ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

আকন্দবাড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • / ৮৮ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস:

চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়ায় যুথি খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায় দর্শনা থানার পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া ফার্মপাড়ার তমছেল আলীর মেয়ে যুথি খাতুনের সাথে ৯ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই গ্রামের ঈদগাহ পাড়ার দেলবার ফকিরের ছেলে সেলুন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান। দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সময় তাঁদের মধ্যে কলোহের সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে প্রতিবেশী ইস্রাফিলের মেয়ে প্রিয়ার সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আব্দুর রহমান।

বছর খানেক পূর্বে পরকীয়া প্রেমিকা প্রিয়ার সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আব্দুর রহমান। দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানাজানি হলে প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনের সঙ্গে স্বামী আব্দুর রহমানের কলোহ আরও বেড়ে যায়। এর জেরে যুথি খাতুনকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ করেন যুথির পরিবারের সদস্যরা। এরই এক পর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে যুথি স্বামীর গৃহ ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দীর্ঘদিন প্রথম স্ত্রী যুথি পিতার বাড়ি থাকার পর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রিয়াকে তালাক দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ১৫ দিন আগে আব্দুর রহমান তাঁর প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে নেওয়ার পর আবার শুরু হয় তাঁর ওপর নীরব নির্যাতন।

এদিকে, গত সোমবার আব্দুর রহমান তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রিয়াকে পুনরায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনকে বাইরে রাখেন। তাঁদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘরের আড়াই ঝুলন্ত অবস্থায় যুথি খাতুনের লাশ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী ও স্বজনদের ধারণা, আব্দুর রহমান ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দু’জন মিলে যুথিকে হত্যার পর তাঁর লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে পুলিশ বলছে, ফরেনসিক রিপোর্ট আসলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ছিলেন সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন। তিনি বলেন, ‘দুপুরের পরে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মেডিকেল রিপোর্টের মাধ্যমে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো হবে।’

এবিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ অনুসারে একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এদিকে, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে গ্রামের কবরস্থানে ওই গৃহবধূর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আকন্দবাড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

আপলোড টাইম : ০৮:৩০:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

দর্শনা অফিস:

চুয়াডাঙ্গার আকন্দবাড়িয়ায় যুথি খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তবে ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায় দর্শনা থানার পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া ফার্মপাড়ার তমছেল আলীর মেয়ে যুথি খাতুনের সাথে ৯ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই গ্রামের ঈদগাহ পাড়ার দেলবার ফকিরের ছেলে সেলুন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের। তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান। দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সময় তাঁদের মধ্যে কলোহের সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে প্রতিবেশী ইস্রাফিলের মেয়ে প্রিয়ার সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আব্দুর রহমান।

বছর খানেক পূর্বে পরকীয়া প্রেমিকা প্রিয়ার সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আব্দুর রহমান। দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানাজানি হলে প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনের সঙ্গে স্বামী আব্দুর রহমানের কলোহ আরও বেড়ে যায়। এর জেরে যুথি খাতুনকে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ করেন যুথির পরিবারের সদস্যরা। এরই এক পর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে যুথি স্বামীর গৃহ ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দীর্ঘদিন প্রথম স্ত্রী যুথি পিতার বাড়ি থাকার পর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রিয়াকে তালাক দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ১৫ দিন আগে আব্দুর রহমান তাঁর প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে নেওয়ার পর আবার শুরু হয় তাঁর ওপর নীরব নির্যাতন।

এদিকে, গত সোমবার আব্দুর রহমান তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রিয়াকে পুনরায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং প্রথম স্ত্রী যুথি খাতুনকে বাইরে রাখেন। তাঁদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘরের আড়াই ঝুলন্ত অবস্থায় যুথি খাতুনের লাশ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী ও স্বজনদের ধারণা, আব্দুর রহমান ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দু’জন মিলে যুথিকে হত্যার পর তাঁর লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে পুলিশ বলছে, ফরেনসিক রিপোর্ট আসলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে। ঘটনার পর থেকে ওই গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান পলাতক রয়েছেন।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ছিলেন সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন। তিনি বলেন, ‘দুপুরের পরে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মেডিকেল রিপোর্টের মাধ্যমে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো হবে।’

এবিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ এইচ এম লুৎফর রহমান বলেন, এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ অনুসারে একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। এদিকে, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টার দিকে গ্রামের কবরস্থানে ওই গৃহবধূর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।