ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

দর্শনা কেরু চিনিকলে আখের বীজ, টিএসপি সার ও কীটনাশকের সংকট

আখ রোপণ ব্যহত, হতাশ কৃষকরা

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৯:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে


দর্শনার কেরু চিনিকল এলাকায় আখ রোপণের ভরা মৌসুমে বীজ, টিএসপি সারসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কীটনাশকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সার না পেয়ে হতাশ কৃষকরা খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে কেরু সার গোডাউন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক কৃষক সার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এরপরেও সার পেতে পারেন, এই আশায় অনেক কৃষক আলমসাধু, ইজিবাইক ও পাখিভ্যানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে আখ রোপণের কাজও ব্যহত হচ্ছে। কেরু চিনিকলের গোডাউন থেকে সার না পাওয়ায় কৃষকদের হতাশা আরও বাড়াচ্ছে। আখ চাষী জিরাট গ্রামের মহাসিন আলী, উজলপুরের রেজাউল, বাদশা মিয়া, আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল, গোলাম আলী, দক্ষিণ চাঁদপুরের বকুল হোসেন এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা জমি প্রস্তুত করেও সার না পাওয়ার কারণে আখ রোপণ করতে পারছেন না। এর ফলে চাষের উপযুক্ত সময় হারিয়ে যাচ্ছে, যা খরচ বাড়াচ্ছে। এবং তাদের মাঠের কাজ ব্যহত হচ্ছে। চাষীরা আরও বলেন, আখের মণ ৩ শ টাকার নিচে হলে চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম পাওয়ায় আমরা জমি প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে সার নেই। কোম্পানির দেয়া সার দিয়ে আমরা আখ চাষ করি, পরে মৌসুম শেষে আখ বিক্রির সময় সারের দাম কেটে নেয়া হয়। এখন আমরা সার পাচ্ছি না, আখ রোপণের উপযুক্ত সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে।’
দক্ষিণ চাঁদপুরের বকুল হোসেন বলেন, আখ রোপণের আগ্রহ পাচ্ছি না এবং আখ লাগাতে মন চাচ্ছে না। প্রতিটি সারের বস্তায় ১-২ কেজি সার কমও থাকে। ২০২১-২২ সালের পর থেকে আখ চাষ প্রায় ৫ গুন কমে গেছে। তিনি বলেন, এবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি আখের মূল্য নির্ধারণ করেছে মণ প্রতি ২৪০ টাকা। বর্তমানে সবচেয়ে আখের মূল্য কম বলে আখ চাষিরা জানায়।
কৃষকরা জানান, সময় মতো মিল থেকে চাষীদের মধ্যে সার এবং বীজ সরবরাহ না করা, মিলে সিডিএ সংকট, বর্তমান বাজার দরের চেয়ে আখের মূল্য কম, উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরাতন একই জাতের আখ সরবরাহ করা, অন্যদিকে ধান, পাট, ভুট্টার ভালো দাম পাওয়াসহ পাঁচ কারণে চাষিরা আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে, আগামী মাড়াই মৌসুমে মিলটি মারাত্মক আখ সংকটে পড়তে পারে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এ পর্যন্ত আখ রোপণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২১ থেকে রোপন মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের ১০টি কৃষি ও পরীক্ষামূলক খামারে মাত্র ৯৮৯ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। বাকি মিল জোন এলাকার চাষীরা রোপণ করেছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। যেখানে গত রোপণ মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও মিল জোন এলাকার আখচাষীরা মিলে ৮ হাজার ৫৩২ একর জমিতে আখ রোপণ করেছিল। যা এ রোপণ মৌসুমে কমেছে ৩ হাজার ৯০৪ দশমিক ৫০ একর।
আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেরু চিনিকল আখচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান ও সহসভাপতি ওমর আলী জানান, প্রতিমণ আখের মূল্য ৩০০ টাকা না করলে আখ চাষ সম্ভব না। তাছাড়া গত রোপণ মৌসুমে চাষীরা সময় মতো সার না পাওয়ায় আখ রোপণ অর্ধেকে নেমেছে। এরপর কেরুর কৃষি খামারের জমি কর্তৃপক্ষ আখ রোপণ না করে সাধারণ কৃষকের কাছে লিজ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কেরুতে এবারই প্রথম আখচাষ এত কম হলো।
এ বিষয়ে কেরু সার গোডাউন ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানান, টিএসপি সার ও কীটনাশকের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গতকাল এক’শ বস্তা সার বিতরণ করেছি, তবে আজ (গতকাল) আর দিতে পারছি না। আশা করছি শিগগিরই নতুন চালান আসবে।’
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘টিএসপি সারের চাহিদা মেটাতে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। খুলনা থেকে জানানো হলে গাড়ি পাঠানো হবে। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক পৌঁছে যাবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দর্শনা কেরু চিনিকলে আখের বীজ, টিএসপি সার ও কীটনাশকের সংকট

