ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দামুড়হুদা উপজেলার ইটভাটাগুলোতে পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:১১:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

মোজাম্মেল শিশির:

দামুড়হুদা উপজেলার ইটভাটাগুলোতে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে সম্প্রতি ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে এতে প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে নির্দিষ্ট ১০ বাই আড়াই ইঞ্চি ইটের পরিমাপ থাকার কথা থাকলেও ইট মাপলে সেটা আর পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিকেরা নিয়ম-নীতি না মেনেই তৈরি করছেন ইট। এতে সাধারণ ভোক্তারা চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ঠকছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা সদর, লোকনাথপুর ও কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কাঠ পুড়াচ্ছে শেখ ব্রিকস, বেস্ট ব্রিকস ও রায়সা ব্রিকস নামের ইটভাটাগুলো। জনসম্মুখে রাস্তার পাশেই কৃষি জমিতে দিন-দুপুরে বনের কাঠ ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে এসব ইটভাটা। এছাড়া দুই কিলোমিটারের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে তিনটি ইটভাটা, যেটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

জানা যায়, একবার ইট (এক খোলা) পোড়াতে প্রায় চার হাজার মণ কাঠ পোড়াতে হয়। এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বন-জঙ্গল ও জনগণের জমি থেকেই। ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি হুমকির মুখেও পড়ছে পরিবেশ। প্রশাসনের নাকের ডগায় ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তা নিয়ে কারো যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই।

ইটভাটার মালিকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সর্ম্পক রেখেই ইটভাটা চালু রাখতে হচ্ছে। অবৈধ ইটভাটা চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তাঁরা বলেন, শুরুতে তাঁরা ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ভাটায় ইট পোড়াতেন। পরে সরকার ১২০ ফুট উঁচু চিমনি দিয়ে ইটভাটা তৈরির নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশিরভাগ ইটভাটা ১২০ ফুট উঁচু চিমনিতে রূপান্তরিত করা হয়।

ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইটভাটার মালিকরা কয়লার সংকটের কারণে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়লার চেয়ে কাঠের দাম কম হওয়ায় ইটভাটাগুলোতে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। লোকনাথপুর বেস্ট ব্রিকসে দেখা যায়, ইটের পরিমাপও সঠিক নেই।

এ ব্যাপারে বেস্ট ব্রিকসের ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘প্রথমে কাঠ দিয়ে ভাটায় আগুন ধরাতে হয়। পরে কয়লা দিয়ে ইট পুড়াবো।’ কিন্তু  দেখা যায়, ইটভাটা চলাকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।’

দামুড়হুদা উপজেলা বন কর্মকর্তা রাকিব উদ্দীন বলেন, ‘সরকারি নিয়মানুযায়ী ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে নিয়ম বহির্ভূত কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘ইটভাটা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। তাই পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরিতে কোনো বাধা নাই। তবে কাঠ পোড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। যদি কেউ এই নিয়ম না মেনে চলে, তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ইটের মাপের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদা উপজেলার ইটভাটাগুলোতে পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ!

আপলোড টাইম : ০৭:১১:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

মোজাম্মেল শিশির:

দামুড়হুদা উপজেলার ইটভাটাগুলোতে অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে সম্প্রতি ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে এতে প্রশাসনের নেই কোনো নজরদারি। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে নির্দিষ্ট ১০ বাই আড়াই ইঞ্চি ইটের পরিমাপ থাকার কথা থাকলেও ইট মাপলে সেটা আর পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিকেরা নিয়ম-নীতি না মেনেই তৈরি করছেন ইট। এতে সাধারণ ভোক্তারা চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ঠকছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা সদর, লোকনাথপুর ও কার্পাসডাঙ্গা এলাকায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কাঠ পুড়াচ্ছে শেখ ব্রিকস, বেস্ট ব্রিকস ও রায়সা ব্রিকস নামের ইটভাটাগুলো। জনসম্মুখে রাস্তার পাশেই কৃষি জমিতে দিন-দুপুরে বনের কাঠ ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে এসব ইটভাটা। এছাড়া দুই কিলোমিটারের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে তিনটি ইটভাটা, যেটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

জানা যায়, একবার ইট (এক খোলা) পোড়াতে প্রায় চার হাজার মণ কাঠ পোড়াতে হয়। এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বন-জঙ্গল ও জনগণের জমি থেকেই। ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি হুমকির মুখেও পড়ছে পরিবেশ। প্রশাসনের নাকের ডগায় ইটভাটাগুলো সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তা নিয়ে কারো যেন কোনো মাথাব্যথাই নেই।

ইটভাটার মালিকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সর্ম্পক রেখেই ইটভাটা চালু রাখতে হচ্ছে। অবৈধ ইটভাটা চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তাঁরা বলেন, শুরুতে তাঁরা ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ভাটায় ইট পোড়াতেন। পরে সরকার ১২০ ফুট উঁচু চিমনি দিয়ে ইটভাটা তৈরির নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশিরভাগ ইটভাটা ১২০ ফুট উঁচু চিমনিতে রূপান্তরিত করা হয়।

ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইটভাটার মালিকরা কয়লার সংকটের কারণে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়লার চেয়ে কাঠের দাম কম হওয়ায় ইটভাটাগুলোতে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। লোকনাথপুর বেস্ট ব্রিকসে দেখা যায়, ইটের পরিমাপও সঠিক নেই।

এ ব্যাপারে বেস্ট ব্রিকসের ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘প্রথমে কাঠ দিয়ে ভাটায় আগুন ধরাতে হয়। পরে কয়লা দিয়ে ইট পুড়াবো।’ কিন্তু  দেখা যায়, ইটভাটা চলাকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।’

দামুড়হুদা উপজেলা বন কর্মকর্তা রাকিব উদ্দীন বলেন, ‘সরকারি নিয়মানুযায়ী ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। তবে নিয়ম বহির্ভূত কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘ইটভাটা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। তাই পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরিতে কোনো বাধা নাই। তবে কাঠ পোড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। যদি কেউ এই নিয়ম না মেনে চলে, তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ইটের মাপের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে।