ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তাসহ সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে স্মারকলিপি পেশ

এমপি-ডিসি-এসপি বরাবর সম্পাদক পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি
  • আপলোড টাইম : ১০:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে পথে-প্রান্তরে সাংবাদিকের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। পেশাগত দায়িত্বপালনে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নিকট এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণকালে পুলিশ সুপারসহ সকলেই সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

চুয়াডাঙ্গা সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বানে জেলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংবাদপত্র পরিষদের আহ্বায়ক আজাদ মালিতা, সদস্যসচিব ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সম্পাদক পরিষদের সদস্য জান্নাতুল আওলিয়া নিশি প্রমুখ উপস্থিত থেকে এ স্মারকলিপি পেশ করেন। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মী রাসেল কর্তৃক সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে জেলা ডিবি পুলিশের ওপর।

চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পর্যায়ক্রমে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণমাধ্যম দেশ, সমাজ ও জনগণের জন্য। গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্যকে তুলে ধরা, মিথ্যার আবরণ খুলে ফেলা। দেশের উন্নয়নে স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণমুখী সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গণতান্ত্রিক সরকার গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম সরকারের সকল উন্নয়ন কাজকে তুলে ধরে। পৃথিবীতে মানুষ যতদিন আছে, তাদের তথ্য জানার আকাক্সক্ষা ততদিন থাকবে। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের বাইরে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান জন্ম নেয়নি, যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক তথ্য পাবে। তাই এ কথা বলা যায়, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগেও গুজব রোধ ও মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাই মূখ্য। গণমাধ্যমকর্মীরা যেমন কাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন, তেমনি নোংরা কর্মকাণ্ডও জনগণ তথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গাতে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ই আগস্ট মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে শহরের পোস্ট অফিসপাড়ায় এবং পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দফা গণমাধ্যমকর্মী সোহেল রানা ডালিমের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করা হয়। এ ঘটনার মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে গত রোববার (২ জানুয়ারি ২০২২) সংবাদ প্রকাশের জেরে আহসান আলম নামের একজন গণমাধ্যমকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভেতরেই তাঁকে পিটিয়ে আহত করা হয়।

‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেলের সাথে আস্থা প্রকল্পের আয়া বৃষ্টির অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ’ শিরোনামে দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই দিন সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে ওয়ার্ডবয় রাসেল বাঁশের লাঠি দিয়ে আহসান আলমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় গত রোববার দুপুরেই সাংবাদিক আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘নয়া শতাব্দী’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। অভিযুক্ত রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়াড়ের উত্তরপাড়ার সাগর আলীর ছেলে। রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং- এর মাধ্যমে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনকালে গণমাধ্যমকর্মীরা যেমন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তেমনি তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও হচ্ছেন নাজেহাল। সম্প্রতি সোহেল রানা ডালিম, আহসান আলমের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এতো বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে ওয়ার্ডবয় রাসেলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে। বলা হয়, গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। চতুর্থ স্তম্ভ নাজুক হলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও নাজুক হয়ে যায়। রাষ্ট্রের ভীত মজবুত রাখতে যারা কাজ করছেন, সেই গণমাধ্যমকর্মীরা কতটা নিরাপদে কাজ করতে পারছেন, সেটা ভেবে দেখা একান্ত আবশ্যক। আমরা জানাতে চাই, চুয়াডাঙ্গার কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষ, চুয়াডাঙ্গা সম্পাদক পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটকে জানাতে হবে। এতে সহজেই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর ন্যাক্কারনজক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় তিন দফা দাবি জানাচ্ছি।

পেশকৃত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পথে-প্রান্তরে সাংবাদিকরা যাতে নির্যাতন, হামলার শিকার না হয়, সেজন্য তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রগতির চাকা সচল রাখা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। পেশাগত দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা করতে হবে। সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলাকারী ও হামলার পেছনে থাকা অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। উপরোক্ত তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকরের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কর্মরত সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা চালায় আস্থা’ কর্র্তৃক নিয়োগকৃত অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত ওয়ার্ডবয় রাসল। ওইদিনই তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরদিন গত সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শীর্ষ ফোরামের বৈঠক। এ বৈঠক থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তাসহ সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে স্মারকলিপি পেশ

আপলোড টাইম : ১০:৪১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জানুয়ারী ২০২২

