ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

হত্যার আসামির দ্রুত জামিন; জনমনে বিস্ময় ও কৌতূহল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তারের তিন দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানোর পর দিনই ছয় মামলায় জামিন দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে হাজতখানা থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে জামিন দেন। এমন ঘটনা খুবই বিরল। সে জন্যই বিষয়টি জনমনে একই সাথে বিস্ময় ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
সাবেরের জামিন আদেশের পর আদালত কক্ষেই বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনে বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু হত্যা মামলার আসামি এত দ্রুত ছাড়া পেয়ে গেলে তা খারাপ বার্তা বয়ে আনে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সদ্যই স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের শ্বাসরুদ্ধকর ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান অনেকের কাছেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার শামিল। স্বাভাবিকভাবেই দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, ফ্যাসিস্টের পতনের পর দেশে আইনের শাসন নিরঙ্কুশ প্রতিষ্ঠা পাবে। স্বৈরাচারের প্রতিটি দোসরের সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হবে এবং দেশে আইন-আদালত সবরকম হস্তক্ষেপ ও প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। সে আশাবাদ যেন মøান হয়ে আসছে।
সাবের চৌধুরীর জামিন আইনের চোখে নিশ্চয়ই অন্যায্য নয়। একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, অপরাধ যা-ই থাকুক, স্বাস্থ্যগত কারণে যে কেউ জামিন পেতে পারেন, সেটিই আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন। আরো যারা কারাগারে রয়েছেন, তারাও জামিন পাবেন বলে আশা করেন তিনি। কিন্তু সাবের চৌধুরী ছাড়াও অন্তত অর্ধডজন সাবেক আওয়ামী মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়। তারাও স্বাস্থ্যগত কারণে জামিনের আবেদন করেন। সে সব আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের এলাকায় সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করে। সাবেরের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি; বরং আদালত চত্বরে ক্ষুব্ধ মানুষ তাকে অপদস্ত করেছে। এ কারণেই জনমনে বিস্ময় ও কৌতূহলের জন্ম। এ ঘটনায় কেউ কেউ ২০২৩ সালের নভেম্বরে ফ্যাসিস্ট শাসনাধীন বিচারাদালতে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জামিন পাওয়া এবং পরের দিনই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের অমার্জিত ‘হ্যাডম’ দেখানোর ঘটনা মনে করছেন। রাজনৈতিক ময়দানের গোপন সমঝোতা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উচ্চ আদালতে ফ্যাসিবাদের নগ্ন হস্তক্ষেপই তখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্বৈরাচারের দোসর বিচারকরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিক’।
জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতনের মধ্য দিয়ে সেই মাৎস্যন্যায়ের যুগের অবসান হয়েছে বলেই দেশবাসীর ধারণা। আমরা মনে করি না, আদালতের কার্যক্রমে এখনো বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বা প্রভাব আছে। কিন্তু এই ঘটনাটি জনগণের বিপ্লবোত্তর আশাবাদের জায়গাটিকে আহত করেছে। আশাবাদী মানুষের কাছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। সব ক্ষেত্রে বহাল তবিয়তে থাকা ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এতে নতুন আস্ফালনের উদ্দীপনা পাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হত্যার আসামির দ্রুত জামিন; জনমনে বিস্ময় ও কৌতূহল

আপলোড টাইম : ০৯:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী গ্রেপ্তারের তিন দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। হত্যা মামলাসহ ছয়টি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানোর পর দিনই ছয় মামলায় জামিন দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে হাজতখানা থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাকে জামিন দেন। এমন ঘটনা খুবই বিরল। সে জন্যই বিষয়টি জনমনে একই সাথে বিস্ময় ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
সাবেরের জামিন আদেশের পর আদালত কক্ষেই বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনে বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু হত্যা মামলার আসামি এত দ্রুত ছাড়া পেয়ে গেলে তা খারাপ বার্তা বয়ে আনে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সদ্যই স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের শ্বাসরুদ্ধকর ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান অনেকের কাছেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার শামিল। স্বাভাবিকভাবেই দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, ফ্যাসিস্টের পতনের পর দেশে আইনের শাসন নিরঙ্কুশ প্রতিষ্ঠা পাবে। স্বৈরাচারের প্রতিটি দোসরের সব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হবে এবং দেশে আইন-আদালত সবরকম হস্তক্ষেপ ও প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। সে আশাবাদ যেন মøান হয়ে আসছে।
সাবের চৌধুরীর জামিন আইনের চোখে নিশ্চয়ই অন্যায্য নয়। একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, অপরাধ যা-ই থাকুক, স্বাস্থ্যগত কারণে যে কেউ জামিন পেতে পারেন, সেটিই আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন। আরো যারা কারাগারে রয়েছেন, তারাও জামিন পাবেন বলে আশা করেন তিনি। কিন্তু সাবের চৌধুরী ছাড়াও অন্তত অর্ধডজন সাবেক আওয়ামী মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়। তারাও স্বাস্থ্যগত কারণে জামিনের আবেদন করেন। সে সব আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের এলাকায় সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করে। সাবেরের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটেনি; বরং আদালত চত্বরে ক্ষুব্ধ মানুষ তাকে অপদস্ত করেছে। এ কারণেই জনমনে বিস্ময় ও কৌতূহলের জন্ম। এ ঘটনায় কেউ কেউ ২০২৩ সালের নভেম্বরে ফ্যাসিস্ট শাসনাধীন বিচারাদালতে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের জামিন পাওয়া এবং পরের দিনই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের অমার্জিত ‘হ্যাডম’ দেখানোর ঘটনা মনে করছেন। রাজনৈতিক ময়দানের গোপন সমঝোতা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উচ্চ আদালতে ফ্যাসিবাদের নগ্ন হস্তক্ষেপই তখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্বৈরাচারের দোসর বিচারকরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিক’।
জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতনের মধ্য দিয়ে সেই মাৎস্যন্যায়ের যুগের অবসান হয়েছে বলেই দেশবাসীর ধারণা। আমরা মনে করি না, আদালতের কার্যক্রমে এখনো বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বা প্রভাব আছে। কিন্তু এই ঘটনাটি জনগণের বিপ্লবোত্তর আশাবাদের জায়গাটিকে আহত করেছে। আশাবাদী মানুষের কাছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে গেছে তাতে সন্দেহ নেই। সব ক্ষেত্রে বহাল তবিয়তে থাকা ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এতে নতুন আস্ফালনের উদ্দীপনা পাবে।