাণ্ডার কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। এলাকায় মানুষের সমাগম কমেছে, তাই ক্রেতাও কম।’

হোটেল শ্রমিক আনারুল জানান, ‘ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে। বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে শহরের হোটেলে আসতেই ঠাণ্ডায় জীবন যেন বেরিয়ে যায়।’

অটোরিকশাচালক শরিফুল ইসলাম, ‘শহরের তুলনায় গ্রামে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে। শীতে কষ্টতো হচ্ছেই, মহাজনের টাকা দিতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান জানান, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে এখানকার মানুষ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। লোকবল কম থাকায় চিকিৎসক ও সেবিকাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, ‘টানা তিনদিন ধরে চলতি মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। পরপর তিন দিন জেলার তাপমাত্রা ক্রমেই কমেছে। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

আপলোড টাইম : ১০:৫৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২

ক্রমেই বাড়ছে শীতের প্রকোপ

সমীকরণ প্রতিবেদন:
একদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও সামান্য কমেছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা তিনদিন ধরে দেশের সর্বমিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হচ্ছে এ জেলায়। গত এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। দেশের সীমান্তের কোল ঘেঁষা এ জেলায় বেড়েই চলছে কনকনে শীত ও কুয়াশা। উত্তরদিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। ফলে জেঁকে বসেছে শীত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।

ভোর-সন্ধ্যা-রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলায় রোদ থাকলেও থাকে না তেজ। বিকেল থেকেই বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। ঠাণ্ডা বাতাসে অনুভূত হয় শীতের প্রকোপ। শীত নিবারণে মানুষজন গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়খুটো জ্বালিয়ে আগুনের আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যা থেকে এ জেলায় কুয়াশা শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সকালে কুয়াশা না থাকলেও কনকনের শীতের কারণে বেলা অব্দি সাধারণ মানুষজনকে শীতের গরম কাপড় জড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ অঞ্চলটিতে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। ফলে এ জেলার সাধারণ মানুষ ও দিনমজুররা পড়েছেন চরম বিপাকে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকেই।

চুয়াডাঙ্গায় ক্রমেই তাপমাত্র কমে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পরদিন শুক্রবার পুনঃরায় দেশের সর্বনিম্ন এ জেলাতেই রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল আরও কমে ৯ দশমিত ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসসহ টানা তিন দিনের মতো চুয়াডাঙ্গাতে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শীত নিবারণে শহরের হাটবাজারের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদিকে বেড়েছে শীতজনিত নানা ব্যাধি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জেলায় কনকনে শীত তীব্র হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ ও কমলমতি শিশুরা। প্রতিদিন বাড়ছে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ¦র, বৃদ্ধদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট। কনকনে শীতে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও কাবু হয়ে পড়েছে।

জেলা শহরের পান দোকানদার শফিকুর রহমান জানান, পান বিক্রি করে সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। ঠাণ্ডার কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। এলাকায় মানুষের সমাগম কমেছে, তাই ক্রেতাও কম।’

হোটেল শ্রমিক আনারুল জানান, ‘ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে। বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে শহরের হোটেলে আসতেই ঠাণ্ডায় জীবন যেন বেরিয়ে যায়।’

অটোরিকশাচালক শরিফুল ইসলাম, ‘শহরের তুলনায় গ্রামে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে। শীতে কষ্টতো হচ্ছেই, মহাজনের টাকা দিতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান জানান, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে এখানকার মানুষ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। লোকবল কম থাকায় চিকিৎসক ও সেবিকাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, ‘টানা তিনদিন ধরে চলতি মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। পরপর তিন দিন জেলার তাপমাত্রা ক্রমেই কমেছে। আগামী দিনে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।’