ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

আজ নগর কীর্তনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে মহানামযজ্ঞ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

এ অনুষ্ঠান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় একটি উদাহরণ : জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যজ্ঞস্থলে টানা পাঁচদিন ধরে চলছে মহানাম সংকীর্তন। প্রতি আড়াই ঘণ্টা অর্থাৎ এক প্রহর পরপর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি সম্প্রদায় পালাক্রমে অখণ্ড মহানামযজ্ঞের সংকীর্তন সুধা পরিবেশন করেছে। বার্ষিক এ মহোৎসবকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকাজুড়ে দেশি-বিদেশি গৃহস্থলি ও মনোহরি সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পাশাপাশি নানান রকম মিষ্টির সঙ্গে তেলে ভাজা লোভনীয় সব খাবার এখানে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভক্ত-অনুরাগী ও পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পাঁচদিনের ১১তম ২৪ প্রহরব্যাপী শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন। যা আজ শেষ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহানাম সংকীর্তনের পঞ্চম দিনে সকালের দিকে তেমন একটা জনসমাগম না থাকলেও ঢল নামে বিকেলের পর। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাস-ট্রাক, মাইক্রো-প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। মহানাম সংকীর্তনের পাশাপাশি উন্মুক্ত ভক্তসেবা বা প্রসাদ (খাবার) বিতরণ কার্যক্রমেও বেশ ব্যস্ত দেখা যায় নোঙরখানার রাধুনী ও সেবকদের। একটানা পাঁচ দিনব্যাপী এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও লীলা কীর্তন আজ ১৪ অক্টোবর শুক্রবার সূর্যোদ্বয়ের প্রস্তাবিত যজ্ঞ বিশ্রাম, সকালে নগর কীর্তন, ১০টায় পদাবলী কীর্তন, মধ্যাহ্ন ভোগ আরতি, প্রসাদ বিতরণ ও ভক্তসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী-সন্তানসহ জেলা প্রশাসনের পুরো টিম নিয়ে যজ্ঞ পরিদর্শনে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। যজ্ঞ পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী নামযজ্ঞ হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এখানে আসছেন ও খাবার গ্রহণ করছেন। সারাদিন রান্না হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে তিন বেলায় খাচ্ছেন। যেটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। বাবু দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং তার পরিবারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এই জন্য আমি দিলীপ বাবুকে এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দল-মত ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এখানে আসছেন, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা বাড়াচ্ছে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দাদার এই আয়োজন থেকে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি ম্যাসেজ যেমন যাচ্ছে, ঠিক তেমনি এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক পত্নী মেহনাজ আমীন বলেন, ‘এই মহাআয়োজন দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি।’ একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ এখানে সৃষ্টি হয়েছে। দলে দলে মানুষ আসছেন, দেখছেন ও কীর্তন শুনছেন। এই মহাআয়োজন দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। এরকম আয়োজন আমার প্রথমবার দেখছি, আমার ভালো লাগছে।’
এছাড়া যজ্ঞ পরিদর্শনে আসা চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার পত্নী ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে এরকম আয়োজন আসতে পেরে। বর্তমানে সমাজে সত্যিই একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার ম্যাসেজ দেয় এই আয়োজন।’

এর আগে গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) যজ্ঞের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্ত্রী-সন্তানসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠানে আসেন। সেই সময় তিনি যজ্ঞানুষ্ঠান শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানের আয়োজক বাবু দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পত্নী সবিতা আগরওয়ালা বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে অনুষ্ঠানটি সার্থক করে তোলার জন্য সকল স্তরের মানুষের কাছে আমরা সহযোগিতার চেয়েছিলাম। যেটা পেয়েছি। এজন্য চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এবারের মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন থেকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ম্যাসেজ সবাই পেয়েছে।’

এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা’র বাবা অমিয় প্রসাদ আগরওয়ালা, ছোট ভাই পিণ্টু আগরওয়ালাসহ আগরওয়ালা পরিবারের সকল সদস্যরা উপস্থিত থেকে প্রার্থনা করেছেন। এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করছেন পবিত্র কুমার আগরওয়ালা ও নিরঞ্জন কুমার আগরওয়ালা।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তাঁর পরিবারবর্গ প্রতিবছর এই মহানামযজ্ঞের আয়োজন করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাত সাড়ে ১১টায় মঙ্গলঘট স্থাপন ও সংকল্পযাত্রা করে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ঘটে জল নিয়ে শুভ অধিবাসের মধ্যদিয়ে এই যজ্ঞ শুরু হয়। স্বর্গীয় দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা ও স্বর্গীয় পান্না দেবী এবং স্বর্গীয় তারা দেবীর স্মরণে শুরু হওয়া এই মহানামযজ্ঞ আজ ১৪ অক্টোবর ভোগ আরতি ও প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আজ নগর কীর্তনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে মহানামযজ্ঞ

