ইপেপার । আজ বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:
ভিজিডি কার্ড বণ্টনের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য সাবিয়া খাতুনকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য মাসুদ রানা শিপনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ওই সংরক্ষিত নারী সদস্য শিপনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদে গত রোববার ভিজিডি কার্ড বিভাজন সংক্রান্ত মিটিং চলছিল। সেখানে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের কার্ড কম দেওয়া হচ্ছিল। এর প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা শিপন সংরক্ষিত নারী সদস্যদের গালিগালি শুরু করেন। এসময় সাবিয়া খাতুন প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। পরে পারকুলা গ্রামের কয়েকজন যুবককে ডেকে এনে নারী সদস্যদের আরেক দফা গালমন্দ করেন। মারধরের হুমকিও দেন শিপন।
এ বিষয়ে কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য সাবিয়া খাতুন বলেন, ‘ওই দিন পরিষদে মিটিং চলছিল। মিটিংয়ের মধ্যে হঠাৎ শিপন মেম্বার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আমি নিষেধ করলে সে আমাকে মারার জন্য ছুটে আসেন। তখন চেয়ারম্যানসহ সকলেই শিপন মেম্বারকে আটকানোর চেষ্টা করলেও সে কাঠের চেয়ার উঠিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। পরে অন্যান্য মেম্বারসহ চেয়ারম্যান তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে সে বহিরাগত ৫—৬ জনকে পরিষদে ডেকে আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি—ধামকি দেয়। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফিরোজ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলনে, ‘শিপন মেম্বার ও সাবিয়া মেম্বারের মধ্যে কথা—কাটাকাটি শুরু হয়। এর একপর্যায়ে শিপন মেম্বার কাঠের চেয়ার উঠিয়ে মহিলা মেম্বারকে আঘাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে আঘাত ঠেকাতে গিয়ে আমার পায়ে লাগে। আসলেই ঘটনাটি লজ্জাজনক।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য শিপন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি মিটিংয়ের মধ্যে কোনো মহিলা মেম্বারকে মারার চেষ্টা বা গালাগালি করিনি। হয়ত মিটিংয়ের মধ্যে কথা—কাটাকাটি হয়েছে। যা প্রতিটি মিটিংয়ে হয়ে থাকে। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ওই মহিলা মেম্বার ও চেয়ারম্যান দুজন এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুল হক মিকা বলেন, ‘আমি নিজে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। মিটিং চলাকালে মেম্বার মাসুদ রানা শিপন মহিলা মেম্বারকে গালমন্দ করে ও ধাক্কাধাকি করে। একপর্যায়ে চেয়ার তুলে মহিলা মেম্বার সাবিয়াকে মারতে উদ্যত হয়। আমি নিজে শিপন মেম্বারকে আটকায়। তারা সকলেই মেম্বর। মহিলা মেম্বাররা তিনটি ওয়ার্ডের মেম্বার। তাদের গালমন্দ করা উচিত হয়নি। এতে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ঘটনাটি লজ্জাজনক।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় সাবিহা খাতুন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে এ ঘটনার সঠিক বিচার প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘পূর্বে শিপন মেম্বার আমার অনুপস্থিতিতে টাকার বিনিময়ে নাবালিকা মেয়ের জন্মনিবন্ধন সাবালিকা হিসেবে প্রদান করেছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবগত করেছি। তিনি তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।’
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সাবিয়া খাতুন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যকার হওয়ায় চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসার জন্য সময় নিয়েছেন। সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০১:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:
ভিজিডি কার্ড বণ্টনের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য সাবিয়া খাতুনকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য মাসুদ রানা শিপনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ওই সংরক্ষিত নারী সদস্য শিপনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদে গত রোববার ভিজিডি কার্ড বিভাজন সংক্রান্ত মিটিং চলছিল। সেখানে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের কার্ড কম দেওয়া হচ্ছিল। এর প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ রানা শিপন সংরক্ষিত নারী সদস্যদের গালিগালি শুরু করেন। এসময় সাবিয়া খাতুন প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয়। পরে পারকুলা গ্রামের কয়েকজন যুবককে ডেকে এনে নারী সদস্যদের আরেক দফা গালমন্দ করেন। মারধরের হুমকিও দেন শিপন।
এ বিষয়ে কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য সাবিয়া খাতুন বলেন, ‘ওই দিন পরিষদে মিটিং চলছিল। মিটিংয়ের মধ্যে হঠাৎ শিপন মেম্বার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। যা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। আমি নিষেধ করলে সে আমাকে মারার জন্য ছুটে আসেন। তখন চেয়ারম্যানসহ সকলেই শিপন মেম্বারকে আটকানোর চেষ্টা করলেও সে কাঠের চেয়ার উঠিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করে। পরে অন্যান্য মেম্বারসহ চেয়ারম্যান তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে সে বহিরাগত ৫—৬ জনকে পরিষদে ডেকে আমাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি—ধামকি দেয়। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফিরোজ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলনে, ‘শিপন মেম্বার ও সাবিয়া মেম্বারের মধ্যে কথা—কাটাকাটি শুরু হয়। এর একপর্যায়ে শিপন মেম্বার কাঠের চেয়ার উঠিয়ে মহিলা মেম্বারকে আঘাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে আঘাত ঠেকাতে গিয়ে আমার পায়ে লাগে। আসলেই ঘটনাটি লজ্জাজনক।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য শিপন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি মিটিংয়ের মধ্যে কোনো মহিলা মেম্বারকে মারার চেষ্টা বা গালাগালি করিনি। হয়ত মিটিংয়ের মধ্যে কথা—কাটাকাটি হয়েছে। যা প্রতিটি মিটিংয়ে হয়ে থাকে। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ওই মহিলা মেম্বার ও চেয়ারম্যান দুজন এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আশাদুল হক মিকা বলেন, ‘আমি নিজে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম। মিটিং চলাকালে মেম্বার মাসুদ রানা শিপন মহিলা মেম্বারকে গালমন্দ করে ও ধাক্কাধাকি করে। একপর্যায়ে চেয়ার তুলে মহিলা মেম্বার সাবিয়াকে মারতে উদ্যত হয়। আমি নিজে শিপন মেম্বারকে আটকায়। তারা সকলেই মেম্বর। মহিলা মেম্বাররা তিনটি ওয়ার্ডের মেম্বার। তাদের গালমন্দ করা উচিত হয়নি। এতে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ঘটনাটি লজ্জাজনক।’ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় সাবিহা খাতুন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে এ ঘটনার সঠিক বিচার প্রত্যাশা করি।’ তিনি বলেন, ‘পূর্বে শিপন মেম্বার আমার অনুপস্থিতিতে টাকার বিনিময়ে নাবালিকা মেয়ের জন্মনিবন্ধন সাবালিকা হিসেবে প্রদান করেছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে অবগত করেছি। তিনি তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।’
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সাবিয়া খাতুন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যকার হওয়ায় চেয়ারম্যান বিষয়টি মীমাংসার জন্য সময় নিয়েছেন। সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’