ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

বাজারে দরপতন, ক্রমেই কমছে পানের আবাদ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

অধিক খরচ আর ন্যায্য মূল্যের অভাবে দিনে দিনে পান চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার পানচাষিরা। প্রতি বছর লোকসান গুনতে হওয়ায় পান আবাদ করা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং লাভের অংকে লোকসান হওয়ায় পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। নতুন করে পানের বাজারে বড় দরপতনে আবারও পানের চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পানের আবাদ হয়ে থাকে। তুলানামূলক উঁচু জমিতে পান আবাদ ভালো হওয়ায় যুগ যুগ ধরে পানের আবাদ করে আসছেন এখানকার পানচাষিরা। পানকে জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল বলা হলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এক সময়ে এ পানের আবাদকে কেন্দ্র করেই জেলায় ঘুরেছে অর্থনীতির চাকা। ধীরে ধীরে সে চাকার গতিও কমে আসছে। পানের চাষ পরিবর্তন করে অনেকেই শুরু করেছেন ভুট্টা, ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ।

কৃষি বিভাগ বলছে, পানের তুলনায় অন্য ফসলে ভালো লাভ পাওয়ায় অন্যান্য আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেশি। ৫ বছর আগে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছিল। এ বছর সে আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩৩ হেক্টর জমিতে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো কারণে জেলায় কমছে পান বরজের সংখ্যা। ২০১৮ সালে ১৭৭৪ হেক্টর, ২০১৯ সালে ১৭৩০ হেক্টর, ২০২০ সালে ১৬৭০ হেক্টর, ২০২১ সালে ১৬০৯ হেক্টর ও ২০২২ সালে ১৬৩৩ হেক্টর। অথচ চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থকারী ফসল এই পান পাতা।

সম্প্রতি জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পানবাজারে পানের আড়ত গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। বাজারে ক্রেতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আগের মতো বাইরের বড় ক্রেতা তেমন একটা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পান কিনছেন। ছোট আকারের পান প্রতি পন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের পান প্রতি পন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গা বেশ উপযোগী। এ কারণে কয়েক যুগ ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ করা হয়। জেলার চার উপজেলাতের বিভিন্ন গ্রামে পান চাষ হয়। এই অঞ্চলে সাধারণত দুই জাতের মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়।

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে পানের বাজারেও ঘটছে দরপতন। প্রতি হাটেই কমছে পানের দাম। বাড়ছে পানচাষিদের হায়-হুতাশ। প্রতিটি পানের বরজে যে খরচ হয়, তা তুলতেই হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। আবার বড় দরপতনে কীভাবে সামাল দিবে, তা নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় পানচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

পানচাষি রবিন আলী বলেন, চলতি বছর এক একর জমিতে পানের আবাদ করেছি। আবাদও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানের দাম একেবারে কমে  গেছে। যে পান গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি প্রতি পন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেউ পান দাম কমে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পানচাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাদের পানের বরজে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু পানের মূল্য সেভাবে পাচ্ছি না। এসব কারণে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এবছরই আমি বরজ ভেঙে ফেলব।’ আরেক কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ‘পান চাষ করে প্রতি বছরই আমাদের লোকসান হচ্ছে। এভাবে টিকে থাকা কষ্ট সাধ্য।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘পানের তুলনায় অন্যান্য ফসলে ভালো লাভ পাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন অনেকে। তবে আমরা চাষিদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। আধুনিক পদ্ধতিতে পানের আবাদে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।’ জেলায় পানের সেই সুদিন ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির চাকা সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বাজারে দরপতন, ক্রমেই কমছে পানের আবাদ

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:

অধিক খরচ আর ন্যায্য মূল্যের অভাবে দিনে দিনে পান চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার পানচাষিরা। প্রতি বছর লোকসান গুনতে হওয়ায় পান আবাদ করা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং লাভের অংকে লোকসান হওয়ায় পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা। নতুন করে পানের বাজারে বড় দরপতনে আবারও পানের চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পানের আবাদ হয়ে থাকে। তুলানামূলক উঁচু জমিতে পান আবাদ ভালো হওয়ায় যুগ যুগ ধরে পানের আবাদ করে আসছেন এখানকার পানচাষিরা। পানকে জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল বলা হলেও তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এক সময়ে এ পানের আবাদকে কেন্দ্র করেই জেলায় ঘুরেছে অর্থনীতির চাকা। ধীরে ধীরে সে চাকার গতিও কমে আসছে। পানের চাষ পরিবর্তন করে অনেকেই শুরু করেছেন ভুট্টা, ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ।

কৃষি বিভাগ বলছে, পানের তুলনায় অন্য ফসলে ভালো লাভ পাওয়ায় অন্যান্য আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেশি। ৫ বছর আগে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার ৭৭৪ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছিল। এ বছর সে আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩৩ হেক্টর জমিতে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো কারণে জেলায় কমছে পান বরজের সংখ্যা। ২০১৮ সালে ১৭৭৪ হেক্টর, ২০১৯ সালে ১৭৩০ হেক্টর, ২০২০ সালে ১৬৭০ হেক্টর, ২০২১ সালে ১৬০৯ হেক্টর ও ২০২২ সালে ১৬৩৩ হেক্টর। অথচ চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থকারী ফসল এই পান পাতা।

সম্প্রতি জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পানবাজারে পানের আড়ত গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। বাজারে ক্রেতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আগের মতো বাইরের বড় ক্রেতা তেমন একটা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পান কিনছেন। ছোট আকারের পান প্রতি পন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বড় আকারের পান প্রতি পন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গা বেশ উপযোগী। এ কারণে কয়েক যুগ ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ করা হয়। জেলার চার উপজেলাতের বিভিন্ন গ্রামে পান চাষ হয়। এই অঞ্চলে সাধারণত দুই জাতের মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়।

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে পানের বাজারেও ঘটছে দরপতন। প্রতি হাটেই কমছে পানের দাম। বাড়ছে পানচাষিদের হায়-হুতাশ। প্রতিটি পানের বরজে যে খরচ হয়, তা তুলতেই হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। আবার বড় দরপতনে কীভাবে সামাল দিবে, তা নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় পানচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

পানচাষি রবিন আলী বলেন, চলতি বছর এক একর জমিতে পানের আবাদ করেছি। আবাদও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানের দাম একেবারে কমে  গেছে। যে পান গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি প্রতি পন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেউ পান দাম কমে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পানচাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাদের পানের বরজে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু পানের মূল্য সেভাবে পাচ্ছি না। এসব কারণে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এবছরই আমি বরজ ভেঙে ফেলব।’ আরেক কৃষক মজনু মিয়া বলেন, ‘পান চাষ করে প্রতি বছরই আমাদের লোকসান হচ্ছে। এভাবে টিকে থাকা কষ্ট সাধ্য।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘পানের তুলনায় অন্যান্য ফসলে ভালো লাভ পাওয়ায় সেদিকে ঝুঁকছেন অনেকে। তবে আমরা চাষিদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। আধুনিক পদ্ধতিতে পানের আবাদে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।’ জেলায় পানের সেই সুদিন ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির চাকা সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।