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে পথে-প্রান্তরে সাংবাদিকের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। পেশাগত দায়িত্বপালনে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নিকট এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণকালে পুলিশ সুপারসহ সকলেই সাংবাদিকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

চুয়াডাঙ্গা সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বানে জেলার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। সংবাদপত্র পরিষদের আহ্বায়ক আজাদ মালিতা, সদস্যসচিব ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজীব হাসান কচি, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, সম্পাদক পরিষদের সদস্য জান্নাতুল আওলিয়া নিশি প্রমুখ উপস্থিত থেকে এ স্মারকলিপি পেশ করেন। অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের অস্থায়ী কর্মী রাসেল কর্তৃক সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে জেলা ডিবি পুলিশের ওপর।

চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিক লাঞ্ছিতের ঘটনায় তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পর্যায়ক্রমে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর এ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। পেশকৃত স্মারকলিপিতে বলা হয়, গণমাধ্যম দেশ, সমাজ ও জনগণের জন্য। গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্যকে তুলে ধরা, মিথ্যার আবরণ খুলে ফেলা। দেশের উন্নয়নে স্বাধীন গণমাধ্যম ও গণমুখী সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গণতান্ত্রিক সরকার গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম সরকারের সকল উন্নয়ন কাজকে তুলে ধরে। পৃথিবীতে মানুষ যতদিন আছে, তাদের তথ্য জানার আকাক্সক্ষা ততদিন থাকবে। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমের বাইরে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান জন্ম নেয়নি, যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক তথ্য পাবে। তাই এ কথা বলা যায়, তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগেও গুজব রোধ ও মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাই মূখ্য। গণমাধ্যমকর্মীরা যেমন কাজের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন, তেমনি নোংরা কর্মকাণ্ডও জনগণ তথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গাতে অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের ১৬ই আগস্ট মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে শহরের পোস্ট অফিসপাড়ায় এবং পরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দফা গণমাধ্যমকর্মী সোহেল রানা ডালিমের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত করা হয়। এ ঘটনার মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে গত রোববার (২ জানুয়ারি ২০২২) সংবাদ প্রকাশের জেরে আহসান আলম নামের একজন গণমাধ্যমকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভেতরেই তাঁকে পিটিয়ে আহত করা হয়।

‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেলের সাথে আস্থা প্রকল্পের আয়া বৃষ্টির অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ’ শিরোনামে দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই দিন সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে ওয়ার্ডবয় রাসেল বাঁশের লাঠি দিয়ে আহসান আলমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় গত রোববার দুপুরেই সাংবাদিক আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘নয়া শতাব্দী’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। অভিযুক্ত রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়াড়ের উত্তরপাড়ার সাগর আলীর ছেলে। রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং- এর মাধ্যমে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনকালে গণমাধ্যমকর্মীরা যেমন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, তেমনি তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও হচ্ছেন নাজেহাল। সম্প্রতি সোহেল রানা ডালিম, আহসান আলমের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এতো বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে ওয়ার্ডবয় রাসেলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে। বলা হয়, গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। চতুর্থ স্তম্ভ নাজুক হলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও নাজুক হয়ে যায়। রাষ্ট্রের ভীত মজবুত রাখতে যারা কাজ করছেন, সেই গণমাধ্যমকর্মীরা কতটা নিরাপদে কাজ করতে পারছেন, সেটা ভেবে দেখা একান্ত আবশ্যক। আমরা জানাতে চাই, চুয়াডাঙ্গার কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি সংশ্লিষ্ট পত্রিকা কর্তৃপক্ষ, চুয়াডাঙ্গা সম্পাদক পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটকে জানাতে হবে। এতে সহজেই সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর ন্যাক্কারনজক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় তিন দফা দাবি জানাচ্ছি।

পেশকৃত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পথে-প্রান্তরে সাংবাদিকরা যাতে নির্যাতন, হামলার শিকার না হয়, সেজন্য তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রগতির চাকা সচল রাখা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। পেশাগত দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা করতে হবে। সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলাকারী ও হামলার পেছনে থাকা অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। উপরোক্ত তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকরের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কর্মরত সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা চালায় আস্থা’ কর্র্তৃক নিয়োগকৃত অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত ওয়ার্ডবয় রাসল। ওইদিনই তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওপর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরদিন গত সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা স্থানীয় সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শীর্ষ ফোরামের বৈঠক। এ বৈঠক থেকে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।