আখ রোপণ ব্যহত, হতাশ কৃষকরা

আপলোড টাইম : ০৯:২৯:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪


দর্শনার কেরু চিনিকল এলাকায় আখ রোপণের ভরা মৌসুমে বীজ, টিএসপি সারসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কীটনাশকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সার না পেয়ে হতাশ কৃষকরা খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে কেরু সার গোডাউন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক কৃষক সার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এরপরেও সার পেতে পারেন, এই আশায় অনেক কৃষক আলমসাধু, ইজিবাইক ও পাখিভ্যানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে আখ রোপণের কাজও ব্যহত হচ্ছে। কেরু চিনিকলের গোডাউন থেকে সার না পাওয়ায় কৃষকদের হতাশা আরও বাড়াচ্ছে। আখ চাষী জিরাট গ্রামের মহাসিন আলী, উজলপুরের রেজাউল, বাদশা মিয়া, আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল, গোলাম আলী, দক্ষিণ চাঁদপুরের বকুল হোসেন এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, তারা জমি প্রস্তুত করেও সার না পাওয়ার কারণে আখ রোপণ করতে পারছেন না। এর ফলে চাষের উপযুক্ত সময় হারিয়ে যাচ্ছে, যা খরচ বাড়াচ্ছে। এবং তাদের মাঠের কাজ ব্যহত হচ্ছে। চাষীরা আরও বলেন, আখের মণ ৩ শ টাকার নিচে হলে চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
আকন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম পাওয়ায় আমরা জমি প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে সার নেই। কোম্পানির দেয়া সার দিয়ে আমরা আখ চাষ করি, পরে মৌসুম শেষে আখ বিক্রির সময় সারের দাম কেটে নেয়া হয়। এখন আমরা সার পাচ্ছি না, আখ রোপণের উপযুক্ত সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছে।’
দক্ষিণ চাঁদপুরের বকুল হোসেন বলেন, আখ রোপণের আগ্রহ পাচ্ছি না এবং আখ লাগাতে মন চাচ্ছে না। প্রতিটি সারের বস্তায় ১-২ কেজি সার কমও থাকে। ২০২১-২২ সালের পর থেকে আখ চাষ প্রায় ৫ গুন কমে গেছে। তিনি বলেন, এবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি আখের মূল্য নির্ধারণ করেছে মণ প্রতি ২৪০ টাকা। বর্তমানে সবচেয়ে আখের মূল্য কম বলে আখ চাষিরা জানায়।
কৃষকরা জানান, সময় মতো মিল থেকে চাষীদের মধ্যে সার এবং বীজ সরবরাহ না করা, মিলে সিডিএ সংকট, বর্তমান বাজার দরের চেয়ে আখের মূল্য কম, উন্নত জাতের আখ না দিয়ে পুরাতন একই জাতের আখ সরবরাহ করা, অন্যদিকে ধান, পাট, ভুট্টার ভালো দাম পাওয়াসহ পাঁচ কারণে চাষিরা আখ চাষ কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে, আগামী মাড়াই মৌসুমে মিলটি মারাত্মক আখ সংকটে পড়তে পারে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
মিল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এ পর্যন্ত আখ রোপণ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০২১ থেকে রোপন মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চিনিকলের ১০টি কৃষি ও পরীক্ষামূলক খামারে মাত্র ৯৮৯ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। বাকি মিল জোন এলাকার চাষীরা রোপণ করেছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। যেখানে গত রোপণ মৌসুমে চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও মিল জোন এলাকার আখচাষীরা মিলে ৮ হাজার ৫৩২ একর জমিতে আখ রোপণ করেছিল। যা এ রোপণ মৌসুমে কমেছে ৩ হাজার ৯০৪ দশমিক ৫০ একর।
আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেরু চিনিকল আখচাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান ও সহসভাপতি ওমর আলী জানান, প্রতিমণ আখের মূল্য ৩০০ টাকা না করলে আখ চাষ সম্ভব না। তাছাড়া গত রোপণ মৌসুমে চাষীরা সময় মতো সার না পাওয়ায় আখ রোপণ অর্ধেকে নেমেছে। এরপর কেরুর কৃষি খামারের জমি কর্তৃপক্ষ আখ রোপণ না করে সাধারণ কৃষকের কাছে লিজ দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর কেরুতে এবারই প্রথম আখচাষ এত কম হলো।
এ বিষয়ে কেরু সার গোডাউন ইনচার্জ মাহাবুবুর রহমান জানান, টিএসপি সার ও কীটনাশকের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গতকাল এক’শ বস্তা সার বিতরণ করেছি, তবে আজ (গতকাল) আর দিতে পারছি না। আশা করছি শিগগিরই নতুন চালান আসবে।’
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘টিএসপি সারের চাহিদা মেটাতে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। খুলনা থেকে জানানো হলে গাড়ি পাঠানো হবে। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক পৌঁছে যাবে।’