ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫, নারীদের ৩৭ বছর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছরের সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি। তবে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ছে। গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে বয়স বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যালোচনা কমিটির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে, তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর চাকরিপ্রত্যাশীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

বিকাল ৪টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে আরো তিন জন সদস্য বাড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়সসীমা যথাক্রম ৩৫ ও ৬৫ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিসট্র্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনটির আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিসট্রেটিভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইএএম)। এছাড়া ক্যাডার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সম্প্রতি সচিবালয়ে বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবির যৌক্তিকতা আছে। তিনি বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনকার বয়স যেটি আছে তা বাড়ানো উচিত। তবে কতটুকু করা যৌক্তিক তা সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে চিন্তা করা হবে। সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ হলেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, বিধিবদ্ধ সংস্থায় বিভিন্ন পদে নানারকম বয়সসীমা আছে। এসব পদ নন-ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পদ, চিকিৎসক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ২৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩১ জুন তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন বলছে, তখন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩২ বছর বয়সসীমা ছিল। আন্দোলনকারীরা জানান, ১৬২টি দেশে বয়সসীমা ৩০ বছরের বেশি। তারা করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত, সেশনজটে আক্রান্ত এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চাকরি পাননি। বিসিএসে দীর্ঘসূত্রতা, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং ২০১১ সালে সরকারি চাকরির অবসরের সময় বাড়লেও প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব

পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫, নারীদের ৩৭ বছর

আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছরের সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি। তবে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব করা হয়নি।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ছে। গঠিত কমিটি ইতিমধ্যে বয়স বাড়ানোর বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যালোচনা কমিটির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে, তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণের দাবিতে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর চাকরিপ্রত্যাশীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ওই বৈঠক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

বিকাল ৪টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গণমাধ্যমকে জানান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কমিটিতে আরো তিন জন সদস্য বাড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়সসীমা যথাক্রম ৩৫ ও ৬৫ বছর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিসট্র্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। সংগঠনটির আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে অনুরোধ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর আবেদন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিসট্রেটিভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইএএম)। এছাড়া ক্যাডার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সম্প্রতি সচিবালয়ে বলেছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবির যৌক্তিকতা আছে। তিনি বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখনকার বয়স যেটি আছে তা বাড়ানো উচিত। তবে কতটুকু করা যৌক্তিক তা সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে চিন্তা করা হবে। সাধারণভাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ হলেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, বিধিবদ্ধ সংস্থায় বিভিন্ন পদে নানারকম বয়সসীমা আছে। এসব পদ নন-ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পদ, চিকিৎসক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ২৭ বছর নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩১ জুন তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন বলছে, তখন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩২ বছর বয়সসীমা ছিল। আন্দোলনকারীরা জানান, ১৬২টি দেশে বয়সসীমা ৩০ বছরের বেশি। তারা করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত, সেশনজটে আক্রান্ত এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চাকরি পাননি। বিসিএসে দীর্ঘসূত্রতা, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং ২০১১ সালে সরকারি চাকরির অবসরের সময় বাড়লেও প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়ানোকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।