ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শুধুমাত্র পাঁচ খাতেই ১৭শ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা!

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলায় তীব্র গরমের প্রভাব সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • / ৯৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার ১০ উপজেলায় তীব্র গরমে কৃষি-মৎস্য-প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার পাঁচ খাতে ১৭শ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন এক সমীক্ষা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমীক্ষার মূল্যায়ন প্রকাশ করলে এ তথ্য উঠে আসে। গতকাল বুধবার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গাস্থ মালোপাড়া প্রশিক্ষণ সেন্টারের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি এ সমীক্ষার মূল্যায়ন প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তাপদাহের কবলে দূর্যোগে পতিত কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং মেহেরপুর এই চারটি জেলার কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সদর, মহেশপুর এবং মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় এ সমীক্ষা চালানো হয়। প্রত্যেক উপজেলায় ৫ জন করে এবং জেলা পর্যায়ের ৫ জন সরকারি সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কর্মকর্তাসহ ৫৫ জন মূখ্য তথ্যদাতা, অসংগঠিত ২০০ জন অংশগ্রহণকারী, প্রান্তিক পর্যায়ের নির্বাচিত ১০০ জন অংশীজন, দিনমজুর, রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, মৎস্যজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ছোট চাকরিজীবীসহ প্রান্তিক বিভিন্ন পেশার ৫৪৫ এবং সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ৫ জন এনজিও কর্মকর্তাসহ মোট প্রায় এক হাজার মানুষের আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি এ সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে পাঁচটি খাতে প্রায় ১৭৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ২ হাজার ২৮৪ টাকার বেশি ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত সমীক্ষা পাঠ করেন গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন মূখ্য গবেষক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মোহা. হাসান আলী, উপ-পরিচালক জহির রায়হান, উপদেষ্টা আব্দুস শুকুর, সহকারী পরিচালক কিতাব আলী, সিনিয়র সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ প্রমুখ।

সমীক্ষায় কৃষি-মৎস্য-প্রাণি সম্পদ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার ওপর তীব্র তাপদাহের প্রভাব মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে জানানো হয়, শুধুমাত্র কৃষিখাতে এই বোরো মৌসুমে ১২০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মূল্যায়ন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাপদাহ এবং বৃষ্টি না হওয়াতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানে বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে, এতে বিঘাপ্রতি গড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা হারে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ধানের দানা পুষ্ট না হওয়া ও সময়ের আগেই পেকে যাওয়ার ফলে বোরো ধান বিঘাপ্রতি ২ মণ ফলন কম হওয়ায় গড়ে দুই হাজার টাকা আয় কম হয়েছে। শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতে এ মৌসুমে ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন, ধানের দানা পুষ্ট না হওয়া এবং সময়ের আগেই পেকে যাওয়ার ফলে ধান কমে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন।

এ ক্ষেত্রে জেলাতে বোরো ধানের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার দরুণ আয় কম হবে ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। উভয় ক্ষেত্র মিলিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে নীট ক্ষতির পরিমাণ ১২০ কোটি ৭ লাখ ২৭ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া, ভুট্টার দানা সংখ্যা কম ও অপুষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। ভুট্টার ফলন বিঘা প্রতি গড়ে ৬ মণ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। জেলাতে মোট ৮৯ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার দরুণ কৃষকদের আয় কমেছে প্রায় ২২২ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ড্রাগন ফল বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ৫০০ কেজি উৎপাদন হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে জেলায় এক হাজার ৯৯৫ বিঘা জমিতে ৮ হাজার ১০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ড্রাগন ফল উৎপাদন হ্রাস পাবে প্রায় ৯৯৮ মেট্রিক টন, ফলে ক্ষতি হবে প্রায় ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মাল্টা ও কমলা বাগানের প্রায় ৭০% ছোট গুটি ফল নষ্ট হয়েছে বা ঝরে গেছে, ফলে প্রায় ৫০% উৎপাদন কম হবে। মাল্টা ও কমলা চাষে বিঘাপ্রতি গড়ে প্রায় দুই হাজার কেজি উৎপাদন কম হবে। এছাড়া কৃষিখাতে পানির অভাবে পুঁই শাক, ঢেঁড়স, করলা, ঝিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি গড়ে প্রায় ২০% উৎপাদন কম/ক্ষতি হয়েছে। পান গাছের মাথা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। পটল খেতের বিঘাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা আয় কম হবে।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় মৎস্য খাতেও ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। পুকুরের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তীব্র তাপদাহে মাছ ও মৎস্য সম্পদের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ও গুণগত মান পরিবর্তন হওয়ায় মাছের গ্রোথ কম হয়েছে, এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। একজন চাষী গত বছর ৫ লাখ টাকা লাভ করলেও এবারে তিনি লাভ করেছেন মাত্র ৪ লাখ টাকা। তাপদাহের কারণে পানি অতিরিক্ত গরম হওয়ায় রেণু পোনার মৃত্যুহারও বেড়েছে। রেণু পোনা উৎপাদন ৫০% এ নেমে এসেছে। এছাড়া প্রায় ৫০% জলাশয় পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে। মৎস্যজীবীদের আয় কমে গেছে। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে সপ্তাহে ৪-৫ দিন কাজ করতেন। তাপপ্রবাহের ফলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি কাজ পাননি। একদিনে যেখানে ৫০০ টাকা আয় করতো তাপদাহের সময় সেখানে সপ্তাহে আয় হয়েছে ৮০০ টাকা। মাছ চাষীরা মন্তব্য করেছেন যে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০% এর অধিক মাছ উৎপাদন কমে যাবে। তাতে শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন কম মাছ উৎপাদন হবে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা।

