ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

দামুড়হুদায় কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরণের পণ্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

আওয়াল হোসেন: দামুড়হুদায় পরিত্যাক্ত কলাগাছের উৎপাদিত আঁশের সুতা দিয়ে নানা ধরণের পণ্য তৈরি হচ্ছে। কলাগাছের সুতাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। এতে করে গ্রামের কর্মহীন নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি পণ্য এখন শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। ইতঃমধ্যে বেশকিছু পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ফ্রান্সে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তিন ধরণের পাপোস, বাস্কেট ও দুই প্রকার ব্যাগ। চট্টগ্রামের একজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে এ পণ্য বিদেশে পাঠানো হবে জানা গেছে।

নতুন এই কলা শিল্পের উদ্যোক্তা দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের সারজেল মল্লিকের ছেলে শাহিন উদ্দীন। তিনি জানান, ২০১৯ নিজ হাতে মেশিন তৈরি করে তাঁর বাড়িতে বসিয়ে তিনি গ্রামের মাঠের পরিত্যক্ত কলাগাছ সংগ্রহ করে সুতা উৎপাদন কাজ শুরু করেন। তিনি সে সুতা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আসছিলেন। এর একপর্যায়ে তাঁর ওই ব্যবসায় ভাটা পড়লে তিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁর সহায়তায় গ্রামের নারীদের নিয়ে সমিতি গঠন করেন। যুব উন্নয়ন ও আইপিএম স্কুলের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এরপর উৎপাদিত সুতা দিয়ে নানা ধরণের শো-পিচ, বিলাসী শিল্প পণ্য দোলনা, দড়ি, পাপোস, সিকা, স্কুলব্যাগ, চাবির রিংসহ নানা ধরণের পণ্য তৈরি করতে থাকেন। একই সাথে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির সেড গড়ে তুলে সার উৎপাদন শুরু করেন। যা ইতঃমধ্যে বিক্রি শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ও দুটি সমিতির নারীদের নিয়ে সুতা দিয়ে প্রায় হাজার খানেক বিভিন্ন ধরণের শিল্পপণ্য তৈরি করে। সে সব পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়।

শাহিন আরও জানান, কৃষি অফিসার পাশে দাঁড়ানোর কারণে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরই মাঝে তার কিছু পণ্য চট্টগ্রামের এর এক বায়ারের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিকট স্যাম্পুল পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত পণ্যের মধ্যে পাপোস, টেবিলম্যাট, ওয়ালম্যাট ব্যাগ ও বাস্কেটের অর্ডার পায় নতুন উদ্যাক্তা চিটাগাং এর এক বায়ারের মাধ্যমে ফ্রান্সে পাঠানো হচ্ছে। এসকল পণ্য উৎপাদন শুরু করা হয়েছে যা চলতি মাসের শেষের দিকে পাঠানো হবে। এছাড়াও যশোরের একজন প্রবাসীর মাধ্যমে কিছু পণ্যর স্যাম্পুল আমেরিকায় পাঠানো হবে বলে ও তিনি শাহিন জানান।

এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, কলাগাছের বর্জ্য দিয়ে জৈবসার, পোল্ট্রি ফিড, মাছের খাবার, কীটনাশক ও সাবান-সোডা, তৈরির উপকরণ হিসেবে কলাগাছের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি আরও জানান, শাহিনের এই সুতা তৈরির কারখানা, কেঁচো কম্পোজ সার সেড ও শিল্পপণ্য তৈরির কাজে প্রায় শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বর্জ্য দিয়ে আরও কিছু উৎপাদন করে এর সম্প্রসারণ ঘঁটানো চিন্তা ভাবনা চলছে। সফল হলে এলাকার আরও মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদায় কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরণের পণ্য

আপলোড টাইম : ০৭:৩৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২

আওয়াল হোসেন: দামুড়হুদায় পরিত্যাক্ত কলাগাছের উৎপাদিত আঁশের সুতা দিয়ে নানা ধরণের পণ্য তৈরি হচ্ছে। কলাগাছের সুতাকে কেন্দ্র করে গ্রামে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। এতে করে গ্রামের কর্মহীন নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি পণ্য এখন শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। ইতঃমধ্যে বেশকিছু পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ও ফ্রান্সে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তিন ধরণের পাপোস, বাস্কেট ও দুই প্রকার ব্যাগ। চট্টগ্রামের একজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে এ পণ্য বিদেশে পাঠানো হবে জানা গেছে।

নতুন এই কলা শিল্পের উদ্যোক্তা দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের সারজেল মল্লিকের ছেলে শাহিন উদ্দীন। তিনি জানান, ২০১৯ নিজ হাতে মেশিন তৈরি করে তাঁর বাড়িতে বসিয়ে তিনি গ্রামের মাঠের পরিত্যক্ত কলাগাছ সংগ্রহ করে সুতা উৎপাদন কাজ শুরু করেন। তিনি সে সুতা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে আসছিলেন। এর একপর্যায়ে তাঁর ওই ব্যবসায় ভাটা পড়লে তিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁর সহায়তায় গ্রামের নারীদের নিয়ে সমিতি গঠন করেন। যুব উন্নয়ন ও আইপিএম স্কুলের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এরপর উৎপাদিত সুতা দিয়ে নানা ধরণের শো-পিচ, বিলাসী শিল্প পণ্য দোলনা, দড়ি, পাপোস, সিকা, স্কুলব্যাগ, চাবির রিংসহ নানা ধরণের পণ্য তৈরি করতে থাকেন। একই সাথে কেঁচো কম্পোজ সার তৈরির সেড গড়ে তুলে সার উৎপাদন শুরু করেন। যা ইতঃমধ্যে বিক্রি শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ও দুটি সমিতির নারীদের নিয়ে সুতা দিয়ে প্রায় হাজার খানেক বিভিন্ন ধরণের শিল্পপণ্য তৈরি করে। সে সব পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করা হয়।

শাহিন আরও জানান, কৃষি অফিসার পাশে দাঁড়ানোর কারণে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এরই মাঝে তার কিছু পণ্য চট্টগ্রামের এর এক বায়ারের মাধ্যমে ফ্রান্সে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিকট স্যাম্পুল পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত পণ্যের মধ্যে পাপোস, টেবিলম্যাট, ওয়ালম্যাট ব্যাগ ও বাস্কেটের অর্ডার পায় নতুন উদ্যাক্তা চিটাগাং এর এক বায়ারের মাধ্যমে ফ্রান্সে পাঠানো হচ্ছে। এসকল পণ্য উৎপাদন শুরু করা হয়েছে যা চলতি মাসের শেষের দিকে পাঠানো হবে। এছাড়াও যশোরের একজন প্রবাসীর মাধ্যমে কিছু পণ্যর স্যাম্পুল আমেরিকায় পাঠানো হবে বলে ও তিনি শাহিন জানান।

এবিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, কলাগাছের বর্জ্য দিয়ে জৈবসার, পোল্ট্রি ফিড, মাছের খাবার, কীটনাশক ও সাবান-সোডা, তৈরির উপকরণ হিসেবে কলাগাছের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগানো যেতে পারে। তিনি আরও জানান, শাহিনের এই সুতা তৈরির কারখানা, কেঁচো কম্পোজ সার সেড ও শিল্পপণ্য তৈরির কাজে প্রায় শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বর্জ্য দিয়ে আরও কিছু উৎপাদন করে এর সম্প্রসারণ ঘঁটানো চিন্তা ভাবনা চলছে। সফল হলে এলাকার আরও মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।