ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

বহুল আলোচিত বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল, তা আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এলো। সংবিধানে এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল হলো। এ রায়ের ফলে দীর্ঘ ৮ বছর পর নিষ্পত্তি হলো আপিলের রিভিউ। গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রায় ঘোষণার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিল। আদালতের রায়ের কারণে এই কনফিউশনটা দূর হয়েছে। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এখন পুরোপুরি অপারেশনাল করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের হাইকোর্টে কিছু বিচারক আছেন, তাদের ব্যাপারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রচুর কমপ্লেইন রয়েছে।
তারা জুলাই গণবিপ্লবে যে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল, সেই শক্তির নিপীড়ক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন। কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এজন্য ছাত্র-জনতার অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। এখন এ সমস্ত ক্ষোভ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার পথ খুলে গেছে। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান জানান, এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের পদত্যাগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণ করবেন।
আদালতে পিনপতন নীরবতা:
শুনানির উপলক্ষে আদালতে ছিল পিনপতন নীরবতা। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে প্রবেশ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদেও নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতি। আদালত বসার পর প্রথমেই মেনশন আইটেমগুলো শোনা হয়। এরপর সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে ১ নম্বর আইটেম অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ মামলার ওপর শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক এ মামলার শুনানি করতে এসে পুরনে স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমার প্রয়াত সিনিয়র ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ এই রিভিউ আবেদনের ৪৪টি গ্রাউন্ড আছে শোনার পর বলেছিলেন, রিভিউ আবেদনে যখন এত গ্রাউন্ড থাকে, তখন তা গ্রাউন্ডলেস। এখন সাপ্লিমেন্টারিসহ মোট ৯৪টি গ্রাউন্ড রয়েছে। আমি একটি পড়ব।’
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ ষোড়শ সংশোধনীকে কীভাবে হস্তক্ষেপ করছে? আপনারা রিভিউ ফিরিয়ে নেবেন না?’ অ্যাটর্নি জবাবে বলেন, ‘না।’ এরপর এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি গ্রাউন্ডের ওপর শুনানি করেন। ১৯৭২ সাল থেকে কীভাবে বিচারপতি রেজিগনেশন হয়েছে তার ডকুমেন্টস তুলে ধরে বলেন, ‘বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করতে পারবেন। অপসারণের বিষয়ে আমরা এডিশনাল গ্রাউন্ড নিয়েছি। কেননা, আগে রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ করেছে, তার গ্রাউন্ডগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং আমি মনে করি, এগুলোর দরকার নেই।’
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পরও সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ছিল। কিন্তু আগের আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এটা মানেন না। তার মতামত ছিল অভিশংসন সংসদ করবে।’ বারের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন। তিনি আপিলের রায়ের অপারেটিং পার্ট পড়ে শোনান। ২০০৮ ও ২০১৬ সালে দুটি সংবিধানের কপি তুলে ধরে বলেন, ‘সংবিধান বিক্রির জন্য না। কিন্তু বাজারে বিক্রি করে, বাজারে পাওয়া যায়। যে যেমন পারছে বিক্রি করছে। জাতির সঙ্গে প্রতারণা চলছে।
আদালত জানতে চান, ‘পরবর্তীকালে অভিশংসন নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা দেখা দিলে করণীয় কী হবে?’ জবাবে কাজল বলেন, ‘আপনারা চাইলে নতুন করে কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। জাজেস কোড অব কনডাক্টকে তারা কাউন্সিলে এনেছে।’ তখন মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মূল টার্গেট ছিল বিচারপতিদের কীভাবে অপসারণ করা যায়। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কি না তা প্রশ্ন ছিল। এরপর আদালত ১০টা ৫১ মিনিটে রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন। পর্যবেক্ষণে আদালত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২-৮ উপ-অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনেন।
জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে:
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানিতে মত দিয়েছেন সিনিয়র অ্যাভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি জানান, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ (২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮) অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে। আর পর্যবেক্ষণসহ রিভিউ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। শুনানিতে অংশ নেওয়া সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই রায়ের ফলে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রইল এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফিরল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন। বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেওয়া সে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছিল।
আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর ৯ অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
যেভাবে কাজ করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল:
