ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লেন অফিস সহায়ক!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

চরম হয়রানি ও অনিয়মের পাশাপাশি অধস্তন কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কাজে গেলেই হতে হয় ভোগান্তির শিকার। স্মাটকার্ড নিতে গেলে সকালে স্লিপ জমা নিয়ে বেলা তিনটার পর ডেলিভারি দেওয়া হয়। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ নাগরিকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অফিসের কর্মচারীদের অশোভনীয় ব্যবহারে মানুষ অতিষ্ঠ বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এরই মধ্যে ঘুষ নিতে যেয়ে ধরা পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকি। সদর উপজেলার বারইখালী গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আল মামুন নতুনের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি/স্মার্ট কার্ড) দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি। এদিকে ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে অফিসে হুলস্থুল কাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানাভাবে চেষ্টাও করা হয়। ঘুষ প্রদানকারী আল মামুন তার টাকা ফেরত চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আ. ছালেকের অফিসে গেলে সমস্ত অফিসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ উঠেছে রোকনুজ্জামান রকি উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানের খুব প্রিয় পাত্র। রকির হাত দিয়ে জটিল ও কঠিন কাজগুলো সমাধান করেন মশিউর। রকি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ভোটারদের নিকট থেকে ঘুষের টাকা আদায় করেন।

আল মামুন জানান, তিনি দুই মাস আগে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাঁর ছবি তোলা হচ্ছিল না। গত বুধবার অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির কাছে টাকা দিলে ছবি তোলার এসএমএস পান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ৫ হাজার টাকা দিলে তাঁর ছবি তুলে দিতে রাজি হয় রকি। এদিকে টাকা দেওয়ার আগে নোটগুলোর ছবি ও টাকা দেওয়ার ভিডিও ধারণ করেন আল মামুন নিজেই। পরবর্তীতে জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে রকির অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ করলে অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির পকেট তল্লাশি করেন ওই অফিসের কর্মীরা।

এসময় আল মামুনের ছবির টাকার নম্বরের সাথে রকির পকেটে থাকা টাকার নম্বর মিলে যায়। টাকা লেনদেনের ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে পৌঁছালে মুহূর্তে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নতুন চাকরি পাওয়ার পর থেকে রকি এভাবে টাকা হাতিয়ে নিলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই বলেন, এই টাকার ভাগ পান উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো বা স্থানান্তরের আবেদন মানেই টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে শিকার হতে হয় হয়রানির।

ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া শাপলা চত্বরের মাসুদ অটোর মালিক মাসুদের ছেলে ভোটার স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেন ৮ মাস আগে। অবশেষে তিনি নির্বাচন অফিসের রকির সাথে চুক্তি করে সফলতা পান। বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানকে একটি হেলমেট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ফাঁদে ফেলে একটি চক্র রকিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ফ্রি হেলমেট নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই হেলমেট নিয়ে এসেছি, কিন্তু এই বাবদ নয়। টাকা দেওয়ার কথা আমার মনে ছিল না। এখন তারা কথা ঘুরাচ্ছে।’

জেলা নির্বাচন অফিসার আ. ছালেক বলেন, ‘অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানালে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঘুষ নিয়ে ধরা পড়লেন অফিস সহায়ক!

আপলোড টাইম : ১০:০০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২২

ঝিনাইদহ অফিস:

চরম হয়রানি ও অনিয়মের পাশাপাশি অধস্তন কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কাজে গেলেই হতে হয় ভোগান্তির শিকার। স্মাটকার্ড নিতে গেলে সকালে স্লিপ জমা নিয়ে বেলা তিনটার পর ডেলিভারি দেওয়া হয়। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ নাগরিকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অফিসের কর্মচারীদের অশোভনীয় ব্যবহারে মানুষ অতিষ্ঠ বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এরই মধ্যে ঘুষ নিতে যেয়ে ধরা পড়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকি। সদর উপজেলার বারইখালী গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে আল মামুন নতুনের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি/স্মার্ট কার্ড) দেওয়ার কথা বলে ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি। এদিকে ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে অফিসে হুলস্থুল কাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানাভাবে চেষ্টাও করা হয়। ঘুষ প্রদানকারী আল মামুন তার টাকা ফেরত চেয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আ. ছালেকের অফিসে গেলে সমস্ত অফিসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ উঠেছে রোকনুজ্জামান রকি উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানের খুব প্রিয় পাত্র। রকির হাত দিয়ে জটিল ও কঠিন কাজগুলো সমাধান করেন মশিউর। রকি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ভোটারদের নিকট থেকে ঘুষের টাকা আদায় করেন।

আল মামুন জানান, তিনি দুই মাস আগে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাঁর ছবি তোলা হচ্ছিল না। গত বুধবার অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির কাছে টাকা দিলে ছবি তোলার এসএমএস পান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ৫ হাজার টাকা দিলে তাঁর ছবি তুলে দিতে রাজি হয় রকি। এদিকে টাকা দেওয়ার আগে নোটগুলোর ছবি ও টাকা দেওয়ার ভিডিও ধারণ করেন আল মামুন নিজেই। পরবর্তীতে জেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে রকির অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ করলে অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির পকেট তল্লাশি করেন ওই অফিসের কর্মীরা।

এসময় আল মামুনের ছবির টাকার নম্বরের সাথে রকির পকেটে থাকা টাকার নম্বর মিলে যায়। টাকা লেনদেনের ভিডিও গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে পৌঁছালে মুহূর্তে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নতুন চাকরি পাওয়ার পর থেকে রকি এভাবে টাকা হাতিয়ে নিলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই বলেন, এই টাকার ভাগ পান উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো বা স্থানান্তরের আবেদন মানেই টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে শিকার হতে হয় হয়রানির।

ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া শাপলা চত্বরের মাসুদ অটোর মালিক মাসুদের ছেলে ভোটার স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেন ৮ মাস আগে। অবশেষে তিনি নির্বাচন অফিসের রকির সাথে চুক্তি করে সফলতা পান। বিনিময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমানকে একটি হেলমেট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মশিউর রহমান বলেন, ফাঁদে ফেলে একটি চক্র রকিকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ফ্রি হেলমেট নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই হেলমেট নিয়ে এসেছি, কিন্তু এই বাবদ নয়। টাকা দেওয়ার কথা আমার মনে ছিল না। এখন তারা কথা ঘুরাচ্ছে।’

জেলা নির্বাচন অফিসার আ. ছালেক বলেন, ‘অফিস সহায়ক রোকনুজ্জামান রকির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানালে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’