ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

মুজিবনগরসহ দর্শনা ও জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

ফেরদৌস ওয়াহিদ:

দর্শনা ও জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলাসহ দেশের সীমান্তবর্তী ৫০টি স্থানকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণায় চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী একসঙ্গে দুটি স্থলবন্দর পেল। দর্শনা ও জীবননগরে এই বন্দর দুটি চালু হলে এবার ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিতে পারবেন। এছাড়া সড়ক পথেও কমবে দেশের অন্য স্থলবন্দর থেকে রাজধানীর দূরত্ব। এছাড়া কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় তো বাড়বেই। আর এই দুটি স্থলবন্দর চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন বদলে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার দৃশ্যপট, তেমনি স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এখানে। যেটা এ জেলার বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক প্রতিনিয়ত আসে। সেগুলো খালাস করতে ৩ থেকে ১৮দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে, ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।

জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই জীবননগর দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। সেসময় একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান চালুর অপেক্ষায় থাকা এই বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করে গেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান ও তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সেই সময় এই ভারত-বাংলাদেশ সরকারের দুই উর্ধতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে এক অদৃশ্য কারণে সে উদ্যোগ থমকে যায়।

জীবননগর স্থলবন্দর সূত্র জানা যায়, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে আবারো এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনরায় শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। তবে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার এক প্রজ্ঞাপনে এই শুল্ক স্টেশনটি চালুর বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। এবার দেখার বিষয় কতদিনে তা বাস্তাবায়ন হয়।

দৌলতগঞ্জ সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক সেসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সব সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। তাছাড়া ভারতীয় অংশে জাতীয় মহাসড়ক থেকে সব স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব, তার থেকে অনেক কম দূরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারণে ভারতের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি ও পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।

অন্যদিকে, ২০০২ সালে ১২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনকে রাষ্ট্রপতির আদেশে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পথ দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজ করার লক্ষ্যে সেসময় স্থলবন্দর করার এই ঘোষণা দেয় সরকার।

দর্শনা ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন দপ্তর থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৮ ও ৯ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’ ১২তম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে ওয়াগেনে দর্শনা-গেদে রুটের মাধ্যমে মালামাল আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতের গেদে দিয়ে জনসাধারণ যাতায়াত করছে। সভায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতীয় অংশের ৮০০ মিটার রাস্তা খুবই সরু। রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে দর্শনার ২০০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়ে বলা হয়।

এদিকে, বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসে সেগুলো খালাস করতে ৩দিন থেকে ১৮দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে চাপ কমবে এবং আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দর্শনা স্থলবন্দর:

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) ঘোষণা করা হয়েছে। এ বন্দরের রুট হলো দর্শনা-গেদে রেলপথ ও সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভুসি, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, পোল্ট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন প্রকার ক্লে, গ্রানুলেটেড স্ল্যাগ, জিপসাম, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রন, ক্লিংকার, কোয়ার্টজ, ডাল, কাঁচা তুলা ও তুলার বেল। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সকল পণ্য এ বন্দর থেকে রপ্তানি করা যাবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত কেবল রেলপথে আমদানি-রপ্তানি করার কথা বলা হয়েছে।

জীবননগর দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর

একই প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দরের রুট হলো দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া রোড সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সকল পণ্য এ বন্দর থেকে রপ্তানি করা যাবে।

মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দর:

একই প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দরের রুট হলো স্বাধীনতা সড়ক (মেহেরপুর মুজিননগর-চাপড়া কৃষ্ণনগর সড়ক) সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- মাছ, সুতা, গুঁড়া দুধ, চিনি ও আলু (ঐঝ ঈড়ফব ০৭০১.৯০.১৯ ও ০৭০১.৯০.২৯) ব্যতীত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং ১৪/ডি/কাস/৭২, তারিখ: ২৯-০৪-৭২ এর টেবিলের পার্ট-ঠও এর অধীনে সুনির্দিষ্টকৃত ওজনের মালামাল এবং প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজ (চধংংবহমবৎং নধমমধমবং)।

রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে- এসআরও নম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

Customs Act,,৩৭-আইন/২০২২/৫৩/কাস্টমস। ১৯৬৯ (Act No. IV of 1969) এর section 9 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্তsection এর (ক) clause (ন) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিমবর্ণিত তফসিল-১ ও তফসিল-২ এর কলাম (১) এ উল্লিখিত ক্রমিকের বিপরীতে কলাম (২) এ উল্লিখিত স্থানসমূহকে এতদ্দ¦ারা স্থল কাস্টমস স্টেশন (Land Customs-Station) হিসাবে ঘোষণা করিল এবং (খ) clause (প) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, দফা (ক) এর অধীন ঘোষিত নিমবর্ণিত তফসিল-১ ও তফসিল-২ এর কলাম (১) এ উল্লিখিত ক্রমিক এর বিপরীতে কলাম (২) এ উল্লিখিত কাস্টমস স্টেশনসমূহের মাধ্যমে কলাম (৪) এ নির্দিষ্টকৃত পণ্যসমূহকে ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত নির্গমন অথবা ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত হইতে উক্ত কাস্টমস স্টেশনসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের উদ্দেশ্যে কলাম (৩) এ উল্লিখিত স্থলপথ বা অভ্যন্তরীণ জলপথকে এতদ্দ¦ারা রুট (route) হিসাবে ঘোষণা করিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মুজিবনগরসহ দর্শনা ও জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

আপলোড টাইম : ১১:১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

ফেরদৌস ওয়াহিদ:

দর্শনা ও জীবননগরের দৌলতগঞ্জকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই প্রজ্ঞাপনে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলাসহ দেশের সীমান্তবর্তী ৫০টি স্থানকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণায় চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী একসঙ্গে দুটি স্থলবন্দর পেল। দর্শনা ও জীবননগরে এই বন্দর দুটি চালু হলে এবার ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের আমদানি করা পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিতে পারবেন। এছাড়া সড়ক পথেও কমবে দেশের অন্য স্থলবন্দর থেকে রাজধানীর দূরত্ব। এছাড়া কোটি কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব আয় তো বাড়বেই। আর এই দুটি স্থলবন্দর চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন বদলে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার দৃশ্যপট, তেমনি স্থানীয় শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এখানে। যেটা এ জেলার বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক প্রতিনিয়ত আসে। সেগুলো খালাস করতে ৩ থেকে ১৮দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে, ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।

জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই জীবননগর দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছিল। সেসময় একই বছর ২৪ আগস্ট তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান চালুর অপেক্ষায় থাকা এই বন্দরের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করে গেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৪ জুন তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী মোহাম্মদ শাজাহান খান ও তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পংকজ শরন আবারো বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। সেই সময় এই ভারত-বাংলাদেশ সরকারের দুই উর্ধতন কর্তা দ্রুত সময়ে বন্দরটি চালুর ঘোষণা করলেও পরে এক অদৃশ্য কারণে সে উদ্যোগ থমকে যায়।

জীবননগর স্থলবন্দর সূত্র জানা যায়, ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে আবারো এটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনরায় শুল্ক স্টেশনটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্দরটিতে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ১১ জুন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শুল্ক স্টেশন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। তবে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবার এক প্রজ্ঞাপনে এই শুল্ক স্টেশনটি চালুর বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। এবার দেখার বিষয় কতদিনে তা বাস্তাবায়ন হয়।

দৌলতগঞ্জ সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক সেসময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত সব সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। বন্দরটি থেকে ভারতের জাতীয় সড়কের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার। ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার। তাছাড়া ভারতীয় অংশে জাতীয় মহাসড়ক থেকে সব স্থানে যাতায়াত করা সম্ভব। জাতীয় সড়ক থেকে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের যে দূরত্ব, তার থেকে অনেক কম দূরত্ব অর্থাৎ ২৫ কিলোমিটার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর। যার কারণে ভারতের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের চেয়ে দ্রুত সময়ে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি ও পরিবহন খরচ অনেকাংশে সাশ্রয়ী হবে।