তীব্র গরমে এ অঞ্চলের প্রাণিসম্পদ খাতেও ক্ষতি হয়েছে। তীব্র তাপদাহের মাস এপ্রিলে দুধ উৎপাদন শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই প্রায় এক হাজার ৮৩৮ মেট্রিক টন কম হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই মাংস উৎপাদন কমে গেছে গড়ে প্রায় ১৭.৫% অর্থাৎ এপ্রিল মাসে মাংস উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় এক হাজার ২২৫ মেট্রিক টন। যার ফলে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮১ কোটি ৭০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে, চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই এপ্রিল’২৪ মাসে ডিম উৎপাদন কমে গেছে গড়ে প্রায় ২২.৫% অর্থাৎ এপ্রিলে ডিম উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ পিস। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বোপরি, শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপদাহের কারণে প্রাণিসম্পদ খাতে খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মোট ৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

পরিবেশের উপরও তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে। তীব্র তাপদাহ সাথে বৃষ্টি না হওয়ায় দেখা দিয়েছে খরা, বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ফসলে। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা। সেচ খরচ বেশি হচ্ছে, লেবার ও কীটনাশকের ব্যয় বাড়ছে। ধানের ওপর প্রভাব না পড়লেও তীব্র তাপদাহের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পাট বপন করতে পারছে না। আম, লিচু, পেয়ারার গুটি ব্যাপকভাবে ঝরে গেছে। তীব্র তাপে করলা, শসা ও কচুসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির গোড়া ও আগা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুল ও ফল ঝরে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে অতি উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ফসলের উৎপাদন ৩০% থেকে ৪০% কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত দিয়েছেন। তীব্র তাপমাত্রার কারণে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছে না অর্ধেকের বেশি নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে এর মধ্যে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ তাদের ডিজিটাল এলার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গায় ৭৬টি বন উজাড়ের সতর্কতা রিপোর্ট করে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে জীবন-জীবিকা খাতে। সমীক্ষার জন্য নির্বাচিত চারটি জেলার মোট জনসংখ্যা ৬০ লাখ ৯৬ হাজার ১১২ (নারী- ৩০,৯৬,১৩৭, পুরুষ- ২৯,৯৯,৯৭৫ জন) এর মধ্যে মোট কর্মক্ষম মানুষ ২৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮০ জন। সেই হিসেবে চার জেলায় তীব্র তাবদাহের কারণে কর্মঘণ্টা লসের ফলে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৫ টাকা। আর ২০ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১২২৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৪ টাকা। কর্মঘণ্টু কমার সাথে আয়ও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে দিনমজুরী করে ৪০০ টাকা আয় হতো এখন ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। ভ্যান অটোতে অত্যাধিক তাপের কারণে যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে এখানেও আয় কমেছে ৩০%-৪০%। সাধারণ মানুষের আয় কমার কারণে নিত্যপণ্যের চাহিদাও কমে যাওয়ায় বেচাকেনাতেও প্রভাব পড়েছে। ফলে ছোট ব্যবসাতেও আয় কমেছে ৩০% এর বেশি। সমীক্ষায় ৫৪৫ জন সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তীব্র তাপদাহ তাদের জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলেছে কি না, ৯৯% উত্তরদাতা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন গড়ে তাদের প্রতিদিন ২৭৭ টাকা আয় কম হয়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে পুনরায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাপদাহ তাদের প্রতিদিনের কর্মঘণ্টায় কোনো ঘাটতি হয়েছে কি না, তারা বলেছে আগে একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা কাজ করতো, তাপদাহের সময় কমে গিয়ে গড়ে ৬ ঘণ্টা কাজ করেছে যার ফলে তাদের গড়ে প্রতিদিন ২৩৪ টাকা আয়ের ঘাটতি হয়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৮৭ ভাগ মনে করে যে, তাদের সামাজিক রীতিনীতি পালনে তীব্র তাপদাহ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়েভ ফাউন্ডেশন তীব্র তাপপ্রবাহের সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশও তুলে ধরে। তাঁরা জানায়, খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন/প্রসারে চাষীদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে পরিবেশ বান্ধব কৃষি চর্চার অংশ হিসেবে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করে জৈবসার ও সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা। জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল ব্যবস্থাপনাসহ কৃষকদের পৃথক প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জন্য সরকারি কৃষি নীতি সংস্কার করা। সবজি ও ফল সংরক্ষণের জন্য সরকারি/বেসরকারি অংশীদারিত্বে হিমাগার স্থাপন করা। কৃষি সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস্-এর ব্যবহার ও সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণ। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে ‘কৃষিমোর্চা’ গঠন ও কার্যকর করা। মৌসুমি প্রভাব বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক কার্যকর পরিকল্পনা করা ও সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিল, হাওড়, বাওড়ে পানির ব্যবস্থা করতে সরকারি উদ্যোগে সোলার পাম্পের ব্যবস্থা করা, সরকারি/বেসরকারি পুকুরগুলো ভালোভাবে খনন করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশ বান্ধব ট্রেডের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রম প্রণয়ন এবং সফট লোনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি সরদার আল আমিনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শুধুমাত্র পাঁচ খাতেই ১৭শ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা!

