ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত, গ্রেপ্তার ২

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২
  • / ৭০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছয়জনের নামে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

জানা গেছে, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যারাত সাড়ে সাতটার দিকে আসাবুল হকের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে একই গ্রামের মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক (নাছির), নাছিরের ভাই ও ভাস্তেসহ তাঁর অনুসারীরা। এ ঘটনায় আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী নির্যাতিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশীয় অস্ত্র হেমার ও রামদা দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বিদেশী বেনিয়াদের মতো রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিল, গ্যাসের চুলা, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল, চেয়ার, রান্না করা ভাত, সাববক্স, চৌকি, খাঁট, টেলিভিশনসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও হ্যামার দিয়ে ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ সূত্র দিয়ে আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বলেন, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক (নাছির) (৩৮), আহসানুল কবির (বসির) (৪২), নুর আলম সিদ্দিক (বকুল) (৫৫), আনারুল সিদ্দিক (নাজিম) (৩২), আলম সিদ্দিক বকুলের ছেলে মো. অমিও (২২), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে কাওছার আলী (৪২) সাথে জমিজমা সংক্রান্তে পূর্বশত্রুতা ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আহসানুল কবির (বসির) আমার ছোট দেবর ইকরামুল হকের সাথে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তর্কবিতর্ক করে। তারই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁরা বেআইনী জনতাবদ্ধে হাতে লোহার রড, শাবল, লাঠি সোটা, শাবল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অনধিকারভাবে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। তখন আমার শাশুড়ি রাহাতুন নেছা (৯৫) নিষেধ করিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তাঁরা আমার বসত ঘরের মধ্যে অনধিকারভাবে প্রবেশ করে ঘরের ভিতর বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্রাদী (ড্রেসিং টেবিল, খাট, শোভা, রাইসকুকার, প্যাচুলা, আলমারীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র) ভাংচুর করে প্রায় দেড় লক্ষাধীক টাকা ক্ষতি। আলমগীর সিদ্দিক নাছিরের নেতৃত্বে তারা আমার ঘরের মধ্যে থাকা স্টিলের আলমারির তালা ভেঙ্গে ড্রয়ারে থাকা জমি বিক্রির নগদ ৩ লাখ টাকা এবং ড্রয়ারে থাকা স্বর্ণলংকার যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। একই সময় আমার চাচাতো দেবর শাহিন আলমের বাড়ীতেও অনধিকারে প্রবেশ করে ঘরের ভিতর ওয়াল সোকেস, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাংচুর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। টাকা ক্ষতিসাধন করে এবং আহসানুল কবির (বসির) আমার চাচাতো দেবরের দোকানের ব্যবসায়িক নগদ ২ লাখ টাকা এবং প্রায় ৩ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। তখন আমার চাচি শাশুড়ি পারভিনা বাধা প্রদান করতে গেলে গেলে নুর আলম সিদ্দিক (বকুল) তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে এবং অমিও তার গলায় থাকা একভরি ওজনের স্বর্নের চেইন (মূল্য অনুমান ৬০ হাজার টাকা) এবং হাতে থাকা দুইটি স্বর্ণের বালা (মূল্য অনুমান ৪০ হাজার টাকা) জোর করে কেড়ে নেয়। তাঁরা আমাদের বাড়ীতে থাকা মহিলাদের মারপিট করে। আমরা চিৎকার করলে আশেপাশের এসে আমাদের রক্ষা করে। তখন তারা আমাদেরকে বিভিন্ন খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আমি মামলা দায়েরের আবেদন করেছি।

এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য যাওয়া হয় নাসির-বশিরের বাসায়। বশিরের বাসায় গেলে বশিরের বাসায় কাউকে না পেয়ে কয়েকবার কড়ানাড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ি থেকে বকুল নামে এক ভদ্রলোকের স্ত্রী এসে জানান, তারা কেউ বাড়িতে নেই। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বকুলের স্ত্রী বশিরের স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসেন। বশিরের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে তারা মারধর করেছে। আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাকে আজকে রাজশাহী রেফার্ড করা হবে। বশিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি।

অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে উভয় পক্ষের মারামারি ও বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখান থেকে মৃত বাক্কার ছেলে নাসিরকে এবং সাহাজুল ইসলাম সেলিম ওরফে সেলু নামের দুইজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নাসির ও সেলুকে ১৫১ ধারায় আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাঁদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত, গ্রেপ্তার ২

আপলোড টাইম : ০৮:৫৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছয়জনের নামে মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

