ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

কনকনে শীতের দাপটে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস- আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে বাড়তে পারে শীত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের সীমান্তের কোল ঘেঁষা চুয়াডাঙ্গা জেলায় বেড়েই চলছে কনকনে শীত ও কুয়াশা। উত্তরদিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। ফলে জেঁকে বসেছে শীত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর-সন্ধ্যা-রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলায় রোদ থাকলেও থাকে না তেজ। বিকেল থেকেই বইছে ঠান্ডা বাতাস। ঠান্ডা বাতাসে অনুভূত হয় শীতের প্রকোপ। শীত নিবারণে মানুষজন গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়খুটো জ্বালিয়ে আগুনের আশ্রয় নিচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে কুয়াশা শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সকালে কুয়াশা না থাকলেও কনকনে শীতের কারণে বেলা অব্দি সাধারণ মানুষজনকে শীতের গরম কাপড় জড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ অঞ্চলটিতে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। ফলে জেলার সাধারণ মানুষ ও দিনমজুররা পড়েন চরম বিপাকে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুইদিন মূদু শৈত্যপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় গতকাল থেকে আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯৭ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আবার নেমে এসেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের ছিল আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এ মাসে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলা এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ক্রমেই নামতে থাকবে।

এদিকে বেড়েছে শীতজনিত নানা ব্যধি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাঁশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জেলায় কনকনে শীত তীব্র হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ ও কমলমতি শিশুরা। প্রতিদিন বাড়ছে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি, কাঁশি, জ¦র, বৃদ্ধদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট। কনকনে শীতে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও কাবু হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মা মহিমা সরকার জানান, গত সোমবার থেকে তার মেয়ে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করালেও সুস্থ না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েকে সদর হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক ভর্তি রাখে। শিশু ওয়ার্ডে কোনো বেড খালি নেই, তাই শিশু কন্যাকে ওয়ার্ডেও ফ্লোরে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে এখানকার মানুষ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। লোকবল কম থাকায় চিকিৎসক ও সেবিকাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন ১শ থেকে ২শ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় গত চারদিন ধরে রোদের দেখা মিলছে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে হিম বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। প্রকৃতির এমন বৈরি আচরণে কষ্ট ও দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ভোর থেকে কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করেও মিলছে না কাজ। ফিরে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। এছাড়া তীব্র শীতে কৃষকের ধান, গম ও আলু রোপন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। শীত নিবারণে শহরের হাট-বাজারে ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা শহরের পান দোকানদার বাবু মিয়া জানান, পান বিক্রি করেই তার সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। ঠান্ডার কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। এলাকায় মানুষের সমাগম কমেছে, তাই ক্রেতাও কম। হোটেল শ্রমিক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে। বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে শহরের হোটেলে আসতেই ঠান্ডায় জীবন যেন বেরিয়ে যায়।’ চুয়াডাঙ্গার একটি ইটভাটায় কর্মরত সাজ্জাদ আলী নামের দিনমজুর জানান, তার বাড়ি দিনাজপুরে। পেটের দায়ে কাজ করছেন ইটভাটায়। থাকেন ইটভাটার এক খুপড়ি ঘরে। শীতের মধ্যেও অনেক ভোরে উঠে কাদা পানি নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়। চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠান্ডা পানিতে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। অটোরিকশা চালক মণ্টু আলী বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে। শীতে কষ্টতো হচ্ছেই, মহাজনের টাকা দিতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, শীতের কারণে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ক্ষতি না হয়। কৃষকেরা পরামর্শ নিচ্ছেনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করছেন। তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, শীতে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী শীতবস্ত্র ও সাহায্য মানুষকে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও অনেকে এগিয়ে আসছেন। আমি সরকারের কাছে লিখেছি, যাতে চুয়াডাঙ্গার জন্য আরও বরাদ্দ পাওয়া যায়।

জীবননগর:

জীবননগরে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সকাল গড়িয়ে দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের কোনো উত্তাপ নেই। তীব্র শীতে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে সর্দি, কাঁশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৫২ জন শিশু ও ১০ জন বয়স্ক রোগী এবং নিউমোনিয়ায় রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন শিশু। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান সুজন বলেন, ‘এই শীতে সবাইকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে। ঘরের বাইরে বের হলে গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বাঁচ্চাদের দিকে একটু বেশি নজর রাখতে হবে। শীতে বাঁচ্চারা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি, সে জন্য বাঁচ্চাদের দিকে একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাঁচ্চাদের ঘরের বাইরে বের করা যাবে না এবং ঠান্ডা, খোলা জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কনকনে শীতের দাপটে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা

