ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

ভক্তদের অশ্রুসজল চোখে দেবী দুর্গার বিদায়

সমীকরণ প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুন্দর আগামী কামনা ও ভক্ত-বিশ্বাসীদের অশ্রুসজল চোখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। এর আগে গত শনিবার দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন করা হয়। এদিকে, এ বছর দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ধরেই ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ।
চুয়াডাঙ্গায় উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব, যার সমাপ্তি ঘটেছে গতকাল বিজয়া দশমীতে। ঢাকের বাদ্য এবং কাঁসর ধ্বনিতে পুরো শহর যেন উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। এবারের বিসর্জন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কঠোর নজরদারিতে ছিল মন্দির ও বিসর্জনের ঘাটগুলো। ফলে জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই শারদীয় দুর্গোৎসব। শহরতলীর দৌলাতদিয়ার দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দির, বড় বাজার দুর্গা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির থেকে প্রতিমাগুলো শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাথাভাঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেন পূজা কমিটি এবং রাজনৈতিক দলসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা, যাতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সকলে ঢাক ও কাঁসরের শব্দে নেচে-গেয়ে আনন্দে শহর প্রদক্ষিণ শেষে মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিচে একত্রিত হয় এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা ব্রিজ ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে নারী-পুরুষ সকলে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর মোট ১০৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং প্রতিটি মণ্ডপে পূজার আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে। দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, ‘মায়ের কাছে প্রার্থনা, সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেন আমরা সকলে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারি। পূজা উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’ তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে জেলার সবগুলো মন্দিরের নিরাপত্তায় গুরুত্ব ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন মন্দিরে নিয়োজিত ছিলেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হওয়ায় সবার মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
গতকাল বিজয়া দশমীর দিন চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদীতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এর আগে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজা-অর্চনা এবং সিঁদুর খেলার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে প্রতিমাগুলো নিজ নিজ মণ্ডপ থেকে নদীতে এনে নৌকায় তোলা হয়। ঢাক-ঢোল, কাঁসা এবং মাইকের গানে নদীর দুই পাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এ নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করেন। সন্ধ্যার দিকে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, যেখানে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবীকে নাচ-গানের মাধ্যমে হাসিমুখে বিদায় জানানো হয়।
দেবী দুর্গার বিসর্জনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন সার্বিক মনিটরিং করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ও সাদা পোশাকের সদস্যরা মোতায়েন ছিল সর্বত্র। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। দুর্গোৎসবের শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা নিশ্চিত করেছে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