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলায় তীব্র গরমের প্রভাব সমীক্ষা

আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার ১০ উপজেলায় তীব্র গরমে কৃষি-মৎস্য-প্রাণিসম্পদ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার পাঁচ খাতে ১৭শ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন এক সমীক্ষা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমীক্ষার মূল্যায়ন প্রকাশ করলে এ তথ্য উঠে আসে। গতকাল বুধবার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গাস্থ মালোপাড়া প্রশিক্ষণ সেন্টারের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি এ সমীক্ষার মূল্যায়ন প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তাপদাহের কবলে দূর্যোগে পতিত কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ এবং মেহেরপুর এই চারটি জেলার কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর, আলমডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সদর, মহেশপুর এবং মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় এ সমীক্ষা চালানো হয়। প্রত্যেক উপজেলায় ৫ জন করে এবং জেলা পর্যায়ের ৫ জন সরকারি সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কর্মকর্তাসহ ৫৫ জন মূখ্য তথ্যদাতা, অসংগঠিত ২০০ জন অংশগ্রহণকারী, প্রান্তিক পর্যায়ের নির্বাচিত ১০০ জন অংশীজন, দিনমজুর, রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, মৎস্যজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ছোট চাকরিজীবীসহ প্রান্তিক বিভিন্ন পেশার ৫৪৫ এবং সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ৫ জন এনজিও কর্মকর্তাসহ মোট প্রায় এক হাজার মানুষের আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি এ সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে পাঁচটি খাতে প্রায় ১৭৮৩ কোটি ৬৯ লাখ ২ হাজার ২৮৪ টাকার বেশি ক্ষতির পরিমাণ দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত সমীক্ষা পাঠ করেন গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন মূখ্য গবেষক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মোহা. হাসান আলী, উপ-পরিচালক জহির রায়হান, উপদেষ্টা আব্দুস শুকুর, সহকারী পরিচালক কিতাব আলী, সিনিয়র সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ প্রমুখ।

সমীক্ষায় কৃষি-মৎস্য-প্রাণি সম্পদ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার ওপর তীব্র তাপদাহের প্রভাব মূল্যায়ন করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে জানানো হয়, শুধুমাত্র কৃষিখাতে এই বোরো মৌসুমে ১২০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মূল্যায়ন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাপদাহ এবং বৃষ্টি না হওয়াতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানে বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে, এতে বিঘাপ্রতি গড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা হারে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ধানের দানা পুষ্ট না হওয়া ও সময়ের আগেই পেকে যাওয়ার ফলে বোরো ধান বিঘাপ্রতি ২ মণ ফলন কম হওয়ায় গড়ে দুই হাজার টাকা আয় কম হয়েছে। শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতে এ মৌসুমে ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন, ধানের দানা পুষ্ট না হওয়া এবং সময়ের আগেই পেকে যাওয়ার ফলে ধান কমে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন।