জানা গেছে, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যারাত সাড়ে সাতটার দিকে আসাবুল হকের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করে একই গ্রামের মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক (নাছির), নাছিরের ভাই ও ভাস্তেসহ তাঁর অনুসারীরা। এ ঘটনায় আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগী নির্যাতিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশীয় অস্ত্র হেমার ও রামদা দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বিদেশী বেনিয়াদের মতো রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিল, গ্যাসের চুলা, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল, চেয়ার, রান্না করা ভাত, সাববক্স, চৌকি, খাঁট, টেলিভিশনসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও হ্যামার দিয়ে ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ সূত্র দিয়ে আসাবুল হকের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বলেন, সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে আলমগীর সিদ্দিক (নাছির) (৩৮), আহসানুল কবির (বসির) (৪২), নুর আলম সিদ্দিক (বকুল) (৫৫), আনারুল সিদ্দিক (নাজিম) (৩২), আলম সিদ্দিক বকুলের ছেলে মো. অমিও (২২), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে কাওছার আলী (৪২) সাথে জমিজমা সংক্রান্তে পূর্বশত্রুতা ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আহসানুল কবির (বসির) আমার ছোট দেবর ইকরামুল হকের সাথে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে তর্কবিতর্ক করে। তারই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাঁরা বেআইনী জনতাবদ্ধে হাতে লোহার রড, শাবল, লাঠি সোটা, শাবল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অনধিকারভাবে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করে। তখন আমার শাশুড়ি রাহাতুন নেছা (৯৫) নিষেধ করিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তাঁরা আমার বসত ঘরের মধ্যে অনধিকারভাবে প্রবেশ করে ঘরের ভিতর বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্রাদী (ড্রেসিং টেবিল, খাট, শোভা, রাইসকুকার, প্যাচুলা, আলমারীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র) ভাংচুর করে প্রায় দেড় লক্ষাধীক টাকা ক্ষতি। আলমগীর সিদ্দিক নাছিরের নেতৃত্বে তারা আমার ঘরের মধ্যে থাকা স্টিলের আলমারির তালা ভেঙ্গে ড্রয়ারে থাকা জমি বিক্রির নগদ ৩ লাখ টাকা এবং ড্রয়ারে থাকা স্বর্ণলংকার যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকাসহ সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। একই সময় আমার চাচাতো দেবর শাহিন আলমের বাড়ীতেও অনধিকারে প্রবেশ করে ঘরের ভিতর ওয়াল সোকেস, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, টিভি, ফ্রিজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাংচুর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। টাকা ক্ষতিসাধন করে এবং আহসানুল কবির (বসির) আমার চাচাতো দেবরের দোকানের ব্যবসায়িক নগদ ২ লাখ টাকা এবং প্রায় ৩ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। তখন আমার চাচি শাশুড়ি পারভিনা বাধা প্রদান করতে গেলে গেলে নুর আলম সিদ্দিক (বকুল) তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে জখম করে এবং অমিও তার গলায় থাকা একভরি ওজনের স্বর্নের চেইন (মূল্য অনুমান ৬০ হাজার টাকা) এবং হাতে থাকা দুইটি স্বর্ণের বালা (মূল্য অনুমান ৪০ হাজার টাকা) জোর করে কেড়ে নেয়। তাঁরা আমাদের বাড়ীতে থাকা মহিলাদের মারপিট করে। আমরা চিৎকার করলে আশেপাশের এসে আমাদের রক্ষা করে। তখন তারা আমাদেরকে বিভিন্ন খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আমি মামলা দায়েরের আবেদন করেছি।

এদিকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য যাওয়া হয় নাসির-বশিরের বাসায়। বশিরের বাসায় গেলে বশিরের বাসায় কাউকে না পেয়ে কয়েকবার কড়ানাড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ি থেকে বকুল নামে এক ভদ্রলোকের স্ত্রী এসে জানান, তারা কেউ বাড়িতে নেই। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বকুলের স্ত্রী বশিরের স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসেন। বশিরের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে তারা মারধর করেছে। আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাকে আজকে রাজশাহী রেফার্ড করা হবে। বশিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তা রিসিভ হয়নি।

অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে উভয় পক্ষের মারামারি ও বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখান থেকে মৃত বাক্কার ছেলে নাসিরকে এবং সাহাজুল ইসলাম সেলিম ওরফে সেলু নামের দুইজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নাসির ও সেলুকে ১৫১ ধারায় আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাঁদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় নাছিমা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।