ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ, নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা: আলমডাঙ্গায় তাস খেলার সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজের একদিন পর টোকন আলী (৩২) নামে এক তামাক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর নতিডাঙ্গা ঘাট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত তামাক ব্যবসায়ী টোকন আলী ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত ওদু ছদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ফেরিঘাট পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল হকের ছেলে কবিরুল ইসলাম, ছুন্নত আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ও মৃত ওদু ছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী ফেরিঘাট এলাকার বাঁশ বাগানের নিচে চারজন বসে তাস খেলছিলেন। হঠাৎ স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশের টুআইসি এএসআই জাহিদুল ইসলাম দুজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই চারজনকে ধাওয়া করেন। পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে দুজন ঝাঁপ দেয়। একজন সাঁতরে ডাঙায় আসলেও তামাক ব্যবসায়ী টোকন মাথাভাঙ্গা নদীর পানি নীচে নিখোঁজ হয়। টোকন সাঁতার না জানায় মাথাভাঙ্গা নদীর পানির তীব্র স্রোতে ভেসে পানির নীচে তলিয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানান, এসময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অপর দুজন নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। কিছুক্ষণ পর নাজিম উদ্দিন সাঁতরে ওপারে চলে গেলেও সাঁতার না জানার কারণে টোকন আলী স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিখোঁজ টোকনকে খুঁজতে থাকে গ্রামের মানুষসহ পরিবারের লোকজন। কিন্তু নদীতে পানি বেশি ও তীব্র স্রোতের কারণে কোনোভাবে টোকনকে উদ্ধার করতে না পারায় পরবর্তীতে খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে সংবাদ দেয় আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খুলনা বিভাগীয় ডুবুরী দল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকাল ৯টা থেকে শুরু করে উদ্ধার অভিযান। একটানা দুই ঘণ্টুা অভিযান পরিচালনার পরও যখন কোনোভাবেই সন্ধান পাওয়া যাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ডুবুরী দল স্থানীয়দের সহায়তায় পাশে অবস্থিত কুটুমবাড়ি পার্ক থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবস্থা করে ঘটনাস্থল থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে সন্দেহভাজন স্থানে পানিতে নেমে মাথাভাঙ্গা নদীর প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার অনুসন্ধান চালায় তারা। পরে বেলা দেড়টার দিকে বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ টোকনের লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে ডুবুরী দল।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আসমোতুল্লাহ বলেন, গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাংবাড়িয়া গ্রামের কারিগরপাড়ার ইয়াদুলের ছেলে কবিরুল ইসলাম (২৫), একই পাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী (৪০), মৃত সুন্নত কারিগরের ছেলে নাজিম উদ্দিন (৩২) ও নতুনপাড়ার অদুছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গ্রামের ফেরিঘাট এলাকার একটি বাঁশবাগানে বসে তাস খেলছিল। এসময় হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই জাহিদুলসহ দুজন কনস্টেবল জুয়া খেলার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে পুলিশ আটক করতে পারলেও নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী পুলিশের তাড়া খেয়ে পাশেই মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাজিম উদ্দিন ফিরে আসলেও টোকনকে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এবং ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনগণ পানিতে নেমে অনেক খোঁজাখুজি করে। কিন্তু কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ডুবুরি দলকে খবর দেয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা থেকে ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে এসে ৫ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চলিয়ে পরে মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল হক বলেন, ‘একদল যুবক জুয়া খেলছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। পরে দুজনকে আটক করা হয়। অপর দুজন আমাদের দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। জুয়া খেলার কোনো সাম্যগ্রী না পাওয়ায় আটক দুজনকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার আবুল হাসান মোল্লা বলেন, ‘গত বুধবার আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। কিন্তু নদীর পানি বেশি থাকা ও নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় খুলনায় ডুবুরী দলকে জানানো হয়। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) খুলনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ ডুবুরি দল এসে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পর মরদেহ উদ্ধার করে। খুলনা ডুবুরী দলের লিডার শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিনজনের ডুবুরী দল লাশ উদ্ধার করে। সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) জানান, ভাংবাড়িয়ায় জুয়া খেলা হচ্ছে, এমন সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। অপর দুজন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন নদী থেকে উঠলেও অন্যজন নিখোঁজ ছিল। তাকে উদ্ধার করতে ডুবুরী দলকে সংবাদ দেওয়া হলে খুলনা থেকে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে না চাওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। জুয়া খেলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায়। দুজনকে আটক করা হয়েছিল। বাকি দুজন পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন সাঁতরে উঠে আসতে পারলেও টোকন পারেনি। আজ (গতকাল) মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরী দল। কোনো আলামত না পাওয়ায় গতকালই আটক দুজনকেই স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেয় পুলিশ।
এদিকে, তামাক ব্যবসায়ী টোকনের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাবাসী শোকে শোকাহত। টোকন মৃত্যুকালে দুটি কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। বড় কন্যার বয়স ১০ বছর ও ছোট কন্যার বয়স ৫ মাস। টোকনের স্ত্রী বলেন, ‘এখন আমি আমার সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব। আমার সন্তান কাকে বাবা বলে ডাকবে, আমার সন্তান বাবা বলে ডাকার আগেই তার বাবাকে হারালো। কী দোষ করেছে আমার বাঁচ্চা সন্তান, তাই তার কপালে এমন হলো। আমি আমার সন্তান নিয়ে পথে বসে গেলাম, আমাদের দেখার কেউ রইল না।’ এদিকে, গতকালই টোকনের লাশ জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ, নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর

আপলোড টাইম : ১০:৩৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা: আলমডাঙ্গায় তাস খেলার সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজের একদিন পর টোকন আলী (৩২) নামে এক তামাক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর নতিডাঙ্গা ঘাট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত তামাক ব্যবসায়ী টোকন আলী ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত ওদু ছদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ফেরিঘাট পাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী, ইয়াদুল হকের ছেলে কবিরুল ইসলাম, ছুন্নত আলীর ছেলে নাজিম উদ্দিন ও মৃত ওদু ছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী ফেরিঘাট এলাকার বাঁশ বাগানের নিচে চারজন বসে তাস খেলছিলেন। হঠাৎ স্থানীয় হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশের টুআইসি এএসআই জাহিদুল ইসলাম দুজন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে ওই চারজনকে ধাওয়া করেন। পুলিশের তাড়া খেয়ে নদীতে দুজন ঝাঁপ দেয়। একজন সাঁতরে ডাঙায় আসলেও তামাক ব্যবসায়ী টোকন মাথাভাঙ্গা নদীর পানি নীচে নিখোঁজ হয়। টোকন সাঁতার না জানায় মাথাভাঙ্গা নদীর পানির তীব্র স্রোতে ভেসে পানির নীচে তলিয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানান, এসময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অপর দুজন নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেন। কিছুক্ষণ পর নাজিম উদ্দিন সাঁতরে ওপারে চলে গেলেও সাঁতার না জানার কারণে টোকন আলী স্রোতের তোড়ে তলিয়ে যান। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিখোঁজ টোকনকে খুঁজতে থাকে গ্রামের মানুষসহ পরিবারের লোকজন। কিন্তু নদীতে পানি বেশি ও তীব্র স্রোতের কারণে কোনোভাবে টোকনকে উদ্ধার করতে না পারায় পরবর্তীতে খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে সংবাদ দেয় আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় খুলনা বিভাগীয় ডুবুরী দল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকাল ৯টা থেকে শুরু করে উদ্ধার অভিযান। একটানা দুই ঘণ্টুা অভিযান পরিচালনার পরও যখন কোনোভাবেই সন্ধান পাওয়া যাওয়া যাচ্ছিল না, তখন ডুবুরী দল স্থানীয়দের সহায়তায় পাশে অবস্থিত কুটুমবাড়ি পার্ক থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবস্থা করে ঘটনাস্থল থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে সন্দেহভাজন স্থানে পানিতে নেমে মাথাভাঙ্গা নদীর প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার অনুসন্ধান চালায় তারা। পরে বেলা দেড়টার দিকে বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ টোকনের লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে ডুবুরী দল।