ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

চার খদ্দেরসহ আটক ১১ জনের তিন মাসের কারাদণ্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়া ও শহরতলীর দৌলতদিয়াড়ে পৃথক অভিযান চালিয়ে আলোচিত দেহ ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা রাশিয়া ও সেলিনাসহ মোট ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে দৌলতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া ও হকপাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজলের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটককৃতদের তিন মাস করে কারাদণ্ড দেন।

আটককৃতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলতদিয়াড় বঙ্গজ পাড়ার রবিউলের স্ত্রী আলোচিত দেহ ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা রাশিয়া (৪০), চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ার ইকবালের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৪৫) এবং তার স্বামী মৃত ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪৭), নারী চক্রের সদস্য মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের শামীমুজ্জামানের স্ত্রী ফাহিমা (৪৫), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুরের নাজমুলের স্ত্রী তাসলিমা (২০), সদর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের মেয়ে ববিতা খাতুন (৩০) ও নড়াইল লোহাগড়ার জাকির শেখের স্ত্রী শাকিলা খাতুন (৩০)। এছাড়াও নারী চক্রের এই সদস্যদের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটককৃত চারজন হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদী গহেরপুর গ্রামের আনারুলের ছেলে শামীম (২৫), একই এলাকার শ্রী সুকুমার দাসের ছেলে শ্রী রতন দাস (২২), মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সোহাগ (২৫) ও বাড়াদী বাজারের মৃত ঠান্ডুর ছেলে শিপন (২৩)।

পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া ও হকপাড়ায় দুটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেহ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্ত্বে অভিযান পরিচালনা করেন সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহসহ পুলিশের একটি টিম। অভিযানে মূলহোতা রাশিয়া ওরফে রাশি ও সেলিনা খাতুনসহ চক্রের ৭ নারী সদস্য ও ৪ খদ্দেরসহ মোট ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

পুলিশের অভিযানে এই চক্রের ১১ জনে আটকের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, এরা দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা করে আসছিল। এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয় দেখানোসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হতো। এক প্রকার বুক ফুলিয়েই এলাকার মধ্যে দেহ ব্যবসার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল এই চক্র। চক্রের নারী সদস্যদের নিজের বাড়ির ভাড়াটিয়া বলে পরিচয় দিতো রাশিয়া ও সেলিনা। ফলে এই চক্রের নারী সদস্যরা সবসময়ই বাড়ির মধ্যেই থাকত। গ্রাহক আসলেই তাদেরকে নির্ধারিত কক্ষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। রাত-দিনের কোনো পার্থক্য ছিল না এই চক্রের কাছে। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকার প্রতিটা অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকলে এই চক্রের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং তাঁরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন বলে স্থানীয়দের আশা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজল বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ ধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন, সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে তাদেরকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটককৃতদের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এসময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চক্রের সকলের অবস্থা দেখে মনে হয় না তারা অভাবের কারণে এই পথে এসেছে। এ ধরনের পরিবারের লোকজন এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, এটা একটা অশনি সংকেত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সকলকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষে এটা রোধ করা সম্ভাব নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার। যেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চার খদ্দেরসহ আটক ১১ জনের তিন মাসের কারাদণ্ড

আপলোড টাইম : ১০:৩৬:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়া ও শহরতলীর দৌলতদিয়াড়ে পৃথক অভিযান চালিয়ে আলোচিত দেহ ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা রাশিয়া ও সেলিনাসহ মোট ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে দৌলতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া ও হকপাড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজলের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। পরে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটককৃতদের তিন মাস করে কারাদণ্ড দেন।

আটককৃতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলতদিয়াড় বঙ্গজ পাড়ার রবিউলের স্ত্রী আলোচিত দেহ ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা রাশিয়া (৪০), চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হকপাড়ার ইকবালের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৪৫) এবং তার স্বামী মৃত ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন (৪৭), নারী চক্রের সদস্য মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের শামীমুজ্জামানের স্ত্রী ফাহিমা (৪৫), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুরের নাজমুলের স্ত্রী তাসলিমা (২০), সদর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের মেয়ে ববিতা খাতুন (৩০) ও নড়াইল লোহাগড়ার জাকির শেখের স্ত্রী শাকিলা খাতুন (৩০)। এছাড়াও নারী চক্রের এই সদস্যদের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটককৃত চারজন হলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদী গহেরপুর গ্রামের আনারুলের ছেলে শামীম (২৫), একই এলাকার শ্রী সুকুমার দাসের ছেলে শ্রী রতন দাস (২২), মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সোহাগ (২৫) ও বাড়াদী বাজারের মৃত ঠান্ডুর ছেলে শিপন (২৩)।

পুলিশ জানায়, চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া ও হকপাড়ায় দুটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দেহ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমানের নেতৃত্ত্বে অভিযান পরিচালনা করেন সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহসহ পুলিশের একটি টিম। অভিযানে মূলহোতা রাশিয়া ওরফে রাশি ও সেলিনা খাতুনসহ চক্রের ৭ নারী সদস্য ও ৪ খদ্দেরসহ মোট ১১ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

পুলিশের অভিযানে এই চক্রের ১১ জনে আটকের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, এরা দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা করে আসছিল। এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয় দেখানোসহ প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হতো। এক প্রকার বুক ফুলিয়েই এলাকার মধ্যে দেহ ব্যবসার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল এই চক্র। চক্রের নারী সদস্যদের নিজের বাড়ির ভাড়াটিয়া বলে পরিচয় দিতো রাশিয়া ও সেলিনা। ফলে এই চক্রের নারী সদস্যরা সবসময়ই বাড়ির মধ্যেই থাকত। গ্রাহক আসলেই তাদেরকে নির্ধারিত কক্ষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। রাত-দিনের কোনো পার্থক্য ছিল না এই চক্রের কাছে। তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকার প্রতিটা অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকলে এই চক্রের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং তাঁরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন বলে স্থানীয়দের আশা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান কাজল বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি আরও বলেন, এ ধরণের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত থাকবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন, সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে তাদেরকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটককৃতদের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এসময় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চক্রের সকলের অবস্থা দেখে মনে হয় না তারা অভাবের কারণে এই পথে এসেছে। এ ধরনের পরিবারের লোকজন এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, এটা একটা অশনি সংকেত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সকলকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষে এটা রোধ করা সম্ভাব নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হলে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার। যেখানে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই।’