ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র ৩৩তম ওফাত দিবস উপলক্ষে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫২:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গা জেলার একুশে পদকপ্রাপ্ত একমাত্র ব্যক্তি মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র ৩৩তম ওফাত দিবস আগামী রোববার। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত এ কবির ওফাত দিবস উপলক্ষে তাঁর নিজ বাড়ি আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের জাহাপুরে দুই দিনব্যাপী স্মরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কবি খোদাবকশ শাহ ৬২ বছর বয়সে ই্হলোক ত্যাগ করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোববার সকাল ১০টায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি, সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে স্মরণ উৎসবের দিবসটি পালন করা হবে। পরদিন সোমবার সকাল ১০টায় কবিতা আবৃত্তি, মরমী বাউল গান, পালাগান এবং বিকেল চারটায় পূর্ণ সেবা নিয়ে সাধুদের বিদায় জানানো হবে।

আলমডাঙ্গার জাহাপুরে মরমী কবি খোদা বকশ শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (ইংরেজি ১৯২৮ খ্রি.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঘোলদাঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। যাত্রাদলে যোগ দেন। তাঁর ছিল অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠ। যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় বিবেক সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যাত্রা দলে তাঁর সংগীত জীবন অতিবাহিত হয়। ১৭ বছর বয়সে খোদাবকশ ভাবসংগীত শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হরিণাকুণ্ডুর শুকচাঁদ শাহ-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি অমূল্য শাহ’র আখড়ায় যান। সেখানে অতি অল্প সময়ে তিনি ভাবসংগীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি ফকিরি পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে লালন সংগীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমি ‘ফেলো’ পদ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে নিজের আখাড়ায় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাহেলা খাতুন, পুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। নিজস্ব আখড়া বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমি মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।

খ্যাতিমান মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র একমাত্র উত্তরসূরী আব্দুল লতিফ শাহ কবি হৃদয়ে অব্যক্ত সাধনার তীর ধরে তাঁর অপ্রকাশিত গান নিয়ে ভক্তদের মাঝে চর্চাবৃত্তি অব্যাহত রেখেছেন। কবিপুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ভারতের মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। খোদা বকশ শাহ স্মৃতি সংসদ ও তাঁর অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছরই তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবস পালন করে আসছে। তিনি জীবদ্দশায় ৯৫০টি গান রচনা করেন। তাঁর মাজারটি এখনো অযন্ত ও অবহেলায় পড়ে আছে। জাহাপুরে কবির সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং কবির জন্ম-ওফাত দিবস দুটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী ও গুণীজনেরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

একুশে পদকপ্রাপ্ত মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র ৩৩তম ওফাত দিবস উপলক্ষে

আপলোড টাইম : ০৭:৫২:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গা জেলার একুশে পদকপ্রাপ্ত একমাত্র ব্যক্তি মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র ৩৩তম ওফাত দিবস আগামী রোববার। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত এ কবির ওফাত দিবস উপলক্ষে তাঁর নিজ বাড়ি আলমডাঙ্গার নাগদাহ ইউনিয়নের জাহাপুরে দুই দিনব্যাপী স্মরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কবি খোদাবকশ শাহ ৬২ বছর বয়সে ই্হলোক ত্যাগ করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোববার সকাল ১০টায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি, সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে স্মরণ উৎসবের দিবসটি পালন করা হবে। পরদিন সোমবার সকাল ১০টায় কবিতা আবৃত্তি, মরমী বাউল গান, পালাগান এবং বিকেল চারটায় পূর্ণ সেবা নিয়ে সাধুদের বিদায় জানানো হবে।

আলমডাঙ্গার জাহাপুরে মরমী কবি খোদা বকশ শাহ বাংলা ১৩৩৪ সালের ৩০ চৈত্র (ইংরেজি ১৯২৮ খ্রি.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঘোলদাঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি অভিনয় ও সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। যাত্রাদলে যোগ দেন। তাঁর ছিল অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠ। যাত্রামঞ্চে তিনি বিবেকের ভূমিকায় বিবেক সংগীত পরিবেশন করতে থাকেন। ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত যাত্রা দলে তাঁর সংগীত জীবন অতিবাহিত হয়। ১৭ বছর বয়সে খোদাবকশ ভাবসংগীত শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি হরিণাকুণ্ডুর শুকচাঁদ শাহ-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরে তিনি অমূল্য শাহ’র আখড়ায় যান। সেখানে অতি অল্প সময়ে তিনি ভাবসংগীতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন।

১৯৭৬ সালে তিনি ফকিরি পোশাক গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ৯ জুন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে লালন সংগীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমি ‘ফেলো’ পদ প্রদান করে। ১৯৮৬ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৭ সালের ৩১ মার্চ তিনি শিল্পকলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে নিজের আখাড়ায় ফিরে আসেন। ১৯৮৯ সালের শেষ দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাহেলা খাতুন, পুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ও কন্যা মালঞ্চকে রেখে যান। নিজস্ব আখড়া বাড়িতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ১৯৯১ সালে খোদাবকশ শাহকে বাংলা একাডেমি মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।

খ্যাতিমান মরমী কবি খোদা বকশ শাহ’র একমাত্র উত্তরসূরী আব্দুল লতিফ শাহ কবি হৃদয়ে অব্যক্ত সাধনার তীর ধরে তাঁর অপ্রকাশিত গান নিয়ে ভক্তদের মাঝে চর্চাবৃত্তি অব্যাহত রেখেছেন। কবিপুত্র আব্দুল লতিফ শাহ ভারতের মনের মানুষ চলচ্চিত্রে লালনের আদি সুরের গান গেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। খোদা বকশ শাহ স্মৃতি সংসদ ও তাঁর অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছরই তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবস পালন করে আসছে। তিনি জীবদ্দশায় ৯৫০টি গান রচনা করেন। তাঁর মাজারটি এখনো অযন্ত ও অবহেলায় পড়ে আছে। জাহাপুরে কবির সমাধিস্থলকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং কবির জন্ম-ওফাত দিবস দুটি সরকারিভাবে পালনের দাবি তুলেছেন তার ভক্ত-অনুরাগী ও গুণীজনেরা।