ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই যত নাটক!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

আরিফ হাসান, হিজলগাড়ী: দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়ায় গাঁজা কেনার টাকা নিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে বিরোধের জেরে ছোট ভাইকে মারপিটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা ডাকাতির নাটক। কিন্তুশেষ রক্ষা হলো না অভিযুক্ত গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ারের। পুলিশের বিচক্ষণতায় বের হলো থলের বিড়াল। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত রোববার দিনগত রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া গ্রামের বসতিপাড়ার রবিউল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের বাড়িতে ১০-১২ জনের ডাকাত দল প্রবেশ করে তাদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করার অভিযোগ করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফুল কবীরসহ সঙ্গীয় ফোর্স এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাংবাদিকরাও। এসময় ডাকাতির অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের কথায় নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় পুলিশের কাছে। এসময় উপস্থিত লোকজনসহ অভিযোগ তোলা রবিউল ও তাঁর স্ত্রী নুর নাহারের কাছে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ-সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে অভিযোগকারীদের নানা অসঙ্গতিমূলক কথাবার্তায় বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা।

মূলত ফুলবাড়ী গ্রামের আনুর বড় ছেলে মোস্তফার কাছে কিছুদিন আগে গাঁজা কিনতে টাকা চায় রবিউল ইসলামের ছোট ছেলে এলাকার চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ার। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আনুর ছোট ছেলে হাসান বসুতিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী পাশ্ববর্তী ছয়ঘরিয়া গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে সজিবুরের দোকানের পিছনের পুকুরের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের কাজে আসে। বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে মশিয়ার তাকে জোরপূর্র্বক আটকিয়ে রেখে মারপিটের চেষ্টা করে। ছোট ভাই হাসানকে ধরে রাখতে পারলে বড় ভাই মোস্তফার কাছ থেকে টাকা আদায় করা সহজ হবে ভেবে হাসানের ওপর চড়াও হয় গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ার। হাসান তখন সজিবুবের পুকুরে কাজ করছিল, তাই সজিবুর মশিয়ারকে হাসানকে তার কাজ করা অবস্থায় কিছু বলতে ও ধরে নিয়ে যেতে নিষেধ করে। তখন সজিবুর ও মশিয়ারের মধ্য কথাকাটাকাটি শুরু হলে মশিয়ারের বড় ভাই হাবিবুর ও চাচাতো ভাই শুকুর ঘটনাস্থলে এসে সজিবুরকে বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা সজিবুরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এঘটনায় সজিবুরের পিতা মাসুদুর রহমান বাদি হয়ে দর্শনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

মূলত সেই অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গভীর রাতে ডাকাতির নাটক সাজায় মশিয়ার ও হাবিবুরের পিতা রবিউল ইসলাম ও তার মা নুর নাহার। এসময় তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেয়। ডাকাতি হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমানউল্লাহ, এসআই আহমেদ বিশ্বাস, এসআই তারিফসহ তিতুদহ ও হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের রাত্রীকালীন টহল দল। এসময় পুলিশ স্থানীয়সহ অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলেন। এসময় ডাকাতির বিষয়টি সাজানো নাটক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এদিকে, গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. মুন্না বিশ্বাস।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই যত নাটক!

আপলোড টাইম : ০৮:১৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আরিফ হাসান, হিজলগাড়ী: দর্শনা থানার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়ায় গাঁজা কেনার টাকা নিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে বিরোধের জেরে ছোট ভাইকে মারপিটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা ডাকাতির নাটক। কিন্তুশেষ রক্ষা হলো না অভিযুক্ত গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ারের। পুলিশের বিচক্ষণতায় বের হলো থলের বিড়াল। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত রোববার দিনগত রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন তিতুদহ ইউনিয়নের বড়শলুয়া গ্রামের বসতিপাড়ার রবিউল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের বাড়িতে ১০-১২ জনের ডাকাত দল প্রবেশ করে তাদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট করার অভিযোগ করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফুল কবীরসহ সঙ্গীয় ফোর্স এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাংবাদিকরাও। এসময় ডাকাতির অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের কথায় নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয় পুলিশের কাছে। এসময় উপস্থিত লোকজনসহ অভিযোগ তোলা রবিউল ও তাঁর স্ত্রী নুর নাহারের কাছে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ-সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে অভিযোগকারীদের নানা অসঙ্গতিমূলক কথাবার্তায় বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা।

মূলত ফুলবাড়ী গ্রামের আনুর বড় ছেলে মোস্তফার কাছে কিছুদিন আগে গাঁজা কিনতে টাকা চায় রবিউল ইসলামের ছোট ছেলে এলাকার চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ার। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আনুর ছোট ছেলে হাসান বসুতিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী পাশ্ববর্তী ছয়ঘরিয়া গ্রামের মাসুদুর রহমানের ছেলে সজিবুরের দোকানের পিছনের পুকুরের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের কাজে আসে। বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে মশিয়ার তাকে জোরপূর্র্বক আটকিয়ে রেখে মারপিটের চেষ্টা করে। ছোট ভাই হাসানকে ধরে রাখতে পারলে বড় ভাই মোস্তফার কাছ থেকে টাকা আদায় করা সহজ হবে ভেবে হাসানের ওপর চড়াও হয় গাঁজা ব্যবসায়ী মশিয়ার। হাসান তখন সজিবুবের পুকুরে কাজ করছিল, তাই সজিবুর মশিয়ারকে হাসানকে তার কাজ করা অবস্থায় কিছু বলতে ও ধরে নিয়ে যেতে নিষেধ করে। তখন সজিবুর ও মশিয়ারের মধ্য কথাকাটাকাটি শুরু হলে মশিয়ারের বড় ভাই হাবিবুর ও চাচাতো ভাই শুকুর ঘটনাস্থলে এসে সজিবুরকে বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা সজিবুরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এঘটনায় সজিবুরের পিতা মাসুদুর রহমান বাদি হয়ে দর্শনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

মূলত সেই অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গভীর রাতে ডাকাতির নাটক সাজায় মশিয়ার ও হাবিবুরের পিতা রবিউল ইসলাম ও তার মা নুর নাহার। এসময় তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দেয়। ডাকাতি হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমানউল্লাহ, এসআই আহমেদ বিশ্বাস, এসআই তারিফসহ তিতুদহ ও হিজলগাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের রাত্রীকালীন টহল দল। এসময় পুলিশ স্থানীয়সহ অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলেন। এসময় ডাকাতির বিষয়টি সাজানো নাটক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এদিকে, গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. মুন্না বিশ্বাস।