ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪০:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা যৌথভাবে স্বাক্ষর করে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম এ অভিযোগের তদন্ত করেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিযোগ থাকলেও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।

৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদা নুসরাত, কমিটির অনান্য সদস্য ও ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গত দুই (২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২) অর্থ বছরে স্লিপ-৭০ হাজার টাকা, রুটিন মেরামত ৪০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিক বাবদ ১০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় গরমিল করেছেন। তিনি কমিটিকে কোনো হিসেব দেখাতে চান না। একই অভিযোগপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে না আসা বা বিদ্যালয় ছুটির আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করা, সরকারি চাকরির পাশাপাশি সুদের ব্যাবসা, ঠিকমতো শ্রেণি পাঠদান না করে দিনের অধিকাংশ সময় বাইরে থাকাসহ ওপর মহলের নাম বলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল বুধবার ওই বিদ্যালয়ে অভিযোগের তদন্তে আসেন আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অসুস্থ থাকার কারণে এ তদন্তে না থাকতে পারলেও কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কমিটির অন্য সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে আরও একটি অভিযোগপত্র দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। ওই অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে কমিটির সদস্য শাহাজুল হক, নাসির উদ্দীন, রুহুল আমিন, জামসেদ আলী খায়রুল ইসলাম, আখতারুজ্জামান, মোজাম্মেল হকসহ ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দারা বলেন, শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়ার পর মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। তবে তাতেও অধিকমূল্য দেখানো হয়েছে। বাথরুম মেরামতের কথা থাকলেও সিমেন্টের কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু রং করা হয়েছে। ফুল বাগানের জন্য অর্থ ব্যয় করেছেন, তবে বাগান বলতে কিছু পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের জন্য কেনা টিভি বাড়িতে ব্যবহার করছেন।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের শিক্ষক এ স্কুলে না থাকায় ভালো। তার ব্যবহার আচরণ কোনোটাই ভালো নয়। স্কুলে টাস ফোন ব্যবহার করে সময় নষ্ট করে। ঠিক মতো ক্লাস নেন না। আমি ক্রয় কমিটির সদস্য। এটা জানি। রেজ্যুলেশনে আমার স্বাক্ষর আছে। তবে কোনো কিছু কেনাকাটায় আমাকে বা কমিটির অন্য সদস্যকে জানানো হয়নি। আমরা জানি না। যে মালামালগুলো তিনি ক্রয় করেছেন, সেগুলোর দাম চড়া মূল্যে দেখানো হয়েছে।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ ছিল। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনায় তদন্তে এসেছিলাম। ম্যানেজিং কমিটির সকলের সামনেই তদন্ত কার্যক্রম করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি আছে। আমি উভয় পক্ষের থেকে লিখিত নিয়েছি। নিজে যাচাই করেছি। বিস্তারিত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেয়া হবে। এসময় ক্রয় কমিটির সাথে আলোচনা করে কেনাকাটা করতে হবে কি না বা এই বিষয়ে কী ধরণের নির্দেশনা আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও ক্রয় কমিটির সাথে আলোচনা করেই কাজ করার নিয়ম।’

৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আমার ব্যবহার খারাপ কি না। এবার যে কাজ করা হয়েছে, আমি বরাদ্দের থেকে বেশি টাকার কাজ করে ফেলেছি। ওনাদের (অভিযোগকারীরা) কাছে জিজ্ঞেস করেছি। আমাকে বলল, জাহাঙ্গীর তুমি ঠিক করে নিও। আমি নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছি। সভাপতি অসুস্থ থাকায় ওনার স্বামীকে বলেছিলাম। তিনি বললেন, জাহাঙ্গীর তুমি কিনে ফেলো। আমি আমার দুই শিক্ষিকাকে সাথে নিয়ে সব ক্রয় করি। আমার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। হাইস্কুলের কমিটি নিয়ে মতভেদ আছে। এরা আগে কখনো আমার কাছে আসেনি। জিজ্ঞেসও করেনি। রেশারেশির কারণে এরকম অভিযোগ করা হচ্ছে।’ বিদ্যালয়ের ৩২ ইঞ্চি টিভি কোনার কিছুদিন পর থেকেই এক শিক্ষিকার বাড়িতে আছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুরি হয়ে যাবার ভয়ে রাখা হয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৭:৪০:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা যৌথভাবে স্বাক্ষর করে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম এ অভিযোগের তদন্ত করেছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিযোগ থাকলেও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।

৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদা নুসরাত, কমিটির অনান্য সদস্য ও ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গত দুই (২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২) অর্থ বছরে স্লিপ-৭০ হাজার টাকা, রুটিন মেরামত ৪০ হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিক বাবদ ১০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটায় গরমিল করেছেন। তিনি কমিটিকে কোনো হিসেব দেখাতে চান না। একই অভিযোগপত্রে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে না আসা বা বিদ্যালয় ছুটির আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করা, সরকারি চাকরির পাশাপাশি সুদের ব্যাবসা, ঠিকমতো শ্রেণি পাঠদান না করে দিনের অধিকাংশ সময় বাইরে থাকাসহ ওপর মহলের নাম বলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল বুধবার ওই বিদ্যালয়ে অভিযোগের তদন্তে আসেন আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অসুস্থ থাকার কারণে এ তদন্তে না থাকতে পারলেও কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কমিটির অন্য সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে আরও একটি অভিযোগপত্র দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। ওই অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে কমিটির সদস্য শাহাজুল হক, নাসির উদ্দীন, রুহুল আমিন, জামসেদ আলী খায়রুল ইসলাম, আখতারুজ্জামান, মোজাম্মেল হকসহ ক্যাচমেন্ট এলাকার বাসিন্দারা বলেন, শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেওয়ার পর মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। তবে তাতেও অধিকমূল্য দেখানো হয়েছে। বাথরুম মেরামতের কথা থাকলেও সিমেন্টের কোনো কাজ করা হয়নি। শুধু রং করা হয়েছে। ফুল বাগানের জন্য অর্থ ব্যয় করেছেন, তবে বাগান বলতে কিছু পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের জন্য কেনা টিভি বাড়িতে ব্যবহার করছেন।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের শিক্ষক এ স্কুলে না থাকায় ভালো। তার ব্যবহার আচরণ কোনোটাই ভালো নয়। স্কুলে টাস ফোন ব্যবহার করে সময় নষ্ট করে। ঠিক মতো ক্লাস নেন না। আমি ক্রয় কমিটির সদস্য। এটা জানি। রেজ্যুলেশনে আমার স্বাক্ষর আছে। তবে কোনো কিছু কেনাকাটায় আমাকে বা কমিটির অন্য সদস্যকে জানানো হয়নি। আমরা জানি না। যে মালামালগুলো তিনি ক্রয় করেছেন, সেগুলোর দাম চড়া মূল্যে দেখানো হয়েছে।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ উল আলম বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ ছিল। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনায় তদন্তে এসেছিলাম। ম্যানেজিং কমিটির সকলের সামনেই তদন্ত কার্যক্রম করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি আছে। আমি উভয় পক্ষের থেকে লিখিত নিয়েছি। নিজে যাচাই করেছি। বিস্তারিত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দেয়া হবে। এসময় ক্রয় কমিটির সাথে আলোচনা করে কেনাকাটা করতে হবে কি না বা এই বিষয়ে কী ধরণের নির্দেশনা আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও ক্রয় কমিটির সাথে আলোচনা করেই কাজ করার নিয়ম।’

৬৯ নম্বর হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন আমার ব্যবহার খারাপ কি না। এবার যে কাজ করা হয়েছে, আমি বরাদ্দের থেকে বেশি টাকার কাজ করে ফেলেছি। ওনাদের (অভিযোগকারীরা) কাছে জিজ্ঞেস করেছি। আমাকে বলল, জাহাঙ্গীর তুমি ঠিক করে নিও। আমি নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছি। সভাপতি অসুস্থ থাকায় ওনার স্বামীকে বলেছিলাম। তিনি বললেন, জাহাঙ্গীর তুমি কিনে ফেলো। আমি আমার দুই শিক্ষিকাকে সাথে নিয়ে সব ক্রয় করি। আমার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। হাইস্কুলের কমিটি নিয়ে মতভেদ আছে। এরা আগে কখনো আমার কাছে আসেনি। জিজ্ঞেসও করেনি। রেশারেশির কারণে এরকম অভিযোগ করা হচ্ছে।’ বিদ্যালয়ের ৩২ ইঞ্চি টিভি কোনার কিছুদিন পর থেকেই এক শিক্ষিকার বাড়িতে আছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুরি হয়ে যাবার ভয়ে রাখা হয়েছে।’