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আসমোতুল্লাহ বলেন, গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাংবাড়িয়া গ্রামের কারিগরপাড়ার ইয়াদুলের ছেলে কবিরুল ইসলাম (২৫), একই পাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে আকছেদ আলী (৪০), মৃত সুন্নত কারিগরের ছেলে নাজিম উদ্দিন (৩২) ও নতুনপাড়ার অদুছদ্দিনের ছেলে টোকন আলী গ্রামের ফেরিঘাট এলাকার একটি বাঁশবাগানে বসে তাস খেলছিল। এসময় হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই জাহিদুলসহ দুজন কনস্টেবল জুয়া খেলার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় কবিরুল ইসলাম ও আকছেদ আলীকে পুলিশ আটক করতে পারলেও নাজিম উদ্দিন ও টোকন আলী পুলিশের তাড়া খেয়ে পাশেই মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাজিম উদ্দিন ফিরে আসলেও টোকনকে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এবং ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় জনগণ পানিতে নেমে অনেক খোঁজাখুজি করে। কিন্তু কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ডুবুরি দলকে খবর দেয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা থেকে ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে এসে ৫ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চলিয়ে পরে মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল হক বলেন, ‘একদল যুবক জুয়া খেলছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। পরে দুজনকে আটক করা হয়। অপর দুজন আমাদের দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। জুয়া খেলার কোনো সাম্যগ্রী না পাওয়ায় আটক দুজনকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেওয়া হয়।’

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার আবুল হাসান মোল্লা বলেন, ‘গত বুধবার আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। কিন্তু নদীর পানি বেশি থাকা ও নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় খুলনায় ডুবুরী দলকে জানানো হয়। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) খুলনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ ডুবুরি দল এসে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান পরিচালনার পর মরদেহ উদ্ধার করে। খুলনা ডুবুরী দলের লিডার শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিনজনের ডুবুরী দল লাশ উদ্ধার করে। সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক রফিকুজ্জামান।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) জানান, ভাংবাড়িয়ায় জুয়া খেলা হচ্ছে, এমন সংবাদ পেয়ে হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। অপর দুজন মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন নদী থেকে উঠলেও অন্যজন নিখোঁজ ছিল। তাকে উদ্ধার করতে ডুবুরী দলকে সংবাদ দেওয়া হলে খুলনা থেকে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে না চাওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। জুয়া খেলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায়। দুজনকে আটক করা হয়েছিল। বাকি দুজন পুলিশের ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। একজন সাঁতরে উঠে আসতে পারলেও টোকন পারেনি। আজ (গতকাল) মরদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরী দল। কোনো আলামত না পাওয়ায় গতকালই আটক দুজনকেই স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দেয় পুলিশ।
এদিকে, তামাক ব্যবসায়ী টোকনের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাবাসী শোকে শোকাহত। টোকন মৃত্যুকালে দুটি কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। বড় কন্যার বয়স ১০ বছর ও ছোট কন্যার বয়স ৫ মাস। টোকনের স্ত্রী বলেন, ‘এখন আমি আমার সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব। আমার সন্তান কাকে বাবা বলে ডাকবে, আমার সন্তান বাবা বলে ডাকার আগেই তার বাবাকে হারালো। কী দোষ করেছে আমার বাঁচ্চা সন্তান, তাই তার কপালে এমন হলো। আমি আমার সন্তান নিয়ে পথে বসে গেলাম, আমাদের দেখার কেউ রইল না।’ এদিকে, গতকালই টোকনের লাশ জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।