এদিকে, বিজয়া দশমীর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূজা মন্দিরের প্রতিমা নবগঙ্গা নদীতে এবং সরোজগঞ্জ কাছারিপাড়া পূজা মন্দিরের প্রতিমা নবচিত্র নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। যেখানে সৃষ্টি হয় নয়নাভিরাম দৃশ্য। এই দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বামীগৃহ কৈলাসে ফিরে যান। মণ্ডপে মণ্ডপে তাই বিষাদের ছায়া নেমে আসে। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বাজনায় বিদায়ের সুর ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি, শুদ্ধ স্বরে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সারাদিন ভক্তরা আনন্দে মেতে উঠেন। দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দানের মাধ্যমে প্রার্থনা করেন যেন সকলের জীবন সুন্দর ও সুস্থ হয়। এরপর আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার রথতলা দুর্গামন্দির, ক্যানেলপাড়া দুর্গামন্দির, বাবুপাড়া, স্টেশনপাড়া, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ঠাকুরপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, গোবিন্দপুর হরিতলা, আনন্দধাম, দাসপাড়া এবং কালিদাশপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমা কুমার নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন দশভুজা দেবী দুর্গা কন্যারূপে ধরায় আসেন এবং বিসর্জনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য তাঁকে বিদায় জানানো হয়। তাঁর আগমন ও প্রস্থানের মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব পালিত হয়। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর দেবী দুর্গার এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) গমন করেন।
গতকাল বিজয়া দশমীতে সন্ধ্যার পর থেকেই পৌর এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে কুমার নদে পৌঁছে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের আগে কুমার নদের পাড়ে বিশাল মেলা বসে, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ বিকিকিনি করতে আসেন। নারী, পুরুষ, যুবক-যুবতীরা দল বেঁধে পূজা দেখতে ভিড় জমায়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএএনও) শেখ মেহেদী ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসু, ওসি শেখ গণি মিয়া এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সদস্যরাসহ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও আলমডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ডা. অমল কুমার বিশ্বাস এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। রাত ৭টার পর থেকে একে একে সকল মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পৌর এলাকার প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে কালিদাশপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমাও এখানে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই দুর্গোৎসব আনন্দ ও বেদনার মধ্যদিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জনে সম্পন্ন করেছে দামুড়হুদা উপজেলার ভক্তবৃন্দরা। গতকাল সন্ধ্যার আগেই দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদী, ভৈরব নদী ও রায়সার বিলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসব।
উপজেলা সদরের চিৎলা, কার্পাসডাঙ্গা, জুড়ানপুর, নতিপোতা, কুড়ালগাছি, হাউলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরসহ আশপাশের মণ্ডপগুলোতে গতকাল সকাল থেকেই প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পুরো উৎসবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিসর্জন উৎসব নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর করতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলো। এবার দামুড়হুদা উপজেলায় ২২টির মধ্যে ২০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক বাসুদেব হালদার বলেন, ‘আমরা খুব সুন্দরভাবে এবারের দুর্গোৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করেছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলসহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর বলেন, ‘প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যদিয়ে সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কঠোর নজরদারির মধ্যদিয়ে আমার উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনতে পাইনি।’
এদিকে, চার দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল পঞ্চম দিনে জীবননগর উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মর্ত্যলোক থেকে বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে। এদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে জীবননগর পৌর শহরের ভৈরব নদী এবং পদ্মগঙ্গা বিলে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। বিসর্জন উপলক্ষে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার সদস্যরা মোতায়েন ছিল।
এর আগে বেলা ৩টা থেকে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে শঙ্খ ও উলুধ্বনি, ঢাক-ঢোলের ঐতিহ্যবাহী বাজনা এবং দেবী বন্দনার গানের সঙ্গে শোভাযাত্রা সহকারে পূণ্যার্থীরা প্রতিমা নিয়ে ভৈরব নদী ও পদ্মগঙ্গা বিলের তীরে আসেন। জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদ শত শত মানুষের শোভাযাত্রা নিয়ে এই বিসর্জন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
অন্যদিকে, মেহেরপুরের ভৈরব নদে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হয়েছে। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন মণ্ডপে সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আরতি, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, বকুলতলা পূজা মন্দির, শ্রী শ্রী হরিভক্তি প্রদায়ীনি পূজামণ্ডপ, নায়েববাড়ি পূজামণ্ডপ এবং মালোপাড়া পূজামণ্ডপের প্রতিমাগুলো ভৈরব নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
শত শত মানুষ ভৈরব নদের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জনের এই দৃশ্য উপভোগ করেন। এর আগে দুপুরের পর থেকে মেহেরপুর শহর ও আশেপাশের এলাকা থেকে প্রতিমাগুলো নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। ঢাকের তালে তালে প্রতিমাগুলো শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভৈরব নদের তীরে নেওয়া হয়।

মুজিবনগরে শান্তিপূর্ণভাবে সাতটি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো মুজিবনগর উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পূজামণ্ডপের প্রতিমা মুজিবনগর ভৈরব নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই প্রতিমা বিসর্জনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করেন। সাথে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাশরুবা আলম, মুজিবনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ শফি, সহ-সভাপতি শাকিল রেজা, যুগ্ম সম্পাদক সোহাগ মন্ডল, সংগঠনিক সম্পাদক হাসান মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক ইনক্লাবের সাংবাদিক ফিরোজ রহমান, বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বাবুল মল্লিক, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশগণ। প্রতিমা বিসর্জনে এলাকাবাসী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করে।
এদিকে, ঝিনাইদহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এ বছর জেলায় মোট ৪৩৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা উদ্যাপন করা হয়েছে। জেলা শহরের চাকলাপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, মহিষাকুণ্ডু, ষাটবাড়িয়া, কাঠালবাগান পাড়া, মথুরাপুরসহ অন্যান্য মণ্ডপগুলোতে উৎসবের আমেজ ছিল বিরাজমান।

পূজারী ও দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জেলা শহর মুখরিত হয়ে ওঠে। রঙের খেলায় মেতে উঠেছিল শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীরা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নির্বাহী সদস্য চন্দন বসু মুক্ত জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১০৩টি, হরিণাক্ণ্ডুু উপজেলায় ২৭টি, শৈলকুপা উপজেলায় ১২৩টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯৯টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪১টি ও মহেশপুরে ৪২টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হয়েছে।
কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। বিসর্জনের সময় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পূজারী নিতায় কুমার বিশ^াস বলেন, ‘প্রতি বছর শরতে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যলোকে কন্যারূপে আসেন দেবী দুর্গা।’
এদিকে, দুর্গাপূজার শেষ দিনে নারীরা মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। শহরের বারোয়ারি, চাকলাপাড়া, পবহাটির বাবুপাড়া, হামদহসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে এই সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পূজা অর্চনার পর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এরপর হিন্দু বিবাহিত নারীরা দেবীর পায়ে লাল টকটকে সিঁদুর নিবেদন করেন এবং সেই সিঁদুরের আঁচড় লাগিয়ে একে অপরকে আগামী দিনের জন্য শুভকামনা করেন। পূজা দিতে আসা সীমা রানী বলেন, ‘শাস্ত্রমতে দেবীকে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই, তাই বিজয় দশমীর দিনে দেবীকে বিদায় জানাতে মণ্ডপে হাজির হয়েছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

ভক্তদের অশ্রুসজল চোখে দেবী দুর্গার বিদায়

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুন্দর আগামী কামনা ও ভক্ত-বিশ্বাসীদের অশ্রুসজল চোখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে গতকাল শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। এর আগে গত শনিবার দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন করা হয়। এদিকে, এ বছর দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ধরেই ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ।
চুয়াডাঙ্গায় উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব, যার সমাপ্তি ঘটেছে গতকাল বিজয়া দশমীতে। ঢাকের বাদ্য এবং কাঁসর ধ্বনিতে পুরো শহর যেন উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। এবারের বিসর্জন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কঠোর নজরদারিতে ছিল মন্দির ও বিসর্জনের ঘাটগুলো। ফলে জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই শারদীয় দুর্গোৎসব। শহরতলীর দৌলাতদিয়ার দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দির, বড় বাজার দুর্গা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির থেকে প্রতিমাগুলো শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাথাভাঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেন পূজা কমিটি এবং রাজনৈতিক দলসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা, যাতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সকলে ঢাক ও কাঁসরের শব্দে নেচে-গেয়ে আনন্দে শহর প্রদক্ষিণ শেষে মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিচে একত্রিত হয় এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা ব্রিজ ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনকে কেন্দ্র করে নারী-পুরুষ সকলে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর মোট ১০৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং প্রতিটি মণ্ডপে পূজার আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে। দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া বারোয়ারী দুর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ অঞ্জন সাহা আবির বলেন, ‘মায়ের কাছে প্রার্থনা, সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যেন আমরা সকলে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারি। পূজা উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’ তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন এবং দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে জেলার সবগুলো মন্দিরের নিরাপত্তায় গুরুত্ব ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন মন্দিরে নিয়োজিত ছিলেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হওয়ায় সবার মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
গতকাল বিজয়া দশমীর দিন চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদীতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এর আগে সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজা-অর্চনা এবং সিঁদুর খেলার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান। বেলা সাড়ে ৩টা থেকে প্রতিমাগুলো নিজ নিজ মণ্ডপ থেকে নদীতে এনে নৌকায় তোলা হয়। ঢাক-ঢোল, কাঁসা এবং মাইকের গানে নদীর দুই পাড় মুখরিত হয়ে ওঠে। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে এ নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করেন। সন্ধ্যার দিকে নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, যেখানে শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবীকে নাচ-গানের মাধ্যমে হাসিমুখে বিদায় জানানো হয়।
দেবী দুর্গার বিসর্জনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন সার্বিক মনিটরিং করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ও সাদা পোশাকের সদস্যরা মোতায়েন ছিল সর্বত্র। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। দুর্গোৎসবের শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা নিশ্চিত করেছে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।

