ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সারা দেশের সব মেয়র-চেয়ারম্যান অপসারণ

তালিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদসহ ৪ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৪ পৌর মেয়র

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪২:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

দেশের সব সিটি করপোরেশন, ৪৯৫ উপজেলা পরিষদ, ৬১টি জেলা পরিষদ ও ৩৩০টি পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভোটারবিহীন এসব জনপ্রতিনিধিরা এতদিন জবরদস্তির নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট পদে আসীন ছিলেন। অপসারিত মেয়র ও চেয়ারম্যানরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাদ পড়ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রজমান মনজু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম মঞ্জিলুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, দর্শনা পৌর মেয়র আতিয়ার রহমান হাবু ও জীবননগর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও অপসারণ করেছে সরকার।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আলমডাঙ্গা উপজেলায় আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দামুড়হুদা উপজেলায় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জীবননগর উপজেলায় জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, আলমডাঙ্গা পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), দর্শনা পৌরসভায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) দামুড়হুদা ও জীবননগর পৌরসভায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীবননগর।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সিটি করপোরেশনে মেয়রদের অপসারণ করা হলেও কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসক থাকলে কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবে কি করবে না, সেটা এখন তাদের ব্যাপার। মূল কথা হচ্ছে, মেয়র এবং চেয়ারম্যানের জায়গায় প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করব। এখানে মার মার কাট কাটের কোনো বিষয় নেই। এটি সমগ্র স্থানীয় সরকারকে পরিচ্ছন্ন করার একটি প্রচেষ্টা।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। ফলে পুরোনো ধ্যানধারণা মানসিকতা সম্পন্ন এসব জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে রাখার কোনো সুযোগ ছিল না। এসব জনপ্রতিনিধি দিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হতো না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় একতরফা নির্বাচন করে নিজের লোকদের জনপ্রতিনিধি করা হয়। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত এসব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বর্জন করেছিল। অনিয়মে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে জনসেবার পরিবর্তে জনগণকে হয়রানি করতেন। স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জিম্মি করে রেখেছিলেন।

ইউপি ব্যাপারে সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা পবন চৌধুরী বলেন, ইউপির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি। গত শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

অপসারিত মেয়ররা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, কুমিল্লা সিটির মেয়র তাহসীন বাহারকে অপসারণ করা হয়েছে।

প্রশাসক নিয়োগের আদেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলীকে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহমুদুল হাসানকে। আর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কমিশনারদের দেওয়া হয়েছে ওই সব সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বোর্ড) মহাপরিচালককে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে।

অন্যদিকে দেশের ৪৯৫টি উপজেলাতেই সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৯৩ জন চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। আর খুলনার কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা মারা যাওয়াই শূন্য ঘোষণা করা হয় তার পদটি। দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এদিকে গত ১৮ আগস্ট নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে ঐ পদ শূন্য ঘোষণা করে সেই পদেও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের সব জেলায় ৬১ জন প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। আটটি জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) এবং ৫৩টি জেলা পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।

দেশের ৩৩০ পৌরসভাতেই প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন পদবির সরকারি কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পেয়েছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর আগে ৩২৩ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। বাকি সাত পৌরসভায় আগে থেকে প্রশাসক ছিল, যাদেরকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আইন সংশোধনের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সারা দেশের সব মেয়র-চেয়ারম্যান অপসারণ

তালিকায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদসহ ৪ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৪ পৌর মেয়র

আপলোড টাইম : ১০:৪২:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

দেশের সব সিটি করপোরেশন, ৪৯৫ উপজেলা পরিষদ, ৬১টি জেলা পরিষদ ও ৩৩০টি পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভোটারবিহীন এসব জনপ্রতিনিধিরা এতদিন জবরদস্তির নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট পদে আসীন ছিলেন। অপসারিত মেয়র ও চেয়ারম্যানরা অধিকাংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাদ পড়ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রজমান মনজু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কে এম মঞ্জিলুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক, আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, দর্শনা পৌর মেয়র আতিয়ার রহমান হাবু ও জীবননগর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও অপসারণ করেছে সরকার।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আলমডাঙ্গা উপজেলায় আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দামুড়হুদা উপজেলায় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জীবননগর উপজেলায় জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, আলমডাঙ্গা পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), দর্শনা পৌরসভায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) দামুড়হুদা ও জীবননগর পৌরসভায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীবননগর।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সিটি করপোরেশনে মেয়রদের অপসারণ করা হলেও কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসক থাকলে কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবে কি করবে না, সেটা এখন তাদের ব্যাপার। মূল কথা হচ্ছে, মেয়র এবং চেয়ারম্যানের জায়গায় প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করব। এখানে মার মার কাট কাটের কোনো বিষয় নেই। এটি সমগ্র স্থানীয় সরকারকে পরিচ্ছন্ন করার একটি প্রচেষ্টা।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন-সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। ফলে পুরোনো ধ্যানধারণা মানসিকতা সম্পন্ন এসব জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে রাখার কোনো সুযোগ ছিল না। এসব জনপ্রতিনিধি দিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হতো না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় একতরফা নির্বাচন করে নিজের লোকদের জনপ্রতিনিধি করা হয়। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত এসব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বর্জন করেছিল। অনিয়মে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নানাভাবে জনসেবার পরিবর্তে জনগণকে হয়রানি করতেন। স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জিম্মি করে রেখেছিলেন।

ইউপি ব্যাপারে সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা পবন চৌধুরী বলেন, ইউপির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি। গত শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

অপসারিত মেয়ররা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, কুমিল্লা সিটির মেয়র তাহসীন বাহারকে অপসারণ করা হয়েছে।

প্রশাসক নিয়োগের আদেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মহ. শের আলীকে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহমুদুল হাসানকে। আর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কমিশনারদের দেওয়া হয়েছে ওই সব সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বোর্ড) মহাপরিচালককে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে।

অন্যদিকে দেশের ৪৯৫টি উপজেলাতেই সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর আগে ৪৯৩ জন চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়। আর খুলনার কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম মোহসিন রেজা মারা যাওয়াই শূন্য ঘোষণা করা হয় তার পদটি। দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এদিকে গত ১৮ আগস্ট নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে ঐ পদ শূন্য ঘোষণা করে সেই পদেও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের সব জেলায় ৬১ জন প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। আটটি জেলা পরিষদে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) এবং ৫৩টি জেলা পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন।

দেশের ৩৩০ পৌরসভাতেই প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন পদবির সরকারি কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পেয়েছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর আগে ৩২৩ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। বাকি সাত পৌরসভায় আগে থেকে প্রশাসক ছিল, যাদেরকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আইন সংশোধনের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।