ইপেপার । আজ সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

বিবাহের দেনমোহর ১০১টি বই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

আব্দুল হাকিম: বিয়ের দেনমোহর হিসেবে টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার নয়, হবু স্ত্রী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা চেয়েছিলেন তার প্রিয় ১০১টি বই। অন্তরা ধরিয়ে দেয়া ১০১টি বই খুঁজে পেতে ভালই বেগ পেতে হয়েছিলো হবু বর রুহুল মিথুনের। তবে দেন মোহরের ১০১টি বই নিয়ে এসেই মোহরানা মিটিয়ে সুমাইয়া পারভীন অন্তরাকে বিবাহ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল মিথুন। গত ২৯ অক্টোবর পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। কনে সুমাইয়া পারভীন অন্তরার বইয়ের প্রতি রয়েছে ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী মোহরানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ১০১টি বই।
জানা যায়, দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুমাইয়া পারভীন অন্তরা ছোট। ভাই কাইছার হামিদ রনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মকর্ত। বাবা হাশেম আলী চুয়াডাঙ্গার একটি উপজেলার সমাজসেবা অফিসে কর্মরত আছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা। বর রুহুল মিথুন রুপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পারিবারিকভাবেই তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ১০১টি বই হস্তান্তর করে বরপক্ষ।
কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, বিয়ে পড়ানোর সময় জানতে পারি মোহরানা হিসেবে টাকা-স্বর্ণালঙ্কার নয়, ১০১টি বই দেওয়া হচ্ছে। অবাক হওয়ারই বিষয়। আগে কখনো শুনিনি।’ প্রথমে বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজনরা অবাক হয়ে গেলেও পরে প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নবদম্পতিকে। কনে সুমাইয়া পারভীন অন্তরা বলেন, ‘ইবিতে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেছি। তখন জানতে পারি শুধু টাকা নয়, অন্য কিছুতেও দেনমোহর হতে পারে। যেহেতু আমি ছোট থেকেই বই পড়তে ভালোবাসি, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার নিজের বিয়েতে ১০১টি বই দেনমোহর হিসেবে চাইব। এই বিষয় নিয়ে দেনমোহরের ওপরে একটা কোর্স ছিল।’

অন্তরা বলেন, ‘বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হলে আমি নিজেই হবু বরকে মুঠোফোনে ১০১টি বইয়ের মোহরানা তাঁর সামর্র্থ্যরে মধ্যে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। তিনিও বিষয়টি মেনে নেন এবং বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে বলেন। এসময় আমি আমার বাবাকে বিষয়টি জানায়। বাবা বিয়ের সময় একসঙ্গে এত বইয়ের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জানায়। তখন থেকেই বাবা আমাকেই বইয়ের নামের তালিকা করতে বলেন। সেই থেকেই শুরু করেছিলাম তালিকা। এর মধ্যে রয়েছে নবী-রাসুলদের জীবনী ও কিছু উপন্যাস।’
এ বিষয়ে বর রুহুল মিথুন বলেন, ‘বিয়ের আগে দুই পরিবারের আলোচনায় আমার শ্বশুর তাঁর মেয়ের ইচ্ছের কথা জানান এবং ১০১টি বইয়ের লিস্ট দেন। বইগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, তবে উপভোগ করেছি। বইপ্রেমী কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইতাম সময়ের পরিক্রমায় সেটি পূরণ হয়েছে।’

সুমাইয়া পারভীন অন্তরার বাবা হাসেম আলী বলেন, ‘কোনো এক দিন কথা প্রসঙ্গে মেয়ে আমাকে জানায়, তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে ১০১টি বই নিতে চাই। প্রথমে আমি বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছিলাম। যেহেতু একটি হাদিসে পড়েছিলাম, এক সাহাবীর মোহরানা দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না। তখন রাসূল (সা.) বলেছিলেন, তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন, আমার কিছু কিছু সুরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে তাকে ওই সুরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।’ এভাবে আমি আমার মেয়েকে আরো উৎসাহিত করি।’ তিনি আরও বলেন, মেয়ের আগে থেকেই অনেক বই ছিল। এখন বাড়িতেই ছোটখাট একটা লাইব্রেরি হয়ে গেছে। বিয়েতে ৬৫ জন বরযাত্রী এসেছিলেন। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী আমন্ত্রিত অতিথিরা ১০১ বই মোহরানা হওয়ায় অবাক হয়েছিলেন। পরে সবাই প্রসংশা করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও বড় বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি বলেন, ‘বিয়ের মোহরানা শুধু টাকা দিয়ে পরিশোধ করা যায় এমন নয়। তিন হাজার টাকার ঊর্ধ্বে কোনো মালামাল কিংবা বই বা বৈধ কিছু দিলে মোহরানা আদায় হয়। মোহরানা হিসেবে যদি বিয়ের সময় কনের শাড়ি, কসমেটিকস ও যাবতীয় সামগ্রী ধরা হয়, তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। বিয়েতে কনের পরিবার চাইলে দেনমোহর হিসেবে বই নিতে পারবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিবাহের দেনমোহর ১০১টি বই