আপলোড টাইম : ০৭:৫২:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস- আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে বাড়তে পারে শীত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের সীমান্তের কোল ঘেঁষা চুয়াডাঙ্গা জেলায় বেড়েই চলছে কনকনে শীত ও কুয়াশা। উত্তরদিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া ও কুয়াশার কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের দাপট। ফলে জেঁকে বসেছে শীত। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ভোর-সন্ধ্যা-রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলায় রোদ থাকলেও থাকে না তেজ। বিকেল থেকেই বইছে ঠান্ডা বাতাস। ঠান্ডা বাতাসে অনুভূত হয় শীতের প্রকোপ। শীত নিবারণে মানুষজন গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়খুটো জ্বালিয়ে আগুনের আশ্রয় নিচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে কুয়াশা শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। সকালে কুয়াশা না থাকলেও কনকনে শীতের কারণে বেলা অব্দি সাধারণ মানুষজনকে শীতের গরম কাপড় জড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ অঞ্চলটিতে প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। ফলে জেলার সাধারণ মানুষ ও দিনমজুররা পড়েন চরম বিপাকে। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুইদিন মূদু শৈত্যপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় গতকাল থেকে আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯৭ শতাংশ। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমে শীত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারী শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও আবার নেমে এসেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের ছিল আদ্রতা ৯৭ শতাংশ। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এ মাসে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলা এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ক্রমেই নামতে থাকবে।

এদিকে বেড়েছে শীতজনিত নানা ব্যধি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকগুলোতে জ্বর-সর্দি, কাঁশি, অ্যাজমা, সাইনোসাইটিস, ইসনোফিলসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জেলায় কনকনে শীত তীব্র হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছে বৃদ্ধ ও কমলমতি শিশুরা। প্রতিদিন বাড়ছে শিশুদের ডায়রিয়া, সর্দি, কাঁশি, জ¦র, বৃদ্ধদের হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট। কনকনে শীতে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও কাবু হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মা মহিমা সরকার জানান, গত সোমবার থেকে তার মেয়ে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করালেও সুস্থ না হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেয়েকে সদর হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক ভর্তি রাখে। শিশু ওয়ার্ডে কোনো বেড খালি নেই, তাই শিশু কন্যাকে ওয়ার্ডেও ফ্লোরে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে এখানকার মানুষ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। লোকবল কম থাকায় চিকিৎসক ও সেবিকাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন ১শ থেকে ২শ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় গত চারদিন ধরে রোদের দেখা মিলছে। কিন্তু দুপুরের পর থেকে হিম বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। প্রকৃতির এমন বৈরি আচরণে কষ্ট ও দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। ভোর থেকে কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করেও মিলছে না কাজ। ফিরে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। এছাড়া তীব্র শীতে কৃষকের ধান, গম ও আলু রোপন ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। শীত নিবারণে শহরের হাট-বাজারে ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা শহরের পান দোকানদার বাবু মিয়া জানান, পান বিক্রি করেই তার সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। ঠান্ডার কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। এলাকায় মানুষের সমাগম কমেছে, তাই ক্রেতাও কম। হোটেল শ্রমিক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে। বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে শহরের হোটেলে আসতেই ঠান্ডায় জীবন যেন বেরিয়ে যায়।’ চুয়াডাঙ্গার একটি ইটভাটায় কর্মরত সাজ্জাদ আলী নামের দিনমজুর জানান, তার বাড়ি দিনাজপুরে। পেটের দায়ে কাজ করছেন ইটভাটায়। থাকেন ইটভাটার এক খুপড়ি ঘরে। শীতের মধ্যেও অনেক ভোরে উঠে কাদা পানি নিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়। চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠান্ডা পানিতে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। অটোরিকশা চালক মণ্টু আলী বলেন, শহরের তুলনায় গ্রামে লোকজনের উপস্থিতি অনেক কম। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে। শীতে কষ্টতো হচ্ছেই, মহাজনের টাকা দিতেও হিমশিম খাচ্ছি।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, শীতের কারণে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলেও চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ক্ষতি না হয়। কৃষকেরা পরামর্শ নিচ্ছেনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করছেন। তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, শীতে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী শীতবস্ত্র ও সাহায্য মানুষকে পৌছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও অনেকে এগিয়ে আসছেন। আমি সরকারের কাছে লিখেছি, যাতে চুয়াডাঙ্গার জন্য আরও বরাদ্দ পাওয়া যায়।

জীবননগর:

জীবননগরে হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সকাল গড়িয়ে দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের কোনো উত্তাপ নেই। তীব্র শীতে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে সর্দি, কাঁশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৫২ জন শিশু ও ১০ জন বয়স্ক রোগী এবং নিউমোনিয়ায় রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জন শিশু। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তাফিজুর রহমান সুজন বলেন, ‘এই শীতে সবাইকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে। ঘরের বাইরে বের হলে গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বাঁচ্চাদের দিকে একটু বেশি নজর রাখতে হবে। শীতে বাঁচ্চারা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি, সে জন্য বাঁচ্চাদের দিকে একটু বাড়তি নজর দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাঁচ্চাদের ঘরের বাইরে বের করা যাবে না এবং ঠান্ডা, খোলা জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।