ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের পালানোর নিরাপদ রুট যেন মহেশপুর সীমান্ত 

সাবেক মন্ত্রী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আটক ৩২৬

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালানোর নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে একাধিক মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে প্রায় ২০০ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। লাখ লাখ টাকা নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের পার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বিজিবির হাতে হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা, রোহিঙ্গা নারী ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাসহ ৩২৬ জন আটক হয়েছেন। আটক হয়েছেন ১৪ মানব পাচারকারী। তবে সীমান্তের মানুষরা বলছেন, মহেশপুর ৫৮ বিজিবি’র হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের থেকেও কয়েক গুণ বেশি মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর ও লড়াইঘাট এলাকা দিয়ে মানবপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশ পরগণার বাগদা থানা রয়েছে। আর বাংলাদেশের অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা। ভারতের সঙ্গে ঝিনাইদহের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ কিলোমিটার জুড়ে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা থাকায় মানব পাচারকারীরা এই অংশ নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিজিবির টহল থাকার পরও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে অপরাধীসহ নানা পেশার মানুষ ভারতে পাচার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহের আইনজীবী অ্যাড জাকারিয়া মিলন জানান, বাংলাদেশিরা পাসপোর্টবিহীন কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার সময় আটক হলে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলা হয়। আর এই মামলার সাজা ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০০ শত টাকা জরিমানা। ফলে আটক আসামিরা সহজেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। আইন ও শাস্তির কঠোরতা না থাকায় অবৈধ পথে ভারতে আসা-যাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আইনজীবী শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু জানান, ভারত বা অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা বিধান আছে। তাই এ দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। দুই আইনেই অপরাধীর সাজা ও জরিমানা কম এবং জামিনযোগ্য হওয়ায় ধরা পড়লেও আসামি জামিনে বেরিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ধরতে নিরুৎসাহিত হয়ে থাকেন। তাই আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহেশপুর খালিশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. আজিজুস শহিদ জানান, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মহেশপুরের সঙ্গে ভারতের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে তারকাঁটার বেড়া। আর বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। তিনি আরও বলেন, ‘পাচার শতভাগ বন্ধ করতে না পারলেও একেবারে কম নয়। বিজিবির নজরদারি পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। যার সফলতাও ইতিমধ্যে আসছে। সীমান্তের কিছু অংশে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতার না থাকায় পাচারকারীরা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে। পাচার রোধে সেখানে কাঁটাতার নির্মাণে বিএসএফের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে বলে বিজিবি কর্মকর্তা জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের পালানোর নিরাপদ রুট যেন মহেশপুর সীমান্ত 

সাবেক মন্ত্রী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আটক ৩২৬

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালানোর নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে একাধিক মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে প্রায় ২০০ সদস্য সক্রিয় রয়েছে। লাখ লাখ টাকা নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের পার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইতিমধ্যে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় বিজিবির হাতে হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা, রোহিঙ্গা নারী ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তাসহ ৩২৬ জন আটক হয়েছেন। আটক হয়েছেন ১৪ মানব পাচারকারী। তবে সীমান্তের মানুষরা বলছেন, মহেশপুর ৫৮ বিজিবি’র হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের থেকেও কয়েক গুণ বেশি মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর ও লড়াইঘাট এলাকা দিয়ে মানবপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশ পরগণার বাগদা থানা রয়েছে। আর বাংলাদেশের অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা। ভারতের সঙ্গে ঝিনাইদহের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ কিলোমিটার জুড়ে ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা থাকায় মানব পাচারকারীরা এই অংশ নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিজিবির টহল থাকার পরও স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেট নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে অপরাধীসহ নানা পেশার মানুষ ভারতে পাচার করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝিনাইদহের আইনজীবী অ্যাড জাকারিয়া মিলন জানান, বাংলাদেশিরা পাসপোর্টবিহীন কেউ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার সময় আটক হলে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইনে মামলা হয়। আর এই মামলার সাজা ৩ মাস কারাদণ্ড অথবা ৫০০ শত টাকা জরিমানা। ফলে আটক আসামিরা সহজেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। আইন ও শাস্তির কঠোরতা না থাকায় অবৈধ পথে ভারতে আসা-যাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আইনজীবী শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু জানান, ভারত বা অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা বিধান আছে। তাই এ দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। দুই আইনেই অপরাধীর সাজা ও জরিমানা কম এবং জামিনযোগ্য হওয়ায় ধরা পড়লেও আসামি জামিনে বেরিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ধরতে নিরুৎসাহিত হয়ে থাকেন। তাই আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

মহেশপুর খালিশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ মো. আজিজুস শহিদ জানান, সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মহেশপুরের সঙ্গে ভারতের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে তারকাঁটার বেড়া। আর বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। তিনি আরও বলেন, ‘পাচার শতভাগ বন্ধ করতে না পারলেও একেবারে কম নয়। বিজিবির নজরদারি পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। যার সফলতাও ইতিমধ্যে আসছে। সীমান্তের কিছু অংশে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতার না থাকায় পাচারকারীরা ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে। পাচার রোধে সেখানে কাঁটাতার নির্মাণে বিএসএফের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনাও হয়েছে বলে বিজিবি কর্মকর্তা জানান।