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০২২

আব্দুল হাকিম: বিয়ের দেনমোহর হিসেবে টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার নয়, হবু স্ত্রী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা চেয়েছিলেন তার প্রিয় ১০১টি বই। অন্তরা ধরিয়ে দেয়া ১০১টি বই খুঁজে পেতে ভালই বেগ পেতে হয়েছিলো হবু বর রুহুল মিথুনের। তবে দেন মোহরের ১০১টি বই নিয়ে এসেই মোহরানা মিটিয়ে সুমাইয়া পারভীন অন্তরাকে বিবাহ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা রুহুল মিথুন। গত ২৯ অক্টোবর পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। কনে সুমাইয়া পারভীন অন্তরার বইয়ের প্রতি রয়েছে ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী মোহরানা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ১০১টি বই।
জানা যায়, দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুমাইয়া পারভীন অন্তরা ছোট। ভাই কাইছার হামিদ রনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মকর্ত। বাবা হাশেম আলী চুয়াডাঙ্গার একটি উপজেলার সমাজসেবা অফিসে কর্মরত আছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা। বর রুহুল মিথুন রুপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পারিবারিকভাবেই তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ১০১টি বই হস্তান্তর করে বরপক্ষ।
কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, বিয়ে পড়ানোর সময় জানতে পারি মোহরানা হিসেবে টাকা-স্বর্ণালঙ্কার নয়, ১০১টি বই দেওয়া হচ্ছে। অবাক হওয়ারই বিষয়। আগে কখনো শুনিনি।’ প্রথমে বরযাত্রী, আত্মীয়-স্বজনরা অবাক হয়ে গেলেও পরে প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নবদম্পতিকে। কনে সুমাইয়া পারভীন অন্তরা বলেন, ‘ইবিতে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেছি। তখন জানতে পারি শুধু টাকা নয়, অন্য কিছুতেও দেনমোহর হতে পারে। যেহেতু আমি ছোট থেকেই বই পড়তে ভালোবাসি, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার নিজের বিয়েতে ১০১টি বই দেনমোহর হিসেবে চাইব। এই বিষয় নিয়ে দেনমোহরের ওপরে একটা কোর্স ছিল।’

অন্তরা বলেন, ‘বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হলে আমি নিজেই হবু বরকে মুঠোফোনে ১০১টি বইয়ের মোহরানা তাঁর সামর্র্থ্যরে মধ্যে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। তিনিও বিষয়টি মেনে নেন এবং বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়াতে বলেন। এসময় আমি আমার বাবাকে বিষয়টি জানায়। বাবা বিয়ের সময় একসঙ্গে এত বইয়ের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে জানায়। তখন থেকেই বাবা আমাকেই বইয়ের নামের তালিকা করতে বলেন। সেই থেকেই শুরু করেছিলাম তালিকা। এর মধ্যে রয়েছে নবী-রাসুলদের জীবনী ও কিছু উপন্যাস।’
এ বিষয়ে বর রুহুল মিথুন বলেন, ‘বিয়ের আগে দুই পরিবারের আলোচনায় আমার শ্বশুর তাঁর মেয়ের ইচ্ছের কথা জানান এবং ১০১টি বইয়ের লিস্ট দেন। বইগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে, তবে উপভোগ করেছি। বইপ্রেমী কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইতাম সময়ের পরিক্রমায় সেটি পূরণ হয়েছে।’

সুমাইয়া পারভীন অন্তরার বাবা হাসেম আলী বলেন, ‘কোনো এক দিন কথা প্রসঙ্গে মেয়ে আমাকে জানায়, তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে ১০১টি বই নিতে চাই। প্রথমে আমি বিষয়টি নিয়ে অবাক হয়েছিলাম। যেহেতু একটি হাদিসে পড়েছিলাম, এক সাহাবীর মোহরানা দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না। তখন রাসূল (সা.) বলেছিলেন, তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন, আমার কিছু কিছু সুরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সা.) বললেন, তাহলে তাকে ওই সুরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।’ এভাবে আমি আমার মেয়েকে আরো উৎসাহিত করি।’ তিনি আরও বলেন, মেয়ের আগে থেকেই অনেক বই ছিল। এখন বাড়িতেই ছোটখাট একটা লাইব্রেরি হয়ে গেছে। বিয়েতে ৬৫ জন বরযাত্রী এসেছিলেন। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী আমন্ত্রিত অতিথিরা ১০১ বই মোহরানা হওয়ায় অবাক হয়েছিলেন। পরে সবাই প্রসংশা করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও বড় বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি বলেন, ‘বিয়ের মোহরানা শুধু টাকা দিয়ে পরিশোধ করা যায় এমন নয়। তিন হাজার টাকার ঊর্ধ্বে কোনো মালামাল কিংবা বই বা বৈধ কিছু দিলে মোহরানা আদায় হয়। মোহরানা হিসেবে যদি বিয়ের সময় কনের শাড়ি, কসমেটিকস ও যাবতীয় সামগ্রী ধরা হয়, তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। বিয়েতে কনের পরিবার চাইলে দেনমোহর হিসেবে বই নিতে পারবে।’