ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতির যমজ বাঁচ্চা নিয়ে রহস্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

‘পরপর তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে আমার মেয়ের যমজ বাঁচ্চা হবে বলে জানতে পারি। শনিবার সকালে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে আজ (গতকাল রোববার) সকাল নয়টায় হাসপাতালে সিজার করে একটি বাচ্চা হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানায়। আল্ট্রাসনোর রিপোর্টে তিনবারই কি ভুল হয়? আমার মেয়ের আর একটি বাচ্চার কি হলো?। আমি জানি না একটি বাঁচ্চা হয়েছে নাকি দুটি, আমি সঠিক বিচার চাই।’ গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে মেয়ের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে এমনই অভিযোগ করছিলেন রজনী (২৩) নামের এক প্রসূতির পিতা নবীর হোসেন।

প্রসূতি রজনীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৬-১৭ দিন পূর্বে সন্তানসম্ভবা রজনীর পরিবারের সদস্যরা জীবননগর উপজেলার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাঁর আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট করান। এসময় আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে জানা যায় রজনীর যমজ বাঁচ্চা হবে। এরই মধ্যে গত শনিবার রজনীর প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালে ভর্তি করেন। গতকাল সকালে হাপসাতালের অপারেশন থিয়েটারে প্রসূতি রজনীর সিজার করেন হাপসাতালের গাইনি বিশষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন। সিজারের পর জানানো হয় যমজ নয়, প্রসূতির একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। তাঁরা যমজ বাঁচ্চার বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেশন থিয়েটারের কর্তব্যরত নার্স ও সহকারীরা জানান, দুটি নয়, প্রসূতির একটি বাঁচ্চা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই প্রসূতির পরিবারের সদস্যরা সদর হাপসাতালের অপারেশন থিয়েটারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে বাঁচ্চা লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করতে থাকেন। এ নিয়ে হাপসাতাল চত্বরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ও গত ৩১ মার্চ জীবননগর উপজেলার মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি রজনীর আলট্রাসনোগ্রাফি করান পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট প্রদানকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আফরোজা শারমিন ও ৯ ফেব্রুয়ারি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) নাজমুল স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রিন্ট রিপোটের্র মন্তব্যে জানানো হয়, ‘গর্ভে দুটি সন্তান রয়েছে (ঞরিহ ারধনষব ঢ়ৎবমহধহপু)’।

প্রসূতি রজনীর স্বামী রাসেল হোসেন বলেন, ‘শুধু জীবননগর থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে আমার দুটি বাঁচ্চা হবে এমনটি নয়, সদর হাসপাতাল থেকে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করলেও যমজ বাঁচ্চা হবে বলেই জানতে পারি। যমজ বাঁচ্চা হবে জানতে পেরে আমিসহ পরিবারের সকলেই অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু আজ সকালে আমার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পূর্বেও জন্মের পর দুটি বাঁচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী আমাদের কিনে আনতে বলে। কিন্তু অপারেশনের পরে বলেছে আমার স্ত্রীর পেটে নাকি একটিই বাঁচ্চা ছিল। তাহলে তিনবারই আল্ট্রাসনো রিপোর্টে কি ভুল দেখিয়েছে। আমি সঠিক বিচার চাই।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালের অপারেশ থিয়েটারে ওই প্রসূতির সিজার করেছেন ডা. আকলিমা খাতুন। সিজারের পর প্রসূতির গর্ভে থেকে একটি ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হয়। জীবননগর থেকে প্রসূতির যে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করেছে পরিবারের সদস্যরা, তা সঠিক নয়। ধারণা করা হচ্ছে পেটের ভেতরে পানি বা অন্য কোনো কারণে ওই রিপোর্টে যমজ বাঁচ্চার বিষয়ে জানিয়েছে। তবে সদর হাসপাতাল থেকে ওই প্রসূতির আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করালে সেখানে একটি বাঁচ্চার বিষয়েই নিশ্চিত জানা যায়। এটাই নিশ্চিত যে ওই প্রসূতির গর্ভে একটি সন্তানই ছিল, সিজারে পর সেই সন্তানকেই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসূতির পরিবারের সদস্যদের নিকট দেওয়া হয়।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় প্রসূতির যমজ বাঁচ্চা নিয়ে রহস্য!

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২

‘পরপর তিনবার আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে আমার মেয়ের যমজ বাঁচ্চা হবে বলে জানতে পারি। শনিবার সকালে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে আজ (গতকাল রোববার) সকাল নয়টায় হাসপাতালে সিজার করে একটি বাচ্চা হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানায়। আল্ট্রাসনোর রিপোর্টে তিনবারই কি ভুল হয়? আমার মেয়ের আর একটি বাচ্চার কি হলো?। আমি জানি না একটি বাঁচ্চা হয়েছে নাকি দুটি, আমি সঠিক বিচার চাই।’ গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে মেয়ের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে এমনই অভিযোগ করছিলেন রজনী (২৩) নামের এক প্রসূতির পিতা নবীর হোসেন।

প্রসূতি রজনীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৬-১৭ দিন পূর্বে সন্তানসম্ভবা রজনীর পরিবারের সদস্যরা জীবননগর উপজেলার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাঁর আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট করান। এসময় আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে জানা যায় রজনীর যমজ বাঁচ্চা হবে। এরই মধ্যে গত শনিবার রজনীর প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালে ভর্তি করেন। গতকাল সকালে হাপসাতালের অপারেশন থিয়েটারে প্রসূতি রজনীর সিজার করেন হাপসাতালের গাইনি বিশষজ্ঞ ডা. আকলিমা খাতুন। সিজারের পর জানানো হয় যমজ নয়, প্রসূতির একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। তাঁরা যমজ বাঁচ্চার বিষয়ে জানতে চাইলে অপারেশন থিয়েটারের কর্তব্যরত নার্স ও সহকারীরা জানান, দুটি নয়, প্রসূতির একটি বাঁচ্চা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই প্রসূতির পরিবারের সদস্যরা সদর হাপসাতালের অপারেশন থিয়েটারের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে বাঁচ্চা লুকিয়ে রাখার অভিযোগ করতে থাকেন। এ নিয়ে হাপসাতাল চত্বরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ও গত ৩১ মার্চ জীবননগর উপজেলার মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি রজনীর আলট্রাসনোগ্রাফি করান পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট প্রদানকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আফরোজা শারমিন ও ৯ ফেব্রুয়ারি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) নাজমুল স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রিন্ট রিপোটের্র মন্তব্যে জানানো হয়, ‘গর্ভে দুটি সন্তান রয়েছে (ঞরিহ ারধনষব ঢ়ৎবমহধহপু)’।

প্রসূতি রজনীর স্বামী রাসেল হোসেন বলেন, ‘শুধু জীবননগর থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে আমার দুটি বাঁচ্চা হবে এমনটি নয়, সদর হাসপাতাল থেকে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করলেও যমজ বাঁচ্চা হবে বলেই জানতে পারি। যমজ বাঁচ্চা হবে জানতে পেরে আমিসহ পরিবারের সকলেই অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু আজ সকালে আমার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পূর্বেও জন্মের পর দুটি বাঁচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী আমাদের কিনে আনতে বলে। কিন্তু অপারেশনের পরে বলেছে আমার স্ত্রীর পেটে নাকি একটিই বাঁচ্চা ছিল। তাহলে তিনবারই আল্ট্রাসনো রিপোর্টে কি ভুল দেখিয়েছে। আমি সঠিক বিচার চাই।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘হাসপাতালের অপারেশ থিয়েটারে ওই প্রসূতির সিজার করেছেন ডা. আকলিমা খাতুন। সিজারের পর প্রসূতির গর্ভে থেকে একটি ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট হয়। জীবননগর থেকে প্রসূতির যে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করেছে পরিবারের সদস্যরা, তা সঠিক নয়। ধারণা করা হচ্ছে পেটের ভেতরে পানি বা অন্য কোনো কারণে ওই রিপোর্টে যমজ বাঁচ্চার বিষয়ে জানিয়েছে। তবে সদর হাসপাতাল থেকে ওই প্রসূতির আল্ট্রাসনো রিপোর্ট করালে সেখানে একটি বাঁচ্চার বিষয়েই নিশ্চিত জানা যায়। এটাই নিশ্চিত যে ওই প্রসূতির গর্ভে একটি সন্তানই ছিল, সিজারে পর সেই সন্তানকেই অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসূতির পরিবারের সদস্যদের নিকট দেওয়া হয়।’