ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

প্রথমে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার চায় বিএনপি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৫৩ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সহায়তা করতে সংস্কার কার্যক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশমালা তুলে ধরবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ৩১ দফা সংবলিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার’ আলোকে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার সুপারিশ পেশ করার পাশাপাশি দলের নীতিও গ্রহণ করবেন কমিটির সদস্যরা। জনমত যাচাইয়ের জন্য এ কমিটির সব প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
জুলাই বিপ্লবের পর সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাষ্ট্র মেরামত। রাষ্ট্রের প্রায় সব খাতেই সংস্কার আনার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে তারা নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যম এ পাঁচটি খাতকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির চাওয়া এ খাতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সংস্কার করুক। তথ্য বলছে, এ খাতগুলোতে সংস্কারের কথা বিএনপি আগেই ঘোষণা করেছিল।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে দলটি। গঠিত ছয়টি কমিটি হলো রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য সংস্কার। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার কমিটি গঠনে তৎপর দলটি। এসব কমিটির সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি- এসব কমিটি জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। বিএনপি যেসব সুপারিশ তুলে ধরবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ যাতে ক্ষমতায় না থাকেন সেই বিধান রেখে সংবিধান সংস্কার, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা, দেশকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অনিয়ম তদন্তে সুপারিশ করবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে সংস্কার কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে সেখানে আমাদের মতামত দেয়ার একটা বিষয় আছে। আমরা কেমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই তা ঠিক করার জন্য আমাদের দলে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেবে। সেখানে বিএনপিও তার মতামত দেবে। সে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা সংস্কার কার্যক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশমালা তুলে ধরব। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩১ দফা সংবলিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করে বিএনপি। ওই ঘোষণার মধ্যেই এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে অনেকটাই মিল থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে আপত্তি না তুলে বরং কীভাবে এবং কত দ্রুত সংস্কার করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বিএনপি মনে করছে, বিনা ভোটে চার দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে হলে এসব সেক্টরে সংস্কার আনতেই হবে। সেটি করা সম্ভব না হলে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট থেকে যাবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের এ উদ্যোগ ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। সংস্কার করার সময় বিএনপির কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে বিএনপি সর্বাত্মক সাড়া দেবে বলে জানা গেছে। গত বছর জুলাইয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে ফের জনগণের সামনে উপস্থাপন করে বিএনপি। দলটি তখন জানিয়েছিল, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওই সরকারই রাষ্ট্র সংস্কার করবে।
দফাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনাপূর্বক তা রহিত কিংবা সংশোধন করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। সব মত ও পথের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ‘নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা হবে। পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ’ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা হবে। ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন সংস্কার ও পুনঃগঠন করা হবে। আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট-১৯৭৪, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা হবে।
এদিকে, গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকায় বিদেশি বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এমন একটা সময়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।’
বিএনপিও মনে করে, আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। সে কথা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও বলেছে বিএনপি। গত ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে সময় দেয়া হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে কিছুটা সময় লাগবে। এ সময় রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। সেই সংস্কারের সঙ্গে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মূল স্পিরিটের হুবহু মিল রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু এ বিষয়ে সংস্কার করতে চাচ্ছে, তাই বিএনপি সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, সরকারের জন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করা সহজ হবে। সেদিকেই হাঁটা উচিত। কিন্তু তারা যদি সংবিধান সংশোধনের মতো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তাহলে জটিলতায় জড়িয়ে পড়বে। কারণ, এটা করতে হলে নির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রয়োজন হবে। জানতে চাইলে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারের মাধ্যমে সরকার দেশে দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিণ্টু বলেন, মানুষের মান উন্নয়ন করতে চাইলে সবচেয়ে বেশি দরকার জনগণের সরকার। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের দ্বারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা সংস্কার সুপারিশে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

