ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শুরু হলো ঈদযাত্রা, ট্রেনে চেপে গন্তব্যে যেতে কমলাপুরে যাত্রীদের ভিড়

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে তিন দফা টিকেট যাচাই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৬৭ বার পড়া হয়েছে

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে রেলপথের আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা। ফলে ভোর থেকেই কমলাপুরে ছিল ঘরমুখী মানুষের ভিড়। সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে প্রথম ট্রেন ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয় ঈদযাত্রা। এরপর কক্সবাজারগামী দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় ৬টা ১৫ মিনিটে। আর তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে। এরপর অধিকাংশ ট্রেনই সময় মেনে কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগেই তিনবার টিকেট যাচাই ও নিরাপত্তা তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ট্রেনে তেমন উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি।

এদিকে দুপুর দেড়টা নাগাদ কমলাপুর পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। পরে তিনি বাঁশের বেড়ার ভিতর দিয়ে টিকেট চেকিং করে যাত্রীদের ট্রেনের মূল প্লাটফর্মে যাওয়ার দৃশ্য দেখেন। এসময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ূন কবীর, রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, ডিআরএম সফিকুর রহমান, ডিসিও শাহ আলম কিরণ শিশির, স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, এবারের ঈদযাত্রার জন্য রেলওয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে ৮ জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন দেয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ কোচ বা বগি যুক্ত হয়েছে ট্রেন বহরে। যাত্রীরা যাতে ছাদে উঠতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে, এবার কেউ ছাদে চড়ে ট্রেন যাত্রা করতে পারবে না। তবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৫ শতাংশ স্টান্ডিং টিকেট দেয়া হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

সম্প্রতি রেলের পূর্বাঞ্চলে কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, শুধু রেলের নয়, সরকারি প্রতিটি কেনাকাটায় কিছু না কিছু দুর্নীতি দেখা যায়। রেলের চট্টগ্রামে কিছু দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এটা তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় রেলসচিব মো. হুমায়ূন কবীর জানান, সিডিউল বিপর্যয় এড়াতে এবার রেলের বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে অতিরিক্ত রেক রাখা হবে, কমলাপুরেও এ ধরনের রেক থাকবে। আশা করি সিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না। মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৬ হাজারের বেশি যাত্রী প্রতিদিন ট্রেনে করে বাড়ি যেতে পারবেন। গতবার ২৯ হাজারের কিছু বেশি টিকেট বিক্রি করা হলেও এবার প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৩৫ হাজার টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। আর সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ যাত্রী ট্রেনে করে গন্তব্যে যাত্রা করবেন।

গতকাল সরেজমিন কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারো ভোর থেকেই আসতে শুরু করেন যাত্রীরা। স্টেশনে ঢোকার মুখে বাঁশের ব্যারিকেড দেয়া, সেখানেই টিকেট দেখাতে হচ্ছে। তারপর আরো দুই দফা টিকেট চেকিং শেষে ট্রেন উঠতে পারছেন যাত্রীরা। কিন্তু গতকাল কোনো ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। সবাই নির্ধারিত আসনে বসেই ভ্রমণ করতে পারছেন। এতে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। তারা বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও ভোগান্তি এড়াতে আগেই চলে যাচ্ছেন। আর অনলাইন টিকেট যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফেরার যাত্রায় শামিল হতে পেরে যাত্রীদের চোখে-মুখে ছিল খুশির রেশ।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, প্ল্যাটফর্ম এলাকায় টিকেটবিহীন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে ভিড় কিছুটা কম। যারা আছে, সবাই যাত্রী। এতে করে প্ল্যাটফর্ম চত্বরের পরিবেশ ভালো আছে। তবে ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে যাত্রীদের ভিড় তত বাড়বে বলে জানান তিনি।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, আগে ঈদযাত্রায় অনেক ভিড় হতো। আজকে চার-পাঁচটি চেকপোস্ট পার করে আসতে হয়েছে। এতে অতিরিক্ত মানুষ নেই। শুধু ঈদযাত্রা না, সারা বছরই রেলের এ উদ্যোগ কার্যকর রাখার দাবি তাদের। ট্রেন যাত্রায় যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র‌্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনাররা (টিটিই) অবস্থান করছেন। তারা যাত্রীদের টিকেট চেক করছেন। এবারের ঈদে সারাদেশে প্রায় ৮-১০ লাখ যাত্রী ট্রেনে করে গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শুরু হলো ঈদযাত্রা, ট্রেনে চেপে গন্তব্যে যেতে কমলাপুরে যাত্রীদের ভিড়

