ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গাড়ি আছে ঘোড়া নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাড়ি থাকলেও ঘোড়া না থাকার মতোয় চুয়াডাঙ্গায় অবহেলায় পড়ে আছে অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স। ২০২১ সালে ভারত সরকারের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি অলস পড়ে আছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভেতরে। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি বুঝে নেওয়ার ৬ মাস পার হয়ে গেলেও চালু হয়নি জীবনরক্ষাকারী এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা। সাধারণ রোগী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আইসিইউ সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যাচ্ছে না। রোগীদের জীবনরক্ষার কাজে ব্যবহারের পূর্বেই অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই যেন নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকার উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এসে পৌঁছায়। সেদিনই অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু নেই। ছিল না একটিও আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স। করোনা মহামারির সময়ে গত বছরের ৭ আগস্ট সাজেদা ফাউন্ডেশন নিজস্ব জনবলে ও যন্ত্রপাতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট চালু করে। তবে জেলায় করোনা মহামারির প্রকোপ কমতে শুরু করায় চুক্তি শেষ হওয়ায় ফাউন্ডেশনটি আইসিইউ সেবা বন্ধ করে দেয়। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়তই মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। যে কারণে এ জেলার একমাত্র আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেটি চালুর বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকেই ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ গেছে অনেকের। এ অবস্থায় এ জেলার সাধারণ মানুষ অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলন্সটি দ্রুততম সময়ে চালুর দাবি তুলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, রোগী বহনে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জনবলের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। লাইফ সাপোর্ট না পাওয়ায় সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে অনেক সময় কার্ডিয়াক রোগীদের অনেকেই হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা চালু হলে সে ধরণের বিপদ অনেকাংশে কমে আসবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট চালু করার বিষয়ে ইতঃমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আইসিউই ইউনিট চালু হলে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটিও সচল হবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে রয়েছে। তবে সেটি সচল করে সেবা দিতে প্রশিক্ষিত জনবল ও চিকিৎসকের প্রয়োজন। জনবল না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করা যাচ্ছে না। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে থাকায় তিনিই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গাড়ি আছে ঘোড়া নেই

আপলোড টাইম : ১০:০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাড়ি থাকলেও ঘোড়া না থাকার মতোয় চুয়াডাঙ্গায় অবহেলায় পড়ে আছে অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স। ২০২১ সালে ভারত সরকারের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি অলস পড়ে আছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভেতরে। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি বুঝে নেওয়ার ৬ মাস পার হয়ে গেলেও চালু হয়নি জীবনরক্ষাকারী এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা। সাধারণ রোগী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আইসিইউ সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যাচ্ছে না। রোগীদের জীবনরক্ষার কাজে ব্যবহারের পূর্বেই অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই যেন নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকার উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এসে পৌঁছায়। সেদিনই অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু নেই। ছিল না একটিও আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স। করোনা মহামারির সময়ে গত বছরের ৭ আগস্ট সাজেদা ফাউন্ডেশন নিজস্ব জনবলে ও যন্ত্রপাতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট চালু করে। তবে জেলায় করোনা মহামারির প্রকোপ কমতে শুরু করায় চুক্তি শেষ হওয়ায় ফাউন্ডেশনটি আইসিইউ সেবা বন্ধ করে দেয়। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়তই মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। যে কারণে এ জেলার একমাত্র আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেটি চালুর বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকেই ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ গেছে অনেকের। এ অবস্থায় এ জেলার সাধারণ মানুষ অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলন্সটি দ্রুততম সময়ে চালুর দাবি তুলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান বলেন, রোগী বহনে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জনবলের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। লাইফ সাপোর্ট না পাওয়ায় সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে অনেক সময় কার্ডিয়াক রোগীদের অনেকেই হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা চালু হলে সে ধরণের বিপদ অনেকাংশে কমে আসবে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট চালু করার বিষয়ে ইতঃমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আইসিউই ইউনিট চালু হলে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটিও সচল হবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে রয়েছে। তবে সেটি সচল করে সেবা দিতে প্রশিক্ষিত জনবল ও চিকিৎসকের প্রয়োজন। জনবল না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করা যাচ্ছে না। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অধীনে থাকায় তিনিই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।