অন্যদিকে, ২০০২ সালে ১২ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনকে রাষ্ট্রপতির আদেশে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ পথ দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজ করার লক্ষ্যে সেসময় স্থলবন্দর করার এই ঘোষণা দেয় সরকার।

দর্শনা ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন দপ্তর থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৮ ও ৯ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’ ১২তম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে ওয়াগেনে দর্শনা-গেদে রুটের মাধ্যমে মালামাল আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতের গেদে দিয়ে জনসাধারণ যাতায়াত করছে। সভায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতীয় অংশের ৮০০ মিটার রাস্তা খুবই সরু। রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে দর্শনার ২০০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়ে বলা হয়।

এদিকে, বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসে সেগুলো খালাস করতে ৩দিন থেকে ১৮দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এতে দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে চাপ কমবে এবং আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দর্শনা স্থলবন্দর:

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাকে স্থলবন্দর (স্থল কাস্টমস স্টেশন) ঘোষণা করা হয়েছে। এ বন্দরের রুট হলো দর্শনা-গেদে রেলপথ ও সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভুসি, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, পোল্ট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন প্রকার ক্লে, গ্রানুলেটেড স্ল্যাগ, জিপসাম, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রন, ক্লিংকার, কোয়ার্টজ, ডাল, কাঁচা তুলা ও তুলার বেল। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সকল পণ্য এ বন্দর থেকে রপ্তানি করা যাবে। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত কেবল রেলপথে আমদানি-রপ্তানি করার কথা বলা হয়েছে।

জীবননগর দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর

একই প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দরের রুট হলো দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া রোড সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (ঝঃড়হবং ধহফ নড়ঁষফবৎং), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে সকল পণ্য এ বন্দর থেকে রপ্তানি করা যাবে।

মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দর:

একই প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা স্থলবন্দরের রুট হলো স্বাধীনতা সড়ক (মেহেরপুর মুজিননগর-চাপড়া কৃষ্ণনগর সড়ক) সড়ক পথ। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা যাবে, সেগুলো হলো:- মাছ, সুতা, গুঁড়া দুধ, চিনি ও আলু (ঐঝ ঈড়ফব ০৭০১.৯০.১৯ ও ০৭০১.৯০.২৯) ব্যতীত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং ১৪/ডি/কাস/৭২, তারিখ: ২৯-০৪-৭২ এর টেবিলের পার্ট-ঠও এর অধীনে সুনির্দিষ্টকৃত ওজনের মালামাল এবং প্যাসেঞ্জার ব্যাগেজ (চধংংবহমবৎং নধমমধমবং)।

রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে- এসআরও নম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

Customs Act,,৩৭-আইন/২০২২/৫৩/কাস্টমস। ১৯৬৯ (Act No. IV of 1969) এর section 9 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্তsection এর (ক) clause (ন) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিমবর্ণিত তফসিল-১ ও তফসিল-২ এর কলাম (১) এ উল্লিখিত ক্রমিকের বিপরীতে কলাম (২) এ উল্লিখিত স্থানসমূহকে এতদ্দ¦ারা স্থল কাস্টমস স্টেশন (Land Customs-Station) হিসাবে ঘোষণা করিল এবং (খ) clause (প) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, দফা (ক) এর অধীন ঘোষিত নিমবর্ণিত তফসিল-১ ও তফসিল-২ এর কলাম (১) এ উল্লিখিত ক্রমিক এর বিপরীতে কলাম (২) এ উল্লিখিত কাস্টমস স্টেশনসমূহের মাধ্যমে কলাম (৪) এ নির্দিষ্টকৃত পণ্যসমূহকে ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত নির্গমন অথবা ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত হইতে উক্ত কাস্টমস স্টেশনসমূহের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের উদ্দেশ্যে কলাম (৩) এ উল্লিখিত স্থলপথ বা অভ্যন্তরীণ জলপথকে এতদ্দ¦ারা রুট (route) হিসাবে ঘোষণা করিল।