ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

খাদ্যগুদামের ৪ কর্মকতা-কর্মচারির ঘুষ-বাণিজ্য!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৪৭:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
জীবননগরে টনপ্রতি ১ জাহার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে চাল সরবরাহে অনীহা মিল মালিকদের। চলতি আমন মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫৯ টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ওবাইদুল ইসলাম, কাওসার হোসেন, অফিস সহকারী রাকিব ও পাহারাদার মাসুদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে জীবননগর উপজেলার মিল মালিকেরা এবার চাল সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছেন। যে কারণে এবার লক্ষামাত্রার চেয়ে ৫৮৩ মেট্রিকটন চাল কম সরবরাহ হয়েছে।


জানা যায়, ৪০ টাকা কেজি দরে চালকল মালিকদের কাছ থেকে এসব চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্য বিভাগ জানায়, জীবননগর উপজেলায় চালকল মালিকদের সঙ্গে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর চুক্তি করা হয়। যেটার সময় শেষ হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মিলারদের নিকট থেকে ১ হাজার ৭৭৬ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। তবে এতে ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে ৫৮৩ মেট্রিকটন চাল কম সরবরাহ হয়েছে। এই চার কর্মকর্তা মিলারদের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে এই ৫৮৩ মেট্রিকটন চালেল মান খারাপ দেখিয়ে ফেরত দিয়েছেন। অথচ এর অর্ন্তরালে রয়েছে ঘুষ-বাণিজ্য। আর এই কর্মকর্তারা বলছেন চালের মান খারাপ। এসব কারণে সিদ্ধ চাল কেনার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু মিল মালিক অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বছর বাজারদর অনুকূলে না থাকা সত্ত্বেও চালকল মালিকেরা নিজেদের বেনিফিট ছাড়াই খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলাম, উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী, অফিস সহকারী রাকিব হোসেন সে সময় টনপ্রতি চালের জন্য ১ হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিল। আমরা চালকল মিলাররা এসব টাকা দিতে না চাইলে অফিস সহকারী রাকিব ও পাহারাদার মাসুদ ভালো মানের চাল নষ্ট বলে বিভিন্ন টালবাহানা করেন এবং চালের মান খারাপ এমন অজুহাতে চাল ফেরত দেন। পরে টনপ্রতি এক হাজার টাকা করে দিয়ে দিলে ওই চাল খাদ্যগুদামে রাখেন। আর তাদের মন মতো টাকা না দিলে চালের বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে বের করে দেন। এ সমস্থ অসাধু কর্মকতাদের জন্য জীবননগরে উপজেলার বেশ কিছু ছোট মিল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।’


অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলামের পূর্বে যেখানে কমরত ছিলেন সেখানে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে জীবননগরে যোগদান করেন। তাছাড়া তিনি অফিস না করে বেশির ভাগ সময় নিজ বাড়ি বগুড়াতে কাটান। অপর দিকে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলীর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।


এছাড়া পচা চাল সরবরাহের অভিযোগ জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী আগে থেকেও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে একের পর এক অপকর্ম করেই চলেছেন তিনি।


এবিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলাম এবং (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গত মৌসুমে চাল সরবরাহের সময় কোনো মিলারের কাছ থেকে কোনো ঘুষ চাওয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাঁদের সরবরাহকৃত চালের গুণগত মান ঠিক ছিল না। খারাপ চাল সরবরাহ করে মিল মালিকরা। এবারও কোনো মিল মালিকের নিকট টাকা চাওয়া হয়নি। সরকারি নির্দেশ মতে চাল নিতে যেয়ে মিলাররা এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।’
জীবননগর উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

খাদ্যগুদামের ৪ কর্মকতা-কর্মচারির ঘুষ-বাণিজ্য!

আপলোড টাইম : ০১:৪৭:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ মার্চ ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদক:
জীবননগরে টনপ্রতি ১ জাহার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে চাল সরবরাহে অনীহা মিল মালিকদের। চলতি আমন মৌসুমে জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৩৫৯ টন সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ওবাইদুল ইসলাম, কাওসার হোসেন, অফিস সহকারী রাকিব ও পাহারাদার মাসুদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে জীবননগর উপজেলার মিল মালিকেরা এবার চাল সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছেন। যে কারণে এবার লক্ষামাত্রার চেয়ে ৫৮৩ মেট্রিকটন চাল কম সরবরাহ হয়েছে।


জানা যায়, ৪০ টাকা কেজি দরে চালকল মালিকদের কাছ থেকে এসব চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্য বিভাগ জানায়, জীবননগর উপজেলায় চালকল মালিকদের সঙ্গে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর চুক্তি করা হয়। যেটার সময় শেষ হয় চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মিলারদের নিকট থেকে ১ হাজার ৭৭৬ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। তবে এতে ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে ৫৮৩ মেট্রিকটন চাল কম সরবরাহ হয়েছে। এই চার কর্মকর্তা মিলারদের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে এই ৫৮৩ মেট্রিকটন চালেল মান খারাপ দেখিয়ে ফেরত দিয়েছেন। অথচ এর অর্ন্তরালে রয়েছে ঘুষ-বাণিজ্য। আর এই কর্মকর্তারা বলছেন চালের মান খারাপ। এসব কারণে সিদ্ধ চাল কেনার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু মিল মালিক অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বছর বাজারদর অনুকূলে না থাকা সত্ত্বেও চালকল মালিকেরা নিজেদের বেনিফিট ছাড়াই খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলাম, উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী, অফিস সহকারী রাকিব হোসেন সে সময় টনপ্রতি চালের জন্য ১ হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিল। আমরা চালকল মিলাররা এসব টাকা দিতে না চাইলে অফিস সহকারী রাকিব ও পাহারাদার মাসুদ ভালো মানের চাল নষ্ট বলে বিভিন্ন টালবাহানা করেন এবং চালের মান খারাপ এমন অজুহাতে চাল ফেরত দেন। পরে টনপ্রতি এক হাজার টাকা করে দিয়ে দিলে ওই চাল খাদ্যগুদামে রাখেন। আর তাদের মন মতো টাকা না দিলে চালের বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে বের করে দেন। এ সমস্থ অসাধু কর্মকতাদের জন্য জীবননগরে উপজেলার বেশ কিছু ছোট মিল বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।’


অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলামের পূর্বে যেখানে কমরত ছিলেন সেখানে তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে জীবননগরে যোগদান করেন। তাছাড়া তিনি অফিস না করে বেশির ভাগ সময় নিজ বাড়ি বগুড়াতে কাটান। অপর দিকে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলীর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।


এছাড়া পচা চাল সরবরাহের অভিযোগ জীবননগর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী আগে থেকেও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্বেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার ফলে একের পর এক অপকর্ম করেই চলেছেন তিনি।


এবিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুর ইসলাম এবং (ওসিএলএসডি) কাওসার আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গত মৌসুমে চাল সরবরাহের সময় কোনো মিলারের কাছ থেকে কোনো ঘুষ চাওয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাঁদের সরবরাহকৃত চালের গুণগত মান ঠিক ছিল না। খারাপ চাল সরবরাহ করে মিল মালিকরা। এবারও কোনো মিল মালিকের নিকট টাকা চাওয়া হয়নি। সরকারি নির্দেশ মতে চাল নিতে যেয়ে মিলাররা এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।’
জীবননগর উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’