এ ক্ষেত্রে জেলাতে বোরো ধানের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার দরুণ আয় কম হবে ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। উভয় ক্ষেত্র মিলিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে নীট ক্ষতির পরিমাণ ১২০ কোটি ৭ লাখ ২৭ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া, ভুট্টার দানা সংখ্যা কম ও অপুষ্ট হওয়ায় উৎপাদন কম হচ্ছে। ভুট্টার ফলন বিঘা প্রতি গড়ে ৬ মণ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। জেলাতে মোট ৮৯ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার দরুণ কৃষকদের আয় কমেছে প্রায় ২২২ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ড্রাগন ফল বিঘা প্রতি গড়ে প্রায় ৫০০ কেজি উৎপাদন হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে জেলায় এক হাজার ৯৯৫ বিঘা জমিতে ৮ হাজার ১০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ড্রাগন ফল উৎপাদন হ্রাস পাবে প্রায় ৯৯৮ মেট্রিক টন, ফলে ক্ষতি হবে প্রায় ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। মাল্টা ও কমলা বাগানের প্রায় ৭০% ছোট গুটি ফল নষ্ট হয়েছে বা ঝরে গেছে, ফলে প্রায় ৫০% উৎপাদন কম হবে। মাল্টা ও কমলা চাষে বিঘাপ্রতি গড়ে প্রায় দুই হাজার কেজি উৎপাদন কম হবে। এছাড়া কৃষিখাতে পানির অভাবে পুঁই শাক, ঢেঁড়স, করলা, ঝিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি গড়ে প্রায় ২০% উৎপাদন কম/ক্ষতি হয়েছে। পান গাছের মাথা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলে বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। পটল খেতের বিঘাপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা আয় কম হবে।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় মৎস্য খাতেও ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। পুকুরের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তীব্র তাপদাহে মাছ ও মৎস্য সম্পদের জন্য প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ ও গুণগত মান পরিবর্তন হওয়ায় মাছের গ্রোথ কম হয়েছে, এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। একজন চাষী গত বছর ৫ লাখ টাকা লাভ করলেও এবারে তিনি লাভ করেছেন মাত্র ৪ লাখ টাকা। তাপদাহের কারণে পানি অতিরিক্ত গরম হওয়ায় রেণু পোনার মৃত্যুহারও বেড়েছে। রেণু পোনা উৎপাদন ৫০% এ নেমে এসেছে। এছাড়া প্রায় ৫০% জলাশয় পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে। মৎস্যজীবীদের আয় কমে গেছে। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে সপ্তাহে ৪-৫ দিন কাজ করতেন। তাপপ্রবাহের ফলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি কাজ পাননি। একদিনে যেখানে ৫০০ টাকা আয় করতো তাপদাহের সময় সেখানে সপ্তাহে আয় হয়েছে ৮০০ টাকা। মাছ চাষীরা মন্তব্য করেছেন যে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০% এর অধিক মাছ উৎপাদন কমে যাবে। তাতে শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন কম মাছ উৎপাদন হবে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯৭ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা।

তীব্র গরমে এ অঞ্চলের প্রাণিসম্পদ খাতেও ক্ষতি হয়েছে। তীব্র তাপদাহের মাস এপ্রিলে দুধ উৎপাদন শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই প্রায় এক হাজার ৮৩৮ মেট্রিক টন কম হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই মাংস উৎপাদন কমে গেছে গড়ে প্রায় ১৭.৫% অর্থাৎ এপ্রিল মাসে মাংস উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় এক হাজার ২২৫ মেট্রিক টন। যার ফলে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮১ কোটি ৭০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুরূপভাবে, চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই এপ্রিল’২৪ মাসে ডিম উৎপাদন কমে গেছে গড়ে প্রায় ২২.৫% অর্থাৎ এপ্রিলে ডিম উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ পিস। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সর্বোপরি, শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপদাহের কারণে প্রাণিসম্পদ খাতে খামারীদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে মোট ৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