এদিকে, বিজয়া দশমীর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূজা মন্দিরের প্রতিমা নবগঙ্গা নদীতে এবং সরোজগঞ্জ কাছারিপাড়া পূজা মন্দিরের প্রতিমা নবচিত্র নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। যেখানে সৃষ্টি হয় নয়নাভিরাম দৃশ্য। এই দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বামীগৃহ কৈলাসে ফিরে যান। মণ্ডপে মণ্ডপে তাই বিষাদের ছায়া নেমে আসে। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাক-ঢোলের বাজনায় বিদায়ের সুর ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য, গান, কবিতা আবৃত্তি, শুদ্ধ স্বরে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সারাদিন ভক্তরা আনন্দে মেতে উঠেন। দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দানের মাধ্যমে প্রার্থনা করেন যেন সকলের জীবন সুন্দর ও সুস্থ হয়। এরপর আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার রথতলা দুর্গামন্দির, ক্যানেলপাড়া দুর্গামন্দির, বাবুপাড়া, স্টেশনপাড়া, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ঠাকুরপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, গোবিন্দপুর হরিতলা, আনন্দধাম, দাসপাড়া এবং কালিদাশপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমা কুমার নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন দশভুজা দেবী দুর্গা কন্যারূপে ধরায় আসেন এবং বিসর্জনের মাধ্যমে এক বছরের জন্য তাঁকে বিদায় জানানো হয়। তাঁর আগমন ও প্রস্থানের মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব পালিত হয়। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর দেবী দুর্গার এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) গমন করেন।
গতকাল বিজয়া দশমীতে সন্ধ্যার পর থেকেই পৌর এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে কুমার নদে পৌঁছে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের আগে কুমার নদের পাড়ে বিশাল মেলা বসে, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ বিকিকিনি করতে আসেন। নারী, পুরুষ, যুবক-যুবতীরা দল বেঁধে পূজা দেখতে ভিড় জমায়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএএনও) শেখ মেহেদী ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসু, ওসি শেখ গণি মিয়া এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ, আনসার, বিজিবি সদস্যরাসহ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও আলমডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ডা. অমল কুমার বিশ্বাস এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হয়েছে। রাত ৭টার পর থেকে একে একে সকল মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পৌর এলাকার প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে কালিদাশপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমাও এখানে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই দুর্গোৎসব আনন্দ ও বেদনার মধ্যদিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জনে সম্পন্ন করেছে দামুড়হুদা উপজেলার ভক্তবৃন্দরা। গতকাল সন্ধ্যার আগেই দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদী, ভৈরব নদী ও রায়সার বিলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসব।
উপজেলা সদরের চিৎলা, কার্পাসডাঙ্গা, জুড়ানপুর, নতিপোতা, কুড়ালগাছি, হাউলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরসহ আশপাশের মণ্ডপগুলোতে গতকাল সকাল থেকেই প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। পুরো উৎসবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিসর্জন উৎসব নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর করতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসার, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলো। এবার দামুড়হুদা উপজেলায় ২২টির মধ্যে ২০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক বাসুদেব হালদার বলেন, ‘আমরা খুব সুন্দরভাবে এবারের দুর্গোৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করেছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলসহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবীর বলেন, ‘প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যদিয়ে সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কঠোর নজরদারির মধ্যদিয়ে আমার উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনতে পাইনি।’
এদিকে, চার দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল পঞ্চম দিনে জীবননগর উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মর্ত্যলোক থেকে বিদায় জানান দেবী দুর্গাকে। এদিন বিকেল সাড়ে চারটা থেকে জীবননগর পৌর শহরের ভৈরব নদী এবং পদ্মগঙ্গা বিলে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। বিসর্জন উপলক্ষে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং আনসার সদস্যরা মোতায়েন ছিল।
এর আগে বেলা ৩টা থেকে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে শঙ্খ ও উলুধ্বনি, ঢাক-ঢোলের ঐতিহ্যবাহী বাজনা এবং দেবী বন্দনার গানের সঙ্গে শোভাযাত্রা সহকারে পূণ্যার্থীরা প্রতিমা নিয়ে ভৈরব নদী ও পদ্মগঙ্গা বিলের তীরে আসেন। জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদ শত শত মানুষের শোভাযাত্রা নিয়ে এই বিসর্জন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
অন্যদিকে, মেহেরপুরের ভৈরব নদে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হয়েছে। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন মণ্ডপে সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আরতি, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর মেহেরপুর শহরের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, বকুলতলা পূজা মন্দির, শ্রী শ্রী হরিভক্তি প্রদায়ীনি পূজামণ্ডপ, নায়েববাড়ি পূজামণ্ডপ এবং মালোপাড়া পূজামণ্ডপের প্রতিমাগুলো ভৈরব নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
শত শত মানুষ ভৈরব নদের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জনের এই দৃশ্য উপভোগ করেন। এর আগে দুপুরের পর থেকে মেহেরপুর শহর ও আশেপাশের এলাকা থেকে প্রতিমাগুলো নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়। ঢাকের তালে তালে প্রতিমাগুলো শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভৈরব নদের তীরে নেওয়া হয়।