আপলোড টাইম : ১০:৪২:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০২২

এ অনুষ্ঠান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় একটি উদাহরণ : জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যজ্ঞস্থলে টানা পাঁচদিন ধরে চলছে মহানাম সংকীর্তন। প্রতি আড়াই ঘণ্টা অর্থাৎ এক প্রহর পরপর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৯টি সম্প্রদায় পালাক্রমে অখণ্ড মহানামযজ্ঞের সংকীর্তন সুধা পরিবেশন করেছে। বার্ষিক এ মহোৎসবকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পান্না (রূপছায়া) সিনেমা হল প্রাঙ্গণের বিশাল এলাকাজুড়ে দেশি-বিদেশি গৃহস্থলি ও মনোহরি সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পাশাপাশি নানান রকম মিষ্টির সঙ্গে তেলে ভাজা লোভনীয় সব খাবার এখানে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ভক্ত-অনুরাগী ও পূণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পাঁচদিনের ১১তম ২৪ প্রহরব্যাপী শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন। যা আজ শেষ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মহানাম সংকীর্তনের পঞ্চম দিনে সকালের দিকে তেমন একটা জনসমাগম না থাকলেও ঢল নামে বিকেলের পর। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বাস-ট্রাক, মাইক্রো-প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। মহানাম সংকীর্তনের পাশাপাশি উন্মুক্ত ভক্তসেবা বা প্রসাদ (খাবার) বিতরণ কার্যক্রমেও বেশ ব্যস্ত দেখা যায় নোঙরখানার রাধুনী ও সেবকদের। একটানা পাঁচ দিনব্যাপী এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও লীলা কীর্তন আজ ১৪ অক্টোবর শুক্রবার সূর্যোদ্বয়ের প্রস্তাবিত যজ্ঞ বিশ্রাম, সকালে নগর কীর্তন, ১০টায় পদাবলী কীর্তন, মধ্যাহ্ন ভোগ আরতি, প্রসাদ বিতরণ ও ভক্তসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী-সন্তানসহ জেলা প্রশাসনের পুরো টিম নিয়ে যজ্ঞ পরিদর্শনে আসেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। যজ্ঞ পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী নামযজ্ঞ হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ এখানে আসছেন ও খাবার গ্রহণ করছেন। সারাদিন রান্না হচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে তিন বেলায় খাচ্ছেন। যেটা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়। বাবু দিলীপ কুমার আগরওয়ালা এবং তার পরিবারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এই জন্য আমি দিলীপ বাবুকে এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দল-মত ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এখানে আসছেন, যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা বাড়াচ্ছে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা দাদার এই আয়োজন থেকে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি ম্যাসেজ যেমন যাচ্ছে, ঠিক তেমনি এটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক পত্নী মেহনাজ আমীন বলেন, ‘এই মহাআয়োজন দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি।’ একটি অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ এখানে সৃষ্টি হয়েছে। দলে দলে মানুষ আসছেন, দেখছেন ও কীর্তন শুনছেন। এই মহাআয়োজন দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। এরকম আয়োজন আমার প্রথমবার দেখছি, আমার ভালো লাগছে।’
এছাড়া যজ্ঞ পরিদর্শনে আসা চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার পত্নী ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে এরকম আয়োজন আসতে পেরে। বর্তমানে সমাজে সত্যিই একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার ম্যাসেজ দেয় এই আয়োজন।’

এর আগে গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) যজ্ঞের দ্বিতীয় দিনে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন স্ত্রী-সন্তানসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠানে আসেন। সেই সময় তিনি যজ্ঞানুষ্ঠান শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানের আয়োজক বাবু দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পত্নী সবিতা আগরওয়ালা বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে অনুষ্ঠানটি সার্থক করে তোলার জন্য সকল স্তরের মানুষের কাছে আমরা সহযোগিতার চেয়েছিলাম। যেটা পেয়েছি। এজন্য চুয়াডাঙ্গাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এবারের মহানামযজ্ঞানুষ্ঠান ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন থেকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ম্যাসেজ সবাই পেয়েছে।’

এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা’র বাবা অমিয় প্রসাদ আগরওয়ালা, ছোট ভাই পিণ্টু আগরওয়ালাসহ আগরওয়ালা পরিবারের সকল সদস্যরা উপস্থিত থেকে প্রার্থনা করেছেন। এই মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করছেন পবিত্র কুমার আগরওয়ালা ও নিরঞ্জন কুমার আগরওয়ালা।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ও তাঁর পরিবারবর্গ প্রতিবছর এই মহানামযজ্ঞের আয়োজন করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাত সাড়ে ১১টায় মঙ্গলঘট স্থাপন ও সংকল্পযাত্রা করে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ঘটে জল নিয়ে শুভ অধিবাসের মধ্যদিয়ে এই যজ্ঞ শুরু হয়। স্বর্গীয় দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা ও স্বর্গীয় পান্না দেবী এবং স্বর্গীয় তারা দেবীর স্মরণে শুরু হওয়া এই মহানামযজ্ঞ আজ ১৪ অক্টোবর ভোগ আরতি ও প্রসাদ বিতরণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।