ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হলো দুর্গোৎসব

মন্দিরে মন্দিরে উৎসবের আমেজ, আজ মহাসপ্তমী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ধূপ-আগরবাতির গন্ধ মোহিত করে তুলেছে পূজার আঙিনা। বর্ণিল সাজসজ্জা, হইচই আর মহা ধুমধামের যেন শেষ নেই। গতকাল বুধবার ছিল মহাষষ্ঠী। পুরহিতদের মতে, এদিন সকালে বোধনের মাধ্যমে দেবী জেগে উঠেন। এর মধ্যে দিয়েই দুর্গাপূজা শুরু হয়। পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবের আজ মহাসপ্তমী।
শাস্ত্রমতে, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দ্বীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এসময় পূজারীরা মায়ের সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও পূজা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন মন্দিরে।

এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১০৪টি মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল সায়ংকালের বোধনের মধ্যদিয়ে প্রতিটি মন্দিরে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে গতকাল সকালে ষষ্টি পূজার আয়োজন করা হয়। দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাকদ কিংকর কুমার দে বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আর ৪টি উৎসবের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব একটি বৃহৎ উৎসব। সেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের আগমন ঘটে। তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, রাষ্ট্র সকলের’।

তিনি জানান, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। এবার দেবীর আগমন দোলায়, গমন ঘোটকে।
গতকাল পূজা ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও মহাষষ্ঠী বিহিত পূজা ও সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, আজ বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী বিহিত পুজো, দেবীর নব পত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। আগামীকাল শুক্রবার মহাষ্টমী, কুমারী ও সন্ধিপূজা, শনিবার মহানবমী ও রোববার বিজয়া দশমী বিহিত পূজার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গা উৎসবের।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও সর্বজনীন পূজা কমিটি সব মণ্ডপের জন্য ২২ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চ শব্দে মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয়সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান-বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাইয়ে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
দুর্গোৎসবে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার সব মন্দিরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের সরব উপস্তিতি দেখা যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়য়ে গঠিত টিম পূজামণ্ডপের নিরাপত্বায় দায়িত্ব পালন করছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হলো দুর্গোৎসব

মন্দিরে মন্দিরে উৎসবের আমেজ, আজ মহাসপ্তমী

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ধূপ-আগরবাতির গন্ধ মোহিত করে তুলেছে পূজার আঙিনা। বর্ণিল সাজসজ্জা, হইচই আর মহা ধুমধামের যেন শেষ নেই। গতকাল বুধবার ছিল মহাষষ্ঠী। পুরহিতদের মতে, এদিন সকালে বোধনের মাধ্যমে দেবী জেগে উঠেন। এর মধ্যে দিয়েই দুর্গাপূজা শুরু হয়। পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসবের আজ মহাসপ্তমী।
শাস্ত্রমতে, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দ্বীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এসময় পূজারীরা মায়ের সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও পূজা দেখতে ভিড় করেন বিভিন্ন মন্দিরে।

এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ১০৪টি মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল সায়ংকালের বোধনের মধ্যদিয়ে প্রতিটি মন্দিরে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে গতকাল সকালে ষষ্টি পূজার আয়োজন করা হয়। দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাকদ কিংকর কুমার দে বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আর ৪টি উৎসবের মতো হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব একটি বৃহৎ উৎসব। সেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের আগমন ঘটে। তিনি আরও বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার, রাষ্ট্র সকলের’।

তিনি জানান, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। এবার দেবীর আগমন দোলায়, গমন ঘোটকে।
গতকাল পূজা ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও মহাষষ্ঠী বিহিত পূজা ও সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, আজ বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমী বিহিত পুজো, দেবীর নব পত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা। আগামীকাল শুক্রবার মহাষ্টমী, কুমারী ও সন্ধিপূজা, শনিবার মহানবমী ও রোববার বিজয়া দশমী বিহিত পূজার মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গা উৎসবের।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও সর্বজনীন পূজা কমিটি সব মণ্ডপের জন্য ২২ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চ শব্দে মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি-পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয়সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান-বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাইয়ে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
দুর্গোৎসবে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার সব মন্দিরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের সরব উপস্তিতি দেখা যায়। নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়য়ে গঠিত টিম পূজামণ্ডপের নিরাপত্বায় দায়িত্ব পালন করছে।