প্রথমে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার চায় বিএনপি

আপলোড টাইম : ১০:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সার্বিকভাবে সহায়তা করতে সংস্কার কার্যক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশমালা তুলে ধরবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ৩১ দফা সংবলিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার’ আলোকে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার সুপারিশ পেশ করার পাশাপাশি দলের নীতিও গ্রহণ করবেন কমিটির সদস্যরা। জনমত যাচাইয়ের জন্য এ কমিটির সব প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
জুলাই বিপ্লবের পর সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাষ্ট্র মেরামত। রাষ্ট্রের প্রায় সব খাতেই সংস্কার আনার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে তারা নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যম এ পাঁচটি খাতকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির চাওয়া এ খাতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সংস্কার করুক। তথ্য বলছে, এ খাতগুলোতে সংস্কারের কথা বিএনপি আগেই ঘোষণা করেছিল।
এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ছয়টি সংস্কার কমিটি গঠন করেছে দলটি। গঠিত ছয়টি কমিটি হলো রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য সংস্কার। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে সংস্কার কমিটি গঠনে তৎপর দলটি। এসব কমিটির সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি- এসব কমিটি জনপ্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। বিএনপি যেসব সুপারিশ তুলে ধরবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা, পরপর দুই মেয়াদের বেশি কেউ যাতে ক্ষমতায় না থাকেন সেই বিধান রেখে সংবিধান সংস্কার, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা, দেশকে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অনিয়ম তদন্তে সুপারিশ করবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে সংস্কার কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে সেখানে আমাদের মতামত দেয়ার একটা বিষয় আছে। আমরা কেমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই তা ঠিক করার জন্য আমাদের দলে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেবে। সেখানে বিএনপিও তার মতামত দেবে। সে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা সংস্কার কার্যক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশমালা তুলে ধরব। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩১ দফা সংবলিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করে বিএনপি। ওই ঘোষণার মধ্যেই এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে অনেকটাই মিল থাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে আপত্তি না তুলে বরং কীভাবে এবং কত দ্রুত সংস্কার করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বিএনপি মনে করছে, বিনা ভোটে চার দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে হলে এসব সেক্টরে সংস্কার আনতেই হবে। সেটি করা সম্ভব না হলে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট থেকে যাবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের এ উদ্যোগ ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। সংস্কার করার সময় বিএনপির কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে বিএনপি সর্বাত্মক সাড়া দেবে বলে জানা গেছে। গত বছর জুলাইয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে ফের জনগণের সামনে উপস্থাপন করে বিএনপি। দলটি তখন জানিয়েছিল, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ওই সরকারই রাষ্ট্র সংস্কার করবে।
দফাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনাপূর্বক তা রহিত কিংবা সংশোধন করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। সব মত ও পথের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ‘নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা হবে। পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ’ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা হবে। ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন সংস্কার ও পুনঃগঠন করা হবে। আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৬, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট-১৯৭৪, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল করা হবে।
এদিকে, গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকায় বিদেশি বিভিন্ন মিশনের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এমন একটা সময়ে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যখন প্রায় সবক্ষেত্রেই চরম বিশৃঙ্খলা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।’
বিএনপিও মনে করে, আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। সে কথা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছেও বলেছে বিএনপি। গত ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়েছে নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে সময় দেয়া হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে কিছুটা সময় লাগবে। এ সময় রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। সেই সংস্কারের সঙ্গে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মূল স্পিরিটের হুবহু মিল রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু এ বিষয়ে সংস্কার করতে চাচ্ছে, তাই বিএনপি সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলেন, সরকারের জন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার করা সহজ হবে। সেদিকেই হাঁটা উচিত। কিন্তু তারা যদি সংবিধান সংশোধনের মতো বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তাহলে জটিলতায় জড়িয়ে পড়বে। কারণ, এটা করতে হলে নির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রয়োজন হবে। জানতে চাইলে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারের মাধ্যমে সরকার দেশে দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিণ্টু বলেন, মানুষের মান উন্নয়ন করতে চাইলে সবচেয়ে বেশি দরকার জনগণের সরকার। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের দ্বারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা সংস্কার সুপারিশে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।