ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

বৃদ্ধা রমেলার কপালে জোটেনি কোনো ভাতার কার্ড!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
‘আর যাব না মেম্বার-চেয়ারম্যানের বাড়িতে, শেষ বয়সে কপালে যা আছে তাই হবে, একটা কার্ডের জন্য আর কারো কথা শুনব না। পরের বাড়িতে ঝিঁ-এর কাজ করে খাব, তবু আমার কষ্টের কথা কাউকে বলব না।’ এমন নানা ধরনের ক্ষোভের কথা বলছিলেন জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী মাঠপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের স্ত্রী রমেলা খাতুন (৬২)।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধোপাখালী মাঠপাড়া গ্রামের মেহগনি বাগানের মধ্যে অবস্থিত ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করছেন হতদরিদ্র অসহায় স্বামী পরিত্যাক্তা নারী রমেলা খাতুন। কনকনে শীতে ঘরের মেঝেতে চটের বস্তা, আর শীত নিবারনের জন্য পাতলা শাড়ী গায়ে দিয়ে কোনো রকম দিন কাটান এই নারী। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও যে যার মতো থাকেন। নিজের বলতে কিছুই নেই তাঁর। যে জমিতে থাকেন, সেটাও ধোপাখালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির। নিজের জীবন বাঁচাতে তিন বেলা ভাতের জন্য গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঝিঁ-এর কাজ করেন তিনি। তারপরও কারও কাছে হাত পাতেননি এই নারী। তবে স্বামী পরিত্যাক্তা এই নারীর কপালে জোটেনি বয়স্ক, বিধবা ভাতা কিংবা চালের কার্ড। একাধিক বার মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও কোনো ফল হয়নি।
রমেলা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আর কত বয়স হলে আমার কপালে জুটবে একটি কার্ড? স্বামী মরেছে সেই কবে, তাও পাইনি কোনো কার্ড। আমার চেয়ে আর কে আছে গরীব, যার মাথা গোজার ঠাই নেই, পরের জমিতে মাথার ওপর কোনো রকম একটা ছাবড়া করে রাত কাটায়। গায়ে বল না থাকায় এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারছি না। তারপর লোকের বাড়িতে গেলে তারা আমাকে তিন বেলা খাবার খেতে দেয়। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমাকে যেন একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়। যাতে করে এই শেষ বয়সে একটু শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারি।’
ধোপাখালী প্রবীণ কমিটির সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন, ‘রমেলা খাতুন অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করে। তার স্বামী অনেকদিন আগে মারা গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিধবা ভাতার কার্ড পায়নি। আসলে এ কার্ডগুলো দিয়ে থাকে মেম্বার, চেয়ারম্যানরা। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে এবার আমরা প্রবীণ কমিটির পক্ষ থেকে রমেলা খাতুনের একটা বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বলেছি। আসা করি এবার হয়ে যাবে।’
এদিকে হতদরিদ্র নারীর মানবেতর জীবনযাপনের কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরুপ খাদ্য-সমাগ্রী তাঁর বাড়িতে পৌছে দেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান। জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. জাকির উদ্দিন মোড়লের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতার জন্য একটা বয়স নির্ধারণ করা আছে, সেই অনুযায়ী যদি রমেলা খাতুনের বয়স হয়, তাহলে ওই নারীকে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। এবং সে যাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ঘোষণা দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। আমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের থেকে রমেলা খাতুনের বিষয়ে জানার পর তার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবং সে যেন বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়, সে বিষয়ে আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বৃদ্ধা রমেলার কপালে জোটেনি কোনো ভাতার কার্ড!

আপলোড টাইম : ০৫:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩

জীবননগর অফিস:
‘আর যাব না মেম্বার-চেয়ারম্যানের বাড়িতে, শেষ বয়সে কপালে যা আছে তাই হবে, একটা কার্ডের জন্য আর কারো কথা শুনব না। পরের বাড়িতে ঝিঁ-এর কাজ করে খাব, তবু আমার কষ্টের কথা কাউকে বলব না।’ এমন নানা ধরনের ক্ষোভের কথা বলছিলেন জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী মাঠপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের স্ত্রী রমেলা খাতুন (৬২)।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধোপাখালী মাঠপাড়া গ্রামের মেহগনি বাগানের মধ্যে অবস্থিত ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ মানবেতর জীবনযাপন করছেন হতদরিদ্র অসহায় স্বামী পরিত্যাক্তা নারী রমেলা খাতুন। কনকনে শীতে ঘরের মেঝেতে চটের বস্তা, আর শীত নিবারনের জন্য পাতলা শাড়ী গায়ে দিয়ে কোনো রকম দিন কাটান এই নারী। দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও যে যার মতো থাকেন। নিজের বলতে কিছুই নেই তাঁর। যে জমিতে থাকেন, সেটাও ধোপাখালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির। নিজের জীবন বাঁচাতে তিন বেলা ভাতের জন্য গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঝিঁ-এর কাজ করেন তিনি। তারপরও কারও কাছে হাত পাতেননি এই নারী। তবে স্বামী পরিত্যাক্তা এই নারীর কপালে জোটেনি বয়স্ক, বিধবা ভাতা কিংবা চালের কার্ড। একাধিক বার মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গেলেও কোনো ফল হয়নি।
রমেলা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আর কত বয়স হলে আমার কপালে জুটবে একটি কার্ড? স্বামী মরেছে সেই কবে, তাও পাইনি কোনো কার্ড। আমার চেয়ে আর কে আছে গরীব, যার মাথা গোজার ঠাই নেই, পরের জমিতে মাথার ওপর কোনো রকম একটা ছাবড়া করে রাত কাটায়। গায়ে বল না থাকায় এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারছি না। তারপর লোকের বাড়িতে গেলে তারা আমাকে তিন বেলা খাবার খেতে দেয়। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমাকে যেন একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়। যাতে করে এই শেষ বয়সে একটু শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারি।’
ধোপাখালী প্রবীণ কমিটির সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন, ‘রমেলা খাতুন অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করে। তার স্বামী অনেকদিন আগে মারা গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিধবা ভাতার কার্ড পায়নি। আসলে এ কার্ডগুলো দিয়ে থাকে মেম্বার, চেয়ারম্যানরা। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। তবে এবার আমরা প্রবীণ কমিটির পক্ষ থেকে রমেলা খাতুনের একটা বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বলেছি। আসা করি এবার হয়ে যাবে।’
এদিকে হতদরিদ্র নারীর মানবেতর জীবনযাপনের কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরুপ খাদ্য-সমাগ্রী তাঁর বাড়িতে পৌছে দেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান। জীবননগর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. জাকির উদ্দিন মোড়লের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতার জন্য একটা বয়স নির্ধারণ করা আছে, সেই অনুযায়ী যদি রমেলা খাতুনের বয়স হয়, তাহলে ওই নারীকে আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। এবং সে যাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ঘোষণা দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না। আমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের থেকে রমেলা খাতুনের বিষয়ে জানার পর তার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। এবং সে যেন বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়, সে বিষয়ে আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।’