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ নিষ্পত্তির পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বহাল করা হয়েছে। এখন এই কাউন্সিলের কার্যক্রম কেমন হবে সে বিষয়টি খোলাসা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রিভিউ নিষ্পত্তির পর গতকাল রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে কোনো অভিযোগ করলে বা পেলে তারা প্রাথমিক একটি অনুসন্ধান করবেন। যাচাই-বাছাই করে দেখবেন যে, অসদাচরণ বা দুর্নীতি (অর্থনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক) পাওয়া গেছে কি না। তাহলে রিপোর্টটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি বিচার-বিবেচনা করে তারপর আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে পাঠাবেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল তখন পূর্ণ তদন্ত করবেন। এখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির। তবে এখানে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেকানিক্যাল। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব হলো অসদাচরণ প্রমাণিত হয়েছে কি না, এটাসহ সুপারিশ পাঠানো। অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এ পর্যন্ত একজন বিচারপতিকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। সেটা ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল হয়েছিল।
ষোড়শ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বাতিলের আগে সংবিধানের এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (২) অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলী অনুযায়ী ব্যতীত কোনো বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না। (৩) একটি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে, তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোনো সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এইরূপ কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন, অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কার্য করিতে অসমর্থ্য হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাহারা সদস্য আছেন তাঁহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসেবে কার্য করিবেন।
বিচার বিভাগ দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থকে বেরিয়ে এলো:
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের মধ্যদিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় গেল বলে উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থেকেও বিচার বিভাগ বেরিয়ে এলো। গতকাল রোববার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই রায়টি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক। এ রায়ের ফলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় গেল এবং দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এলো। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফেরা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের ওপর ঐতিহাসিক একটি দায়িত্ব অর্পিত হলো। তারা যেন তাদের এই শক্তি, মেরুদন্ড সোজা রেখে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন। যদি তারা (বিচার বিভাগ) এটিকে কাজে না লাগান তা হলে ইতিহাস তার বিচার করবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল

আপলোড টাইম : ০৮:০৩:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

বহুল আলোচিত বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল, তা আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এলো। সংবিধানে এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল হলো। এ রায়ের ফলে দীর্ঘ ৮ বছর পর নিষ্পত্তি হলো আপিলের রিভিউ। গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রায় ঘোষণার পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এটা নিয়ে কিছুটা কনফিউশন ছিল। আদালতের রায়ের কারণে এই কনফিউশনটা দূর হয়েছে। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এখন পুরোপুরি অপারেশনাল করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের হাইকোর্টে কিছু বিচারক আছেন, তাদের ব্যাপারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রচুর কমপ্লেইন রয়েছে।
তারা জুলাই গণবিপ্লবে যে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল, সেই শক্তির নিপীড়ক যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন। কারও কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। এজন্য ছাত্র-জনতার অনেকের ক্ষোভ রয়েছে। এখন এ সমস্ত ক্ষোভ সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার পথ খুলে গেছে। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান জানান, এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে তা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, বিচারপতিদের পদত্যাগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণ করবেন।
আদালতে পিনপতন নীরবতা:
শুনানির উপলক্ষে আদালতে ছিল পিনপতন নীরবতা। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় আপিল বিভাগে প্রবেশ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদেও নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতি। আদালত বসার পর প্রথমেই মেনশন আইটেমগুলো শোনা হয়। এরপর সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে ১ নম্বর আইটেম অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ মামলার ওপর শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক এ মামলার শুনানি করতে এসে পুরনে স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমার প্রয়াত সিনিয়র ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ এই রিভিউ আবেদনের ৪৪টি গ্রাউন্ড আছে শোনার পর বলেছিলেন, রিভিউ আবেদনে যখন এত গ্রাউন্ড থাকে, তখন তা গ্রাউন্ডলেস। এখন সাপ্লিমেন্টারিসহ মোট ৯৪টি গ্রাউন্ড রয়েছে। আমি একটি পড়ব।’
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ ষোড়শ সংশোধনীকে কীভাবে হস্তক্ষেপ করছে? আপনারা রিভিউ ফিরিয়ে নেবেন না?’ অ্যাটর্নি জবাবে বলেন, ‘না।’ এরপর এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি গ্রাউন্ডের ওপর শুনানি করেন। ১৯৭২ সাল থেকে কীভাবে বিচারপতি রেজিগনেশন হয়েছে তার ডকুমেন্টস তুলে ধরে বলেন, ‘বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করতে পারবেন। অপসারণের বিষয়ে আমরা এডিশনাল গ্রাউন্ড নিয়েছি। কেননা, আগে রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ করেছে, তার গ্রাউন্ডগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং আমি মনে করি, এগুলোর দরকার নেই।’
