ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

দামুড়হুদায় সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:২২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন ভুক্তভোগী দলিল লেখকগণসহ সেবা প্রত্যাশীরা। সাব রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সাথে সাব রেজিস্ট্রার বদলি না হওয়া পর্যন্ত কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, এই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সাব রেজিস্ট্রারের অধীনে কোনো দলিল লেখক আর দলিল লিখবেন না।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে প্রায় দুই শতাধিক দলিল লেখক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। ১৪টি পয়েন্ট উল্লেখ করে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শ্বেতপত্র পাঠ করেন দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান বলেন, ‘দলিল লেখকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে আসছিলেন। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে আমি ওই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে নেমেছে।’

দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু বলেছেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে টাকা লেনদেন নিয়ে দলিল লেখকদের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের মনোমালিন্য চলছে। আমি উভয়পক্ষকে ডেকে একটি মীমংসার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দলিল লেখকরা আমার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি।’

দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান যোগদানের পরপরই একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দলিল লেখকদের ওপর স্ট্রিম রোলার চালিয়ে আসছিলেন। নিয়মের বাইরে জোর করেই অতিরিক্ত ফিস আদায় করছিলেন তিনি। প্রতিবাদ করতে গেলে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে অসহায় হয়ে পড়া দলিল লেখকরা মুখে কুলুপ এটে কোনো রকম কাজ করে আসছিলেন বিগত কয়েকমাস। অফিসের নৈশপ্রহরী মিলনকে দিয়ে আদায় করা হয় ফিসের টাকা। গত ৬ এপ্রিল বুধবার দলিল লেখক বুলু ম-ল দুটি হ্যাবা দলিল লেখার পর সাব রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন। দলিলে মন্তব্য কলামে ঘর উল্লেখ থাকায় ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান। একই দিন দলিল লেখক নাজিমের কাছ থেকে ২৪০ টাকা ফিসের স্থলে জোর করে ১৫ শ টাকা নেওয়া হয়। বিষয়টি দলিল লেখকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে পড়লে দলিল লেখকদের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদের মুখে ওই অতিরিক্ত ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সাব রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পর আমরা কলম বিরতির সিদ্ধান্ত নিই।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। ঘুষ আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে দামুড়হুদা সাব রেজিস্ট্রি অফিস। তার অধীনে কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উনি অফিসে আসেন ১১টার দিকে। এরপর ধীরগতিতে দু-চারটি দলিল করার পর দুপুরে খাবারের জন্য বিরতিতে চলে যান। দুপুরের খাবার সেরে ওনি ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নেন। এসময় তিনি মোবাইলে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে সময়ক্ষেপণ করেন। এরপর ৪টা বাজার পর বাড়তি টাকা না দিলে দলিলে সই করেন না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা অসহায় হয়ে ঘুষ দিয়ে দলিল করে তাদের বাড়ি যেতে হয়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দলিল লেখকরা। ওনি সন্ধ্যার পরও দলিল করেন। সন্ধ্যার পর যে সমস্ত দলিল হয় ওই সমস্ত দলিলে ২ হাজার, ৪ হাজার যার কাছে যেমন নিতে পারে নেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল দুই জন দলিল লেখকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে সাব রেজিস্ট্রারের অপসারণ চেয়ে কলম বিরতির ঘোষণা দেন দলিল লেখকগন। দুর্নীতির শ্বেতপত্র: (১) মন্তব্য কলামে ঘর লেখা থাকলে হেবা দলিলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৩ হাজার টাকা (২) মন্তব্য কলামে ঘর লেখা থাকলে কবোলা দলিলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৫ হাজার টাকা (৩) হেবা দলিলে পরচার ফটোকপি দিলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৪) দলিল মুলে হেবা দলিল করলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৪ হাজার টাকা। (৫) পিট দলিল না থাকলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৬) ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নামের প্রত্যয়নে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৭) মূল আইডি কার্ডের পরিবর্তে ফটোকপি দিলে দলিল প্রতি ৫’শ টাকা। (৮) ডিসিআর না থাকলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৯) একাধিক মৌজা উল্লেখ থাকলে দলিল প্রতি ৫’শ টাকা। (১০) বণ্টননামা দলিলে বিঘাপ্রতি ১ হাজার টাকা। (১১) কমিশন দলিলে ২০  থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। (১২) বিকেল ৩টার পর থেকে লেট ফিস বাবদ প্রতি দলিলে ৫ শ টাকা। (১৩) নৈশপ্রহরী দিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করা।  (১৪) দাখিল ফিস বাবদ দলিল প্রতি ৯১০ টাকা বাড়তি আদায় করা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদায় সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ

