ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:

জীবননগরে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন এক নারী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে প্রেমিক পুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলামের (৪২) বাড়িতে অবস্থান নেন ওই নারী। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করাই জহুরুল মাস্টারের ভাইয়েরা তাঁকে মারধর করেন। অত্যাচার সহ্য করেও স্ত্রীর স্বীকৃতির পাওয়ার জন্য সেখানেই অবস্থান করছেন ওই নারী।

        ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের কয়া গ্রামের মো. ইছাহাক আলীর ছেলে পুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ছয় বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই নারীর। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন শিক্ষক জহুরুল। পরে নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং টাকা আয়ের জন্য ওই নারীকে জর্ডানে পাঠান। সেখানে যেয়ে ওই নারী তাঁর আয় করা ৬ লাখ টাকা জহুরুল মাস্টারের অ্যাকাউন্টে পাঠান। বিদেশ থেকে বাড়ি এসে বিয়ের কথা বললে জহুরুল মাস্টার গত ১লা জানুয়ারি ১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জীবননগর পৌরসভার আশতলা পাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে ওই নারীকে রাখেন। ১০ দিন আগে তাঁর কাছে রাখা টাকার হিসাব চাইলে জহুরুল মাস্টার হিসাব না দিয়ে চলে যান।

        পরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর মর্যাদা পেতে তাঁর বাড়ি গেলে জহুরুল মাস্টার, তাঁর ভাই ও তাঁর স্ত্রী মিলে ওই নারীকে মারধর করে। এ বিষয়ে ওই নারী জহুরুল মাস্টারের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

        সীমান্ত ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ মাসের প্রথম দিকে তাদের বিয়ে হয়েছে বলে ওই নারী আমাকে জানায় এবং বিয়ের সমস্থ কাগজপত্র আমাকে দেখায়। আমি জহুরুল মাস্টারের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু সে এসব অস্বীকার করছে।’

        সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই নারী তাঁর স্বামী জহুরুল মাস্টারের বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। ওই নারী  বলেন, ‘আমার সঙ্গে জহুরুল মাস্টারের বিয়ে হয়েছে। আমাকে স্ত্রী হিসেবে না মানলে আমি বিষপান করে আত্মহত্যা করব।’

        স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর সঙ্গে জহুরুল মাস্টারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এর আগে গ্রামে বেশ কয়েকবার আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনগণের হাতে ধরা পড়ে এবং বিচারও হয়। তা ছাড়া জহুরুল মাস্টারের বিরুদ্ধে এ ধরণের অনৈতিক কাজের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

        এদিকে, স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় জহুরুল মাস্টারের বাড়িতে যেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই নারী। এসময় স্থানীয় জনগণ তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

        এ ব্যাপারে জহুরুল মাস্টারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বিয়ে করেছি, এটা সঠিক। কিন্তু আমি তার টাকা আত্মসাৎ করিনি। তাছাড়া আমি তাকে দেনমোহরসহ তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়েছি।’

        জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বলেন, কয়া গ্রামের সাবানা নামের একটি নারী কীটনাশক পান করলে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে চিকিৎসা প্রদান করে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

        জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, এ ব্যাপারে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেয়ে নারীর আত্মহত্যার চেষ্টা!

আপলোড টাইম : ০৪:০৫:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২

জীবননগর অফিস:

জীবননগরে স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করছেন এক নারী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে প্রেমিক পুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলামের (৪২) বাড়িতে অবস্থান নেন ওই নারী। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করাই জহুরুল মাস্টারের ভাইয়েরা তাঁকে মারধর করেন। অত্যাচার সহ্য করেও স্ত্রীর স্বীকৃতির পাওয়ার জন্য সেখানেই অবস্থান করছেন ওই নারী।

        ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের কয়া গ্রামের মো. ইছাহাক আলীর ছেলে পুড়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ছয় বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই নারীর। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন শিক্ষক জহুরুল। পরে নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং টাকা আয়ের জন্য ওই নারীকে জর্ডানে পাঠান। সেখানে যেয়ে ওই নারী তাঁর আয় করা ৬ লাখ টাকা জহুরুল মাস্টারের অ্যাকাউন্টে পাঠান। বিদেশ থেকে বাড়ি এসে বিয়ের কথা বললে জহুরুল মাস্টার গত ১লা জানুয়ারি ১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর জীবননগর পৌরসভার আশতলা পাড়ায় একটি বাড়ি ভাড়া করে সেখানে ওই নারীকে রাখেন। ১০ দিন আগে তাঁর কাছে রাখা টাকার হিসাব চাইলে জহুরুল মাস্টার হিসাব না দিয়ে চলে যান।

        পরে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর মর্যাদা পেতে তাঁর বাড়ি গেলে জহুরুল মাস্টার, তাঁর ভাই ও তাঁর স্ত্রী মিলে ওই নারীকে মারধর করে। এ বিষয়ে ওই নারী জহুরুল মাস্টারের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানান।

        সীমান্ত ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ মাসের প্রথম দিকে তাদের বিয়ে হয়েছে বলে ওই নারী আমাকে জানায় এবং বিয়ের সমস্থ কাগজপত্র আমাকে দেখায়। আমি জহুরুল মাস্টারের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু সে এসব অস্বীকার করছে।’

        সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই নারী তাঁর স্বামী জহুরুল মাস্টারের বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। ওই নারী  বলেন, ‘আমার সঙ্গে জহুরুল মাস্টারের বিয়ে হয়েছে। আমাকে স্ত্রী হিসেবে না মানলে আমি বিষপান করে আত্মহত্যা করব।’

        স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীর সঙ্গে জহুরুল মাস্টারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এর আগে গ্রামে বেশ কয়েকবার আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় জনগণের হাতে ধরা পড়ে এবং বিচারও হয়। তা ছাড়া জহুরুল মাস্টারের বিরুদ্ধে এ ধরণের অনৈতিক কাজের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

        এদিকে, স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় জহুরুল মাস্টারের বাড়িতে যেয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই নারী। এসময় স্থানীয় জনগণ তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

        এ ব্যাপারে জহুরুল মাস্টারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বিয়ে করেছি, এটা সঠিক। কিন্তু আমি তার টাকা আত্মসাৎ করিনি। তাছাড়া আমি তাকে দেনমোহরসহ তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়েছি।’

        জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদ বিন হেদায়েত সেতু বলেন, কয়া গ্রামের সাবানা নামের একটি নারী কীটনাশক পান করলে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাকে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে চিকিৎসা প্রদান করে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

        জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল খালেক বলেন, এ ব্যাপারে জীবননগর থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।