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের পরও সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ছিল। কিন্তু আগের আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এটা মানেন না। তার মতামত ছিল অভিশংসন সংসদ করবে।’ বারের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতের অনুমতি নিয়ে শুনানি করেন। তিনি আপিলের রায়ের অপারেটিং পার্ট পড়ে শোনান। ২০০৮ ও ২০১৬ সালে দুটি সংবিধানের কপি তুলে ধরে বলেন, ‘সংবিধান বিক্রির জন্য না। কিন্তু বাজারে বিক্রি করে, বাজারে পাওয়া যায়। যে যেমন পারছে বিক্রি করছে। জাতির সঙ্গে প্রতারণা চলছে।
আদালত জানতে চান, ‘পরবর্তীকালে অভিশংসন নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা দেখা দিলে করণীয় কী হবে?’ জবাবে কাজল বলেন, ‘আপনারা চাইলে নতুন করে কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। জাজেস কোড অব কনডাক্টকে তারা কাউন্সিলে এনেছে।’ তখন মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মূল টার্গেট ছিল বিচারপতিদের কীভাবে অপসারণ করা যায়। এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কি না তা প্রশ্ন ছিল। এরপর আদালত ১০টা ৫১ মিনিটে রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন। পর্যবেক্ষণে আদালত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২-৮ উপ-অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনেন।
জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে:
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন শুনানিতে মত দিয়েছেন সিনিয়র অ্যাভোকেট রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি জানান, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ (২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮) অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে। আর পর্যবেক্ষণসহ রিভিউ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের কোনো অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। শুনানিতে অংশ নেওয়া সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই রায়ের ফলে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রইল এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফিরল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন। বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেওয়া সে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চাওয়া হয়েছিল।
আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর ৯ অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ এফ এম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
যেভাবে কাজ করে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল:
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রিভিউ নিষ্পত্তির পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বহাল করা হয়েছে। এখন এই কাউন্সিলের কার্যক্রম কেমন হবে সে বিষয়টি খোলাসা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রিভিউ নিষ্পত্তির পর গতকাল রোববার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে কোনো অভিযোগ করলে বা পেলে তারা প্রাথমিক একটি অনুসন্ধান করবেন। যাচাই-বাছাই করে দেখবেন যে, অসদাচরণ বা দুর্নীতি (অর্থনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক) পাওয়া গেছে কি না। তাহলে রিপোর্টটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি বিচার-বিবেচনা করে তারপর আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে পাঠাবেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল তখন পূর্ণ তদন্ত করবেন। এখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির। তবে এখানে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেকানিক্যাল। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব হলো অসদাচরণ প্রমাণিত হয়েছে কি না, এটাসহ সুপারিশ পাঠানো। অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, এ পর্যন্ত একজন বিচারপতিকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। সেটা ২০০৪ সালের ২০ এপ্রিল হয়েছিল।
ষোড়শ সংশোধনীতে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বাতিলের আগে সংবিধানের এ সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (২) অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলী অনুযায়ী ব্যতীত কোনো বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না। (৩) একটি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে, তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোনো সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এইরূপ কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন, অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কার্য করিতে অসমর্থ্য হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাহারা সদস্য আছেন তাঁহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসেবে কার্য করিবেন।
বিচার বিভাগ দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থকে বেরিয়ে এলো:
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের মধ্যদিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় গেল বলে উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থেকেও বিচার বিভাগ বেরিয়ে এলো। গতকাল রোববার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অবশ্যই রায়টি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক। এ রায়ের ফলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় গেল এবং দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এলো। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফেরা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের ওপর ঐতিহাসিক একটি দায়িত্ব অর্পিত হলো। তারা যেন তাদের এই শক্তি, মেরুদন্ড সোজা রেখে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন। যদি তারা (বিচার বিভাগ) এটিকে কাজে না লাগান তা হলে ইতিহাস তার বিচার করবে।