আপলোড টাইম : ০২:২২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন ভুক্তভোগী দলিল লেখকগণসহ সেবা প্রত্যাশীরা। সাব রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সাথে সাব রেজিস্ট্রার বদলি না হওয়া পর্যন্ত কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দ। সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, এই ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ সাব রেজিস্ট্রারের অধীনে কোনো দলিল লেখক আর দলিল লিখবেন না।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে প্রায় দুই শতাধিক দলিল লেখক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। ১৪টি পয়েন্ট উল্লেখ করে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। শ্বেতপত্র পাঠ করেন দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান বলেন, ‘দলিল লেখকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করে আসছিলেন। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে আমি ওই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে নেমেছে।’

দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু বলেছেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে টাকা লেনদেন নিয়ে দলিল লেখকদের সাথে সাব রেজিস্ট্রারের মনোমালিন্য চলছে। আমি উভয়পক্ষকে ডেকে একটি মীমংসার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দলিল লেখকরা আমার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি।’

দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান যোগদানের পরপরই একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দলিল লেখকদের ওপর স্ট্রিম রোলার চালিয়ে আসছিলেন। নিয়মের বাইরে জোর করেই অতিরিক্ত ফিস আদায় করছিলেন তিনি। প্রতিবাদ করতে গেলে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে অসহায় হয়ে পড়া দলিল লেখকরা মুখে কুলুপ এটে কোনো রকম কাজ করে আসছিলেন বিগত কয়েকমাস। অফিসের নৈশপ্রহরী মিলনকে দিয়ে আদায় করা হয় ফিসের টাকা। গত ৬ এপ্রিল বুধবার দলিল লেখক বুলু ম-ল দুটি হ্যাবা দলিল লেখার পর সাব রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন। দলিলে মন্তব্য কলামে ঘর উল্লেখ থাকায় ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব রেজিস্ট্রার নফিয বিন যামান। একই দিন দলিল লেখক নাজিমের কাছ থেকে ২৪০ টাকা ফিসের স্থলে জোর করে ১৫ শ টাকা নেওয়া হয়। বিষয়টি দলিল লেখকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে পড়লে দলিল লেখকদের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদের মুখে ওই অতিরিক্ত ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সাব রেজিস্ট্রার। ওই ঘটনার পর আমরা কলম বিরতির সিদ্ধান্ত নিই।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম জানান, বর্তমান সাব রেজিস্ট্রার একজন ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। ঘুষ আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে দামুড়হুদা সাব রেজিস্ট্রি অফিস। তার অধীনে কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উনি অফিসে আসেন ১১টার দিকে। এরপর ধীরগতিতে দু-চারটি দলিল করার পর দুপুরে খাবারের জন্য বিরতিতে চলে যান। দুপুরের খাবার সেরে ওনি ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নেন। এসময় তিনি মোবাইলে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে সময়ক্ষেপণ করেন। এরপর ৪টা বাজার পর বাড়তি টাকা না দিলে দলিলে সই করেন না। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা অসহায় হয়ে ঘুষ দিয়ে দলিল করে তাদের বাড়ি যেতে হয়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জমি ক্রেতা-বিক্রেতাসহ দলিল লেখকরা। ওনি সন্ধ্যার পরও দলিল করেন। সন্ধ্যার পর যে সমস্ত দলিল হয় ওই সমস্ত দলিলে ২ হাজার, ৪ হাজার যার কাছে যেমন নিতে পারে নেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল দুই জন দলিল লেখকের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়াকে কেন্দ্র করে সাব রেজিস্ট্রারের অপসারণ চেয়ে কলম বিরতির ঘোষণা দেন দলিল লেখকগন। দুর্নীতির শ্বেতপত্র: (১) মন্তব্য কলামে ঘর লেখা থাকলে হেবা দলিলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৩ হাজার টাকা (২) মন্তব্য কলামে ঘর লেখা থাকলে কবোলা দলিলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৫ হাজার টাকা (৩) হেবা দলিলে পরচার ফটোকপি দিলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৪) দলিল মুলে হেবা দলিল করলে ঘুষ হিসেবে দলিল প্রতি ৪ হাজার টাকা। (৫) পিট দলিল না থাকলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৬) ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নামের প্রত্যয়নে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৭) মূল আইডি কার্ডের পরিবর্তে ফটোকপি দিলে দলিল প্রতি ৫’শ টাকা। (৮) ডিসিআর না থাকলে দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা। (৯) একাধিক মৌজা উল্লেখ থাকলে দলিল প্রতি ৫’শ টাকা। (১০) বণ্টননামা দলিলে বিঘাপ্রতি ১ হাজার টাকা। (১১) কমিশন দলিলে ২০  থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। (১২) বিকেল ৩টার পর থেকে লেট ফিস বাবদ প্রতি দলিলে ৫ শ টাকা। (১৩) নৈশপ্রহরী দিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করা।  (১৪) দাখিল ফিস বাবদ দলিল প্রতি ৯১০ টাকা বাড়তি আদায় করা।