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে তিন দফা টিকেট যাচাই

আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে রেলপথের আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা। ফলে ভোর থেকেই কমলাপুরে ছিল ঘরমুখী মানুষের ভিড়। সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে প্রথম ট্রেন ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয় ঈদযাত্রা। এরপর কক্সবাজারগামী দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় ৬টা ১৫ মিনিটে। আর তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে। এরপর অধিকাংশ ট্রেনই সময় মেনে কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগেই তিনবার টিকেট যাচাই ও নিরাপত্তা তল্লাশির মুখোমুখি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ট্রেনে তেমন উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি।

এদিকে দুপুর দেড়টা নাগাদ কমলাপুর পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। পরে তিনি বাঁশের বেড়ার ভিতর দিয়ে টিকেট চেকিং করে যাত্রীদের ট্রেনের মূল প্লাটফর্মে যাওয়ার দৃশ্য দেখেন। এসময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ূন কবীর, রেলের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী, পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, ডিআরএম সফিকুর রহমান, ডিসিও শাহ আলম কিরণ শিশির, স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, এবারের ঈদযাত্রার জন্য রেলওয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে ৮ জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন দেয়া হয়েছে। প্রায় ১০০ কোচ বা বগি যুক্ত হয়েছে ট্রেন বহরে। যাত্রীরা যাতে ছাদে উঠতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে, এবার কেউ ছাদে চড়ে ট্রেন যাত্রা করতে পারবে না। তবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৫ শতাংশ স্টান্ডিং টিকেট দেয়া হবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

সম্প্রতি রেলের পূর্বাঞ্চলে কেনাকাটায় দুর্নীতির বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, শুধু রেলের নয়, সরকারি প্রতিটি কেনাকাটায় কিছু না কিছু দুর্নীতি দেখা যায়। রেলের চট্টগ্রামে কিছু দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এটা তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় রেলসচিব মো. হুমায়ূন কবীর জানান, সিডিউল বিপর্যয় এড়াতে এবার রেলের বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে অতিরিক্ত রেক রাখা হবে, কমলাপুরেও এ ধরনের রেক থাকবে। আশা করি সিডিউল বিপর্যয় ঘটবে না। মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৬ হাজারের বেশি যাত্রী প্রতিদিন ট্রেনে করে বাড়ি যেতে পারবেন। গতবার ২৯ হাজারের কিছু বেশি টিকেট বিক্রি করা হলেও এবার প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৩৫ হাজার টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। আর সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ যাত্রী ট্রেনে করে গন্তব্যে যাত্রা করবেন।

গতকাল সরেজমিন কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারো ভোর থেকেই আসতে শুরু করেন যাত্রীরা। স্টেশনে ঢোকার মুখে বাঁশের ব্যারিকেড দেয়া, সেখানেই টিকেট দেখাতে হচ্ছে। তারপর আরো দুই দফা টিকেট চেকিং শেষে ট্রেন উঠতে পারছেন যাত্রীরা। কিন্তু গতকাল কোনো ট্রেনেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়নি। সবাই নির্ধারিত আসনে বসেই ভ্রমণ করতে পারছেন। এতে উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা। তারা বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও ভোগান্তি এড়াতে আগেই চলে যাচ্ছেন। আর অনলাইন টিকেট যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফেরার যাত্রায় শামিল হতে পেরে যাত্রীদের চোখে-মুখে ছিল খুশির রেশ।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, প্ল্যাটফর্ম এলাকায় টিকেটবিহীন কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে ভিড় কিছুটা কম। যারা আছে, সবাই যাত্রী। এতে করে প্ল্যাটফর্ম চত্বরের পরিবেশ ভালো আছে। তবে ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসবে যাত্রীদের ভিড় তত বাড়বে বলে জানান তিনি।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, আগে ঈদযাত্রায় অনেক ভিড় হতো। আজকে চার-পাঁচটি চেকপোস্ট পার করে আসতে হয়েছে। এতে অতিরিক্ত মানুষ নেই। শুধু ঈদযাত্রা না, সারা বছরই রেলের এ উদ্যোগ কার্যকর রাখার দাবি তাদের। ট্রেন যাত্রায় যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র‌্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনাররা (টিটিই) অবস্থান করছেন। তারা যাত্রীদের টিকেট চেক করছেন। এবারের ঈদে সারাদেশে প্রায় ৮-১০ লাখ যাত্রী ট্রেনে করে গন্তব্যে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।