ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, চিকিৎসা দিতে হিমশিম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সাপ্লাই রয়েছে : আরএমও ফাতেহ আকরাম

আল-হাকিম: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত সাতদিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৭৪ জন রোগী। এতে করে বাড়ছে উদ্বেগ। তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর থেকে রোগীর স্বজনদের সংখ্যা আরও বেশি। গতকাল মঙ্গলবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ২৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২৭ জন রোগী। এছাড়া এইদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ চিকিৎসা নিয়েছে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। তবে স্বস্তির বিষয় হলো হাসপাতালের খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে।

গতকাল মঙ্গলবার সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেককেই বারান্দা কিংবা করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে রোগীর থেকে রোগীর স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়ও দেখা গেছে। ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত একটি শিশুর মা বলেন, ‘গত রোববার আমার ৩ বছর বয়সী মেয়ে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বাড়িতে তাকে খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও সুস্থ না হওয়ায় আজ হাসপাতালে নিয়ে আনি। ডাক্তার মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি রাখতে বলেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর অনেক চাপ, ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বারান্দায় মেয়েকে নিয়ে আছি।’ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তাবাচ্ছুম নামের অন্য একটি শিশুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘গত দুদিন থেকে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল তাবাচ্ছুমের। রোববার সকালে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওয়র্ডে এসে দেখি ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো জায়গা নেই।’ বারান্দায় বিছানা পেতে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিরাপদ পানি পান ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদ পানি পান করা সবচেয়ে জরুরি। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসময় শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চললে ও খাবার খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে হাত ধুলে ও নিয়মিত পানি পান করলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত কলেরা ও খাবার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সাপ্লাই রয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, চিকিৎসা দিতে হিমশিম

আপলোড টাইম : ০৮:২৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

হাসপাতালে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সাপ্লাই রয়েছে : আরএমও ফাতেহ আকরাম

আল-হাকিম: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত সাতদিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৭৪ জন রোগী। এতে করে বাড়ছে উদ্বেগ। তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর থেকে রোগীর স্বজনদের সংখ্যা আরও বেশি। গতকাল মঙ্গলবার ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ২৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২৭ জন রোগী। এছাড়া এইদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ চিকিৎসা নিয়েছে দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। তবে স্বস্তির বিষয় হলো হাসপাতালের খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে।

গতকাল মঙ্গলবার সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে রোগীর স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেককেই বারান্দা কিংবা করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে রোগীর থেকে রোগীর স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়ও দেখা গেছে। ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত একটি শিশুর মা বলেন, ‘গত রোববার আমার ৩ বছর বয়সী মেয়ে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে। বাড়িতে তাকে খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পরেও সুস্থ না হওয়ায় আজ হাসপাতালে নিয়ে আনি। ডাক্তার মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি রাখতে বলেন। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর অনেক চাপ, ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বারান্দায় মেয়েকে নিয়ে আছি।’ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তাবাচ্ছুম নামের অন্য একটি শিশুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘গত দুদিন থেকে পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল তাবাচ্ছুমের। রোববার সকালে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওয়র্ডে এসে দেখি ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো জায়গা নেই।’ বারান্দায় বিছানা পেতে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিরাপদ পানি পান ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে হলে নিরাপদ পানি পান করা সবচেয়ে জরুরি। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসময় শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চললে ও খাবার খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে হাত ধুলে ও নিয়মিত পানি পান করলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত কলেরা ও খাবার স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ সাপ্লাই রয়েছে।’