ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী স্বাস্থ্যকর্মী এখনো আটক হয়নি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে প্রকাশ্যে সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা

চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশের জেরে আহসান আলম নামের একজন সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভেতরেই তাঁকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিরা গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক আহসান আলমকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল দুপুরেই সাংবাদিক আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘নয়া শতাব্দী’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়াড়ের দক্ষিণপাড়ার সাগর আলীর ছেলে। রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং- এর মাধ্যমে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেলের সাথে আস্থা প্রকল্পের আয়া বৃষ্টির অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ’ শিরোনামে পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই দিন সকাল ১০টার দিকে আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চত্বরের একটি দোকাণ থেকে চা-পান করে সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় (আউটসোর্সিং) রাসেল একটি বাঁশ সঙ্গে এনে তার ও বৃষ্টির অনৈতিক বিষয় সংবাদপত্রে প্রকাশের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। এসময় আহসান আলম সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে পত্রিকার সম্পাদকের সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন। সেসময় রাসেল তার সঙ্গে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে আহসান আলমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে, সেখান থেকে চলে যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত সাংবাদিক আহসান আলম বলেন, ‘প্রতিদিনের ন্যায় আজ (গতকাল) সকালেও আমি চুয়াডাঙ্গা সদর  হাসপাতাল চত্বরের রাজুর চায়ের দোকানে চা খাওয়ার জন্য যায়। ঠিক সেসময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেল চায়ের দোকানের সামনে এসে আমাকে হুমকি প্রদান করেই আরএমও’র কক্ষে চলে যায়। পরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে এসে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাঁশ দিয়ে জনসম্মুখে মারধর করে। পরে হাসপাতালে থাকা পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’

আহত সাংবাদিক আহসান আলমের বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘তার শরীরের বিভিন্নস্থানে বাঁশ বা লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘আয়া বৃষ্টির জন্য ওয়ার্ডবয় রাসেল ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল। এ কারণে আয়া বৃষ্টিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে হওয়া ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এজন্য আমরা গুরুত্ব নিয়ে বিষয়টি দেখছি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল-আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচি বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপরে হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।’

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘অবশ্যই এটি নিন্দাযোগ্য অপরাধ। ঘটনার সাথে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী রাসেলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আহসান আলমকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাটি সকালেই জানতে পেরেছি। এটি অন্তন্ত দুঃখ জনক একটি ঘটনা। এ ঘটনায় দুপুরেই থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করতে চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’ এদিকে, প্রকাশ্যে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগরে কর্মরত সাংবাদিক এবং প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়ে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আজ সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা ইউনিট ও সম্পাদক পরিষদ যৌথ জরুরি সভা ডেকেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জোর প্রতিবাদ করেছেন ৭১টিভির জেলা প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক বিশিষ্ট ছড়াকার এমএ মামুন, দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধি হুসাইন মালিক, দৈনিক সময়ের সমীকরণের নিজস্ব প্রতিবেদক রুদ্র রাসেল প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী স্বাস্থ্যকর্মী এখনো আটক হয়নি!

আপলোড টাইম : ০৯:৫৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জানুয়ারী ২০২২

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে প্রকাশ্যে সাংবাদিক আহসান আলমের ওপর হামলা

চুয়াডাঙ্গায় সংবাদ প্রকাশের জেরে আহসান আলম নামের একজন সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভেতরেই তাঁকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এসময় স্থানীয় ব্যক্তিরা গুরুতর আহত অবস্থায় সাংবাদিক আহসান আলমকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল দুপুরেই সাংবাদিক আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘নয়া শতাব্দী’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের দৌলতদিয়াড়ের দক্ষিণপাড়ার সাগর আলীর ছেলে। রাসেল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং- এর মাধ্যমে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেলের সাথে আস্থা প্রকল্পের আয়া বৃষ্টির অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ’ শিরোনামে পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই দিন সকাল ১০টার দিকে আহসান আলম চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চত্বরের একটি দোকাণ থেকে চা-পান করে সেই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় (আউটসোর্সিং) রাসেল একটি বাঁশ সঙ্গে এনে তার ও বৃষ্টির অনৈতিক বিষয় সংবাদপত্রে প্রকাশের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। এসময় আহসান আলম সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে পত্রিকার সম্পাদকের সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন। সেসময় রাসেল তার সঙ্গে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে আহসান আলমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে, সেখান থেকে চলে যায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত সাংবাদিক আহসান আলম বলেন, ‘প্রতিদিনের ন্যায় আজ (গতকাল) সকালেও আমি চুয়াডাঙ্গা সদর  হাসপাতাল চত্বরের রাজুর চায়ের দোকানে চা খাওয়ার জন্য যায়। ঠিক সেসময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রাসেল চায়ের দোকানের সামনে এসে আমাকে হুমকি প্রদান করেই আরএমও’র কক্ষে চলে যায়। পরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে এসে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাঁশ দিয়ে জনসম্মুখে মারধর করে। পরে হাসপাতালে থাকা পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’

আহত সাংবাদিক আহসান আলমের বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘তার শরীরের বিভিন্নস্থানে বাঁশ বা লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফাতেহ আকরাম বলেন, ‘আয়া বৃষ্টির জন্য ওয়ার্ডবয় রাসেল ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়েছিল। এ কারণে আয়া বৃষ্টিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে হওয়া ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এজন্য আমরা গুরুত্ব নিয়ে বিষয়টি দেখছি। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল-আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচি বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপরে হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।’

বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘অবশ্যই এটি নিন্দাযোগ্য অপরাধ। ঘটনার সাথে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী রাসেলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আহসান আলমকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনাটি সকালেই জানতে পেরেছি। এটি অন্তন্ত দুঃখ জনক একটি ঘটনা। এ ঘটনায় দুপুরেই থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করতে চুয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ মাঠে কাজ করছে।’ এদিকে, প্রকাশ্যে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগরে কর্মরত সাংবাদিক এবং প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা জানিয়ে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আজ সোমবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা ইউনিট ও সম্পাদক পরিষদ যৌথ জরুরি সভা ডেকেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জোর প্রতিবাদ করেছেন ৭১টিভির জেলা প্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিক বিশিষ্ট ছড়াকার এমএ মামুন, দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধি হুসাইন মালিক, দৈনিক সময়ের সমীকরণের নিজস্ব প্রতিবেদক রুদ্র রাসেল প্রমুখ।