মুজিবনগরে শান্তিপূর্ণভাবে সাতটি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো মুজিবনগর উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পূজামণ্ডপের প্রতিমা মুজিবনগর ভৈরব নদে বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই প্রতিমা বিসর্জনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করেন। সাথে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাশরুবা আলম, মুজিবনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ শফি, সহ-সভাপতি শাকিল রেজা, যুগ্ম সম্পাদক সোহাগ মন্ডল, সংগঠনিক সম্পাদক হাসান মোস্তাফিজুর রহমান, দৈনিক ইনক্লাবের সাংবাদিক ফিরোজ রহমান, বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বাবুল মল্লিক, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্য ও গ্রাম পুলিশগণ। প্রতিমা বিসর্জনে এলাকাবাসী ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করে।
এদিকে, ঝিনাইদহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। এ বছর জেলায় মোট ৪৩৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা উদ্যাপন করা হয়েছে। জেলা শহরের চাকলাপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, মহিষাকুণ্ডু, ষাটবাড়িয়া, কাঠালবাগান পাড়া, মথুরাপুরসহ অন্যান্য মণ্ডপগুলোতে উৎসবের আমেজ ছিল বিরাজমান।

পূজারী ও দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জেলা শহর মুখরিত হয়ে ওঠে। রঙের খেলায় মেতে উঠেছিল শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীরা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নির্বাহী সদস্য চন্দন বসু মুক্ত জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১০৩টি, হরিণাক্ণ্ডুু উপজেলায় ২৭টি, শৈলকুপা উপজেলায় ১২৩টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯৯টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪১টি ও মহেশপুরে ৪২টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হয়েছে।
কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শেখ মামুনুর রশিদ জানান, প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। বিসর্জনের সময় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পূজারী নিতায় কুমার বিশ^াস বলেন, ‘প্রতি বছর শরতে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যলোকে কন্যারূপে আসেন দেবী দুর্গা।’
এদিকে, দুর্গাপূজার শেষ দিনে নারীরা মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। শহরের বারোয়ারি, চাকলাপাড়া, পবহাটির বাবুপাড়া, হামদহসহ বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে এই সিঁদুর খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পূজা অর্চনার পর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এরপর হিন্দু বিবাহিত নারীরা দেবীর পায়ে লাল টকটকে সিঁদুর নিবেদন করেন এবং সেই সিঁদুরের আঁচড় লাগিয়ে একে অপরকে আগামী দিনের জন্য শুভকামনা করেন। পূজা দিতে আসা সীমা রানী বলেন, ‘শাস্ত্রমতে দেবীকে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই, তাই বিজয় দশমীর দিনে দেবীকে বিদায় জানাতে মণ্ডপে হাজির হয়েছি।’