পরিবেশের উপরও তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে। তীব্র তাপদাহ সাথে বৃষ্টি না হওয়ায় দেখা দিয়েছে খরা, বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ফসলে। এ অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা। সেচ খরচ বেশি হচ্ছে, লেবার ও কীটনাশকের ব্যয় বাড়ছে। ধানের ওপর প্রভাব না পড়লেও তীব্র তাপদাহের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পাট বপন করতে পারছে না। আম, লিচু, পেয়ারার গুটি ব্যাপকভাবে ঝরে গেছে। তীব্র তাপে করলা, শসা ও কচুসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির গোড়া ও আগা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুল ও ফল ঝরে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে অতি উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ফসলের উৎপাদন ৩০% থেকে ৪০% কমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত দিয়েছেন। তীব্র তাপমাত্রার কারণে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছে না অর্ধেকের বেশি নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে। এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে এর মধ্যে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ তাদের ডিজিটাল এলার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গায় ৭৬টি বন উজাড়ের সতর্কতা রিপোর্ট করে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে জীবন-জীবিকা খাতে। সমীক্ষার জন্য নির্বাচিত চারটি জেলার মোট জনসংখ্যা ৬০ লাখ ৯৬ হাজার ১১২ (নারী- ৩০,৯৬,১৩৭, পুরুষ- ২৯,৯৯,৯৭৫ জন) এর মধ্যে মোট কর্মক্ষম মানুষ ২৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮০ জন। সেই হিসেবে চার জেলায় তীব্র তাবদাহের কারণে কর্মঘণ্টা লসের ফলে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬১ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৫ টাকা। আর ২০ দিনে ক্ষতি হয়েছে ১২২৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৪ টাকা। কর্মঘণ্টু কমার সাথে আয়ও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আগে দিনমজুরী করে ৪০০ টাকা আয় হতো এখন ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। ভ্যান অটোতে অত্যাধিক তাপের কারণে যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে এখানেও আয় কমেছে ৩০%-৪০%। সাধারণ মানুষের আয় কমার কারণে নিত্যপণ্যের চাহিদাও কমে যাওয়ায় বেচাকেনাতেও প্রভাব পড়েছে। ফলে ছোট ব্যবসাতেও আয় কমেছে ৩০% এর বেশি। সমীক্ষায় ৫৪৫ জন সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তীব্র তাপদাহ তাদের জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলেছে কি না, ৯৯% উত্তরদাতা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন গড়ে তাদের প্রতিদিন ২৭৭ টাকা আয় কম হয়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে পুনরায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাপদাহ তাদের প্রতিদিনের কর্মঘণ্টায় কোনো ঘাটতি হয়েছে কি না, তারা বলেছে আগে একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা কাজ করতো, তাপদাহের সময় কমে গিয়ে গড়ে ৬ ঘণ্টা কাজ করেছে যার ফলে তাদের গড়ে প্রতিদিন ২৩৪ টাকা আয়ের ঘাটতি হয়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৮৭ ভাগ মনে করে যে, তাদের সামাজিক রীতিনীতি পালনে তীব্র তাপদাহ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়েভ ফাউন্ডেশন তীব্র তাপপ্রবাহের সমস্যা সমাধানে কিছু সুপারিশও তুলে ধরে। তাঁরা জানায়, খরা সহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন/প্রসারে চাষীদের কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে পরিবেশ বান্ধব কৃষি চর্চার অংশ হিসেবে অতিমাত্রায় কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করে জৈবসার ও সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা। জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল ব্যবস্থাপনাসহ কৃষকদের পৃথক প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জন্য সরকারি কৃষি নীতি সংস্কার করা। সবজি ও ফল সংরক্ষণের জন্য সরকারি/বেসরকারি অংশীদারিত্বে হিমাগার স্থাপন করা। কৃষি সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস্-এর ব্যবহার ও সেখান থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণ। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে ‘কৃষিমোর্চা’ গঠন ও কার্যকর করা। মৌসুমি প্রভাব বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃক কার্যকর পরিকল্পনা করা ও সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিল, হাওড়, বাওড়ে পানির ব্যবস্থা করতে সরকারি উদ্যোগে সোলার পাম্পের ব্যবস্থা করা, সরকারি/বেসরকারি পুকুরগুলো ভালোভাবে খনন করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশ বান্ধব ট্রেডের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা উন্নয়ন কার্যক্রম প্রণয়ন এবং সফট লোনